এই গবেষণা ভারতের ধর্ষণ সমস্যা পরীক্ষা করার চেষ্টা করেছে। ফলাফল আপনাকে বিস্মিত করতে পারে।

ঘটনাটি ভারতের। একটি মেয়ে এক সাদা ভ্যান থেকে সাহায্যের জন্য নিদারুণভাবে আর্তনাদ করতে থাকে, যখন সে সম্ভবতঃ ধর্ষিত হচ্ছে, কিন্তু অনেকে নির্বাকভাবে পাশ দিয়ে চলে যায়, মেয়েটির আর্তনাদ উপেক্ষা করে। কয়েক জন হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন।

সৌভাগ্যক্রমে, কেউ আসলে বিপদাপন্ন ছিল না। শ্রুতিকটু বা আর্তনাদের শব্দ পূর্বে ধারণকৃত ছিল এবং পুরো দৃশ্যপট চিত্রায়ণ করা হয়েছিল একটি দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়া সামাজিক পরীক্ষার অংশ হিসেবে যা জুন ৪, ২০১৪ তারিখে প্রকাশিত হয়। ইয়েসনোমেইবি& ;নামে একটি স্থানীয় বিনোদন গ্রুপ ভিডিওটি তৈরি করে ভারতে চলমান মহামারী “ধর্ষণ সংস্কৃতি”র প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে। “ভারতে প্রতিদিন ধর্ষণের ঘটনা সম্পর্কে শোনা যায়, যার কারণে ব্যাপক প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়। হাজার হাজার মানুষ মোমবাতি মিছিলে অংশ নেয়, কিন্তু বিপদের সময় শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় মানুষ এগিয়ে আসে।” – ভিডিও বর্ণনায় লেখা।

সম্প্রতি ভারতের পল্লীগ্রামে দুই তরুণীর পাশবিক গণধর্ষণ ও ফাঁসিতে ঝোলানোর কিছুদিনের মধ্যেই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে। পোস্ট হওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে, ইয়েসনোমেইবি'র ফেসবুক পাতা জানায় যে ভিডিওটি ১৫০,০০০ বারের বেশি দেখা হয়েছে। জুন ১২, ২০১৪ পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল এক মিলিয়ন (এবং বর্তমানে ১ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন হয়েছে)। কয়েক দিন পর, ভিডিওটি পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের যেমন টাইম ম্যাগাজিনটেলিগ্রাফ এর নজরে আসে এবং তারা এই বিষয়ে প্রতিবেদন করে। 

অনেকের অনুভূতি নাড়া দিয়ে ওঠে যখন ভিডিওতে স্পষ্ট চিৎকার শোনার পরও পথচারীদের মধ্যে কোন উদ্বেগ দেখা যায় না।  ভিডিওটি ভারতের ধর্ষণ সমস্যা মোকাবেলা বিষয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করে, বিশেষ মধ্যে বেশি হতাশার সৃষ্টি করে যারা এই সমস্যা প্রতিকারের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। 

উর্মি আগারওয়ালের মত কেউ কেউ ফেসবুক পাতার মন্তব্য বিভাগে লিখেছেন যে  ভিডিওটি একটী গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে: 

this movie shud be shown to our so called youth who belive in candle march and talking on social media….but when the strom hit the ground, they do nothing!

এই ভিডিওটি আমাদের তথাকথিত যুবসমাজকে দেখানো উচিত যারা মোমবাতি মিছিল এবং সামাজিক মাধ্যমে কথা বলায় বিশ্বাস করে…কিন্তু যখন মাটিতে বজ্রপাত হয়, তখন তারা কিছুই করে না!

তবে, অন্যরা মনোযোগ নিবদ্ধ করেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভিডিওটি উঠে আসার বিষয়টিতে।  ফোর্বস ম্যাগাজিনের ব্লগার রুচিকা তুলসায়ান টাইম ম্যাগাজিনের শিরোনাম দিয়ে বিষয়টিকে সামনে তুলে ধরেন “এই ভিডিওটি যেরকমটা তুলে ধরে, ভারতীয়রা কি ধর্ষণের বিষয়ে একই রকম উদাসীন?”: 

@টাইমওয়ার্ল্ড, সব মিলিয়ে ভাল, কিন্তু শিরোনামটা ঠিক নেই। ভারতীয় জনগণ ধর্ষণের ব্যাপারে উদাসীন?

অঙ্কুশ বোরাভকে  নামে একজন ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফার আরো বিষণ্নভাবে বলেন:

#টাইম পুরোটাই ভুল বুঝেছে। #ভারতে কোন আশা নেই। 

অনেক মন্তব্যকারী ভিডিওটির ইউটিউব পাতায় মন্তব্যে ভিডিওটি নির্মাণের সাথে জড়িতদের সমালোচনা করেন। লন্ডনে বসবাস্রত ভারতীয় বংশোদ্ভূত তীর্থঙ্কর দুবে ভিডিওটির উদ্দেশ্যকে প্রশংসা করেন, কিন্তু ভিডিওটির একটি দিক তুলে ধরে বলেন যে, ভিডিওটি দেখে মনে হচ্ছে যে নির্মাতারা ভ্যানের দরজা খোলেননি উদ্বিগ্নদের প্রমাণ করার জন্য যে ভেতরে কোন মহিলা ধর্ষিত হচ্ছে না। 

ভিডিওটির ইউটিউব পাতায় দুবে'র মন্তব্যের মতো আরও অনেক মন্তব্য আসার পর ইয়েসনোমেবি ইউটিউব কমেন্টের মাধ্যমে তাদের আনুষ্ঠানিক জবাব প্রকাশ করে:

“Alright here's something you all should know -

1. We talked to all the heroes for a good 5 minutes.

2. We opened the door and showed them what's inside.

3. All of them (including the first guy appreciated what we were doing)

4. On being asked if they would do the same again if needed – ‘Definitely, why not?’”

“ঠিক আছে, এখানে আপনাদের সকলের জানানো হচ্ছে যে -

1. আমরা সকল নায়কদের সাথে ৫ মিনিট ধরে ভালভাবে কথা বলেছি।

2. আমরা দরজা খুলেছি এবং ভেতরে কি আছে তাদের দেখিয়েছি।

3. তাদের সবাই (প্রথম লোকসহ সকলেই আমাদের প্রশংসা করেছেন)

4 প্রয়োজনে তারা আবার একই কাজ করবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে -. ‘নিশ্চিতভাবে, কেন নয়?'”

অন্যদিকে, ভিডিওটি ভারতের পক্ষে যে প্রচারণা পেয়েছে এবং নির্মাতারা সচেতনতা সৃষ্টির বদলে আসলে ভারতের সুনাম ক্ষতিগ্রস্থ করছেন কিনা সে বিষয়ে কিছু লোক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। 

মুম্বাইয়ের একজন বাইকচালক যার ইউটিউব ব্যবহারকারী নাম ওজ্ঞি এফ ভিডিওটির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করে বলেন যে:

To be honest, these “social experiments” only damage the already horrible image India has globally. If you're so concerned about what our society thinks, spend your time conducting workshops and creating awareness (among women and men). Videos like these give the world an opportunity to say India is the rape capital of the world.

সত্যিকারর্থে, এইসব “সামাজিক পরীক্ষায়” শুধুমাত্র  বিশ্বব্যাপী ভারতের ইতিমধ্যেই যে ভয়ঙ্কর ইমেজ তৈরি হয়েছে তাকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করে। আপনি যদি আমাদের সমাজ কি ভাবছে সে সম্পর্কে খুব উদ্বিগ্ন হন, আপনি আপনার সময় কর্মশালা পরিচালনায় এবং সচেতনতা (নারী ও পুরুষের মধ্যে) তৈরিতে ব্যয় করুন। এই ধরনের ভিডিও ভারতকে বিশ্বের ধর্ষণের রাজধানী বলার সুযোগ দিয়ে দেয়।

ধর্ষণ ভারতের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু এধরনের ভিডিও কি সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে? আপনার কি মনে হয়?

1 টি মন্তব্য

  • পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ তথা অভিনেতা তাপস পালের বিরোধী দলের নারীদের ধর্ষণের হুমকি সম্বলিত ভিডিও ফুটেজ ভারতের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সমপ্রচারিত হওয়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। গত ১৫ই জুন মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধারণ করা ছিল সেই বক্তব্যটি।আরো বিস্তারিতঃ http://www.theglobalnews24.com/details.php?id=7890 ভিডিও লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=eEGvkxYpZ-4

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .