গাজা থেকে পাঠানো ভিডিওতে ইসরাইলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সাংবাদিক রামি রায়ানের নিহত হওয়ার প্রমাণ

[সতর্কীকরন বিজ্ঞপ্তিঃ হৃদয়বিদারক দৃশ্য]

একটি গ্রাফিক্স ভিডিওতে সাংবাদিক রামি রায়ানকে গাজায় নিহত হতে দেখা গেছে। ভিডিওটিতে একটি এ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধার কর্মীদের উপর হামলা চালাতেও দেখা যায়। ইসরায়েলী বিমান হামলার এই হৃদয়বিদারক ভিডিওটি অনলাইনে ব্যাপক ছড়িয়ে পড়েছে। সতর্কীকরন বিজ্ঞপ্তিঃ ৬ মিনিট দীর্ঘ ভিডিওটি বেশ জীবন্ত। দর্শকদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে উপদেশ দেয়া হল।

আবু শার ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করেছেন। এটির দৃশ্যে জরুরী ভিত্তিতে দুইটি এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেখা যায়। সেখানে রামি রায়ানকে উদ্ভূত পরিস্থিতির খবর সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। ভিডিওটি শুরু হওয়ার পনের সেকেন্ড পর প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি চালাতে দেখা যায়। এটি এ্যাম্বুলেন্স দুটিকে আঘাত করে। এর চৌদ্দ সেকেন্ড পর দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি চালান হয়।

এরপর কয়েক সেকেন্ড ধরে সবকিছু ধোয়াচ্ছন্ন। এ অবস্থায় অধিবাসীরা “ইয়া আল্লাহু” (হে সৃষ্টিকর্তা) বলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছেন। এর পরপরেই মরিয়া হয়ে ওঠা কান্না ও “আল্লাহু আকবার” (সৃষ্টিকর্তা মহান) এবং “লা ইলাহা ইল্লালাহু” রব শোনা যায়। 

ভিডিওটির ৪০ সেকেন্ডে ঘটতে দেখা যাবে তৃতীয় হামলা। ৫৫ সেকেন্ডের মাথায় চতুর্থ হামলা। ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডে পঞ্চম হামলা। আলোকচিত্রী এ সময় উঠে দাঁড়িয়েছেন এবং কয়েক ডজন লোককে আমরা মাটিতে পরে থাকতে দেখেছি। সেখানে মাটিতে পরে থাকা প্রায় সবাইকে দেখে মনে হবে তারা আহত। আহত লোকগুলোকে আশ্রয়ের খোঁজে দেয়ালের দিকে এগিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড সময়ে ষষ্ঠ হামলাটি চালান হয়। ১ সেকেন্ড ৩২ সেকেন্ডে সপ্তম হামলাটি এবং ১ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মাথায় চলে অষ্টম হামলাটি। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের মাথায় নবম হামলাটি চলে। দুই মিনিটের মাথায় আলোকচিত্রীকে আবার নড়ে উঠতে দেখা যায় এবং তাঁর বাম দিকে থাকা আহত লোকগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। ২ মিনিট ৭ সেকেন্ডে ঘটবে দশম হামলাটি। আলোকচিত্রীকে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের সময় “ইয়া আল্লাহু, ইয়া মোহাম্মাদ” বলে চিৎকার করতে থাকা আরেকজন অচেতন অথবা মৃত লোকের ছবি তুলতে দেখা যায়। ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে তিনি আরও একদল আহত লোকের ছবি তোলেন। ৩ মিনিটের সময় খুঁড়িয়ে হাঁটতে থাকা একজন বৃদ্ধকে বলতে শোনা যায়, “আমি পারবো না, আমি আর পারবো না”।

৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে রামি রায়ানকে আমরা রক্তের স্রোতের উপর পড়ে থাকতে দেখলাম। তিনি মৃত। একজন লোক আমাদের রামি রায়ানের প্রেস ইন্সিগ্নিয়া (চিহ্ন) দেখিয়ে বলেন, “দেখ, দেখ একজন সাংবাদিক, দেখ”। এরপর লোকটি খুব ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, “জাতিসংঘকে দেখান! বিশ্বকে দেখান! রেড ক্রসকে দেখান! আরব বিশ্বের বিশ্বাসঘাতকদেরকে দেখান! তারা সবাই বিশ্বাস ঘাতক!”  

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বন্ধ হয়েছে এবং আতঙ্ক দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা শুনলাম তাঁদের মৃত্যুতে জনগণ শোক প্রকাশ করছে। ৪ মিনিট ২০ সেকেন্ড পর থেকে শেষ পর্যন্ত আলোকচিত্রী ইসরায়েলী হামলার ভয়াবহতার ছবি ভিডিও করেছেন।  

A photo of journalist Ramy Ryan, from Susan's Facebook page.

সাংবাদিক রামি রায়ানের ছবি, সুজান জেবি মুস্তাফার ফেসবুক পাতা থেকে সংগৃহীত।  

স্থানীয় সক্রিয় কর্মীরা ভিডিওটি চারপাশে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছেন। ওকুপাই ওয়াল স্ট্রিটের গ্লোবাল রেভোলুশন টুইটার চ্যানেল ভিডিওটি সংগ্রহ করেছেঃ 

শিরোনামঃ #গাজাতে আজ সাংবাদিক রামি রায়ানকে ইসরাইলী বাহিনী কর্তৃক গোপনে হত্যার ভিডিও  

ইহুদি আমেরিকান লেখক নাওমি উলফ তার অনুগামীদের কাছে গাজায় হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার ধিক্কার প্রকাশ করে নিম্নলিখিত স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেনঃ 

এবং কয়েক মুহুর্তের আগে, সে উইলফ্রেড ওয়েনের লিখা এই কবিতাটি পোস্ট করেছেন:

 

গত ৩০ জুন তারিখে গাজায় ১৩১ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে। এই পোস্ট লেখার সময়, গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩৬১ জনে, যাদের মধ্যে ৩১৫ জন শিশু। ইসরাইল গত ৮ জুলাই তারিখ থেকে ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় স্ট্রিপে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে আসছে, যার ফলে ৬,৭৮০ জনেরও অধিক মানুষ আহত হয়েছে। স্কুল, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র এবং শরণার্থী শিবিরে ইসরাইল বোমাবর্ষণ করেছে। গাজায় নিহত চার জনের মধ্যে তিন জনই বেসামরিক নাগরিক। ২৮ জুলাই তারিখে ইসরাইল গাজার একমাত্র পাওয়ায় প্ল্যান্টটি আক্রমণ করে, যার ফলে ১.৮ মিলিয়ন মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ স্ট্রিপটি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।   

গত ছয় বছরের মধ্যে গাজায় এটি ইসরাইলের তৃতীয় সামরিক হামলা। ইসরায়েল গাজা এবং পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনি অঞ্চলে ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, তাই অধিকাংশ বিশ্ববাসী এবং জাতিসংঘ স্থানটি ইজরায়েল দ্বারা “দখল” বলে বিবেচনা করে।

আমাদের বিশেষ কাভারেজ অনুসরণ করুন: #গাজা:“ইসরায়েলের নৃশংস হামলায় বেসামরিক মৃত্যুর পাহাড়”

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .