বাংলাদেশের রাজধানীর ঐতিহাসিক পুরানো ঢাকার একটি সাধারণ গলি এখন ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৪ উদযাপনের জন্য জীবন্ত রঙ্গ ময় দেয়ালচিত্রে পরিণত হয়েছে।
২৪ ঘন্টার কম সময়ে প্রায় ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবী রাস্তাটির এই পরিবর্তন সাধন করেন। এই বিশ্বকাপ গোল-ই উদ্যোগের আয়োজন করে তরুণদের সংস্থা ওয়ান ডিগ্রী ইনিশিয়েটিভ আর বিজ্ঞাপন সংস্থা জানালা বাংলাদেশ। উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বকাপের উন্মাদনা ছড়িয়ে দেয়া। গোল-ই অনেকটা গলির মত শোনায়, যা পুরানো ঢাকার সাধারণ বৈশিষ্ট্য।
২০১৪ এর বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি, কিন্তু দেশের ফুটবল প্রেমিকরা বিশ্বকাপ জ্বরে ভুগছে। অনেকেই হয় ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছেন।
বিশ্বকাপ গোল-ই এই প্রচেষ্টা একটি ইউটিউব ভিডিওতে তুলে ধরেছে যার মধ্যে একটা ফ্ল্যাশ মব নাচও আছেঃ
প্রোজেক্টের ফেসবুকের পাতায় এই দেয়ালচিত্র তৈরির বেশ কিছু ছবিও আছেঃ
গ্লোবাল ভয়েসেস কথা বলেছে শাভানাজ রশিদ দিয়ার সাথে যিনি এটার একজন আয়োজক, ব্লগার, লেখক, চিত্রগ্রাহক আর তরুণ কর্মীঃ
গ্লোবাল ভয়েসেস (জিভি): বিশ্বকাপ গোল-ই কিসের দ্বারা অনুপ্রাণিত?
শাভানাজ রশিদ দিয়া (এসআরডি): সমগ্র বিশ্ব ফুটবলের বিশ্বকাপ বিভিন্নভাবে উদযাপন করছে। বিশ্বকাপের সময়ে বাসার ছাদে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার পতাকা দেখে আমরা বড় হয়েছি, আর কে চ্যাম্পিয়ন হবার যোগ্য তা নিয়ে ঝগড়া শুনেছি। কিন্তু অন্য কিছু হোক না কেন? বিশ্বের বিভিন্ন শহরের সুন্দর দেয়ালচিত্রের চল আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছে পুরানো ঢাকার একটা গলিকে রাঙ্গাতে।
আমরা আরো চেয়েছিলাম যে এই রাস্তা যাতে পর্যটকদের একটা গন্তব্য হয়, যাতে ঢাকার উৎসবমুখর চরিত্রের সাথে মেলে। বিশ্বের অন্যতম বাড়ন্ত মেগাশহর হিসাবে এর যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে পর্যটকদের আকর্ষন করার। আমাদেরকে প্রশংসা করা হয় বিশ্বের সব থেকে সুখী আর অতিথি পরায়ণ জাতি হিসাবে, তাহলে কেন না আমাদের রাস্তাও একই রকম আকর্ষনীয় করে তুলি?
আমরা পর্যটনের ধারনা পাল্টাতে চাই আর মানুষকে বোঝাতে চাই যে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক স্থানেই এটা সীমাবদ্ধ না, বরং সাধারণ মানুষও এটা তৈরি করতে পারে। বিশ্বকাপ গোল-ই এর একটা গর্বের নিদর্শন।
জিভিঃ পুরানো ঢাকার এই গলিকে কেন বেছে নেয়া হল?
এসআরডিঃ এই পুরানো ঢাকার গলি আমরা বেছে নিয়েছি কারন এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশের সামাজিক সংস্কৃতিকে প্রতিধ্বনিত করে। সবাই সবাইকে চেনে, তরূণরা নিজেদের আলাদা পরিবার থাকা সত্ত্বেও বড়দের মাথা নামিয়ে সম্মান জানায়, আর বাচ্চারা পাড়ার সবার বাচ্চা হিসাবে বড় হয়।
আমরা যখন এই ধারনা তুলে ধরি তখন কলতা পাড়ার বাসিন্দারা এটা সব থেকে ভালোভাবে গ্রহন করে আগ্রহ সহকারে এতে অংশগ্রহণ করে।
পুরানো ঢাকার রাস্তার প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্যও আছে, এর জন্য এখানে করা ছিল বেশী যুক্তিসংগত যেহেতু বিশ্বকাপ গোল-ই একটা চিত্র কলার বিষয়ও বটে।
জিভিঃ বাংলাদেশের অন্যান্য কম প্রসিদ্ধ গলিতে ফুটবলের এই উৎসব কি করে ছড়ানো যায়?
এসআরডিঃ এটা যে কেউ যেকোন স্থানে করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক গ্রামে পাড়া আর স্থানীয় বাজার আছে যেখানের মানুষ তাদের বাড়ি আর দোকান তাদের সমর্থিত ফুটবল দলের জন্য দেয়ালে রঙ করে।
তাই আপনি যদি আমাকে নির্দিষ্ট কোন রাস্তার কথা জিঞ্জাসা করেন, আমি বলব যে বাংলাদেশের প্রতিটি রাস্তা বিশ্বকাপ গোল-ই এর একটা ছোট কিন্তু একইভাবে অনুপ্রাণিত আর একাত্ম একটা অংশ। আসলে এই গোল-ই বাংলাদেশের লাখ লাখ ফুটবল প্রেমী দ্বারা অনুপ্রাণিত যারা তাদের ভালোবাসা দেখাতে অনেক কিছু করে থাকেন।
অনুগ্রহ করে এই ভিডিওটি শেয়ার করেন যাতে আমরা যদিও সব কিছু রঙ না করতে পারি অন্য কেউ অনুপ্রাণিত হবে নিজে এটা করার জন্য।