সাবওয়ে: নিউইয়র্কের যাতায়াতের প্রাণভোমরা

NYC Subway

ছবি নেয়া হয়েছে ফ্লিকার ব্যবহারকারী রোমান্ক ফটোগ্রাফি থেকে। সিসি বিওয়াই-এনসি-এনডি ২.০

তাড়াতাড়ি করো, এক্ষুণি এসে পড়বে
শুনতে পাচ্ছো না, দশদিগন্ত কাঁপিয়ে আসছে রেলগাড়ি
উঠে পড়ো কোনো এক ট্রেনে
আর পৌঁছে যাও হার্লেমের সুগার হিলে

উপরের লাইন ক'টি জনপ্রিয় গান “টেক দ্য অ্যা ট্রেন” থেকে নেয়া। গানটি গেয়েছেন এলা ফিটজেরার্ড। আর যন্ত্রায়ন করেছেন বিখ্যাত জ্যাজ সংগীতশিল্পী ডিউক এলিংটনবিগ অ্যাপল সাবওয়ে সিস্টেমের অনেকগুলি উদাহরণের মধ্যে এটি একটি। যা সবাইকে উদ্বুদ্ধ করে। এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ১৩৫৩ কিলোমিটার। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বিশ্বের মধ্যে এটিই সবচে’ দীর্ঘতম পাতাল রেললাইন।

Amado u odiado, el sistema de metro de Nueva York es más que un medio de transporte, es casi un estilo de vida. Imagen cortesía de Flickr/sakeeb (CC BY 2.0)

পছন্দ করুন কিংবা না করুন নিউইয়র্ক পাতালরেল শুধুমাত্র যাতাযাত ব্যবস্থা নয়: এটি মানুষের জীবনযাপনের একটি উপায়ও বটে। ছবি নেয়া হয়েছে ফ্লিকার/সাকিব থেকে (সিসি বিওয়াই ২.০)।

মানুষজন বিশ্বাস করে, নিউইয়র্কের পাতালরেলের এই জনসমুদ্রে এসে কুমিরও হারিয়ে যাবে। এই পাতালরেল প্রমাণ করেছে, এটি শুধুমাত্র যাতাযাত ব্যবস্থা নয়: এটি মানুষের জীবনযাপনের একটি উপায়ও বটে।

এই পাতালরেলে করে প্রতিদিন ৫ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। এদের মধ্যে ওয়ার্ল্ড স্ট্রিটে এক্সিকিউটিভ থেকে শুরু করে রাতে থাকার জায়গার সন্ধানে গৃহহীন মানুষ, উচ্চাভিলাষী শিল্পী, হিপহপ নৃত্যশিল্পী থেকে মেক্সিকান পপ গানের গায়কও রয়েছেন।

পাতালরেলে শুধু বিভিন্ন সংস্কৃতির সম্মিলনই দেখা যায় না, পাতালরেল স্টেশনের দেয়ালে, ফ্লোরে ২০০'র কাছাকাছি চিত্রকর্মও রয়েছে। এই চিত্রকর্মগুলো মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন কর্তৃপক্ষআর্ট ফর ট্রান্সপোর্ট” প্রকল্পের আওতায় স্পন্সর করেছে। এই প্রকল্পের আরো কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা বিভিন্ন রকমের গান- অপেরা থেকে পূর্ব এশিয়ার গানগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে চান। এই গানগুলো প্রতিদিন লাখো যাত্রীদের জন্য গেয়ে শোনানোর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

যদিও নিউইয়র্কের পাতালরেল ব্যবস্থাকে সবাই সবসময় অকুণ্ঠচিত্তে প্রশংসা করেন না। শহরের নিচে রেল স্টেশন ঘিরে বিলিয়ন বিলিয়ন ইঁদুর বংশবিস্তার করে চলছে। সম্প্রতি শহরের একটি ট্রানজিট ইউনিয়ন সবচে’ কুৎসিত ইঁদুর প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যাত্রাপথে দেখা সবচে’ কুৎসিত ইঁদুরের ছবি জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল।

এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল, মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট অথরিটির কর্মীদের মাঝে কাজের পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা। কর্মীরা প্রায়ই তাদের ভূগর্ভস্থ স্টাফ রুম, অফিস, খাবারের টেবিলে ইঁদুরের মুখোমুখি হন। যদিও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১২ সালে। তবে পাতালরেলের গাদাগাদি করে বসে থাকা যাত্রীদের মাঝে বেয়াড়া ইঁদুরের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন।

পাতালরেলের সেবা কেমন তার মূল্যায়ন যাত্রীরা নিজেই করে থাকেন। গত ১৫ বছর ধরে নিউ ইয়র্ক সিটি রিপোর্ট কার্ডের ব্যবস্থা করে আসছে। সময়ানুবর্তিতা,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, যান্ত্রিক বিষয়-আশয়, আসন পাওয়ার সুযোগ, ঘোষণার সংখ্যা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে এই রিপোর্ট কার্ড তৈরি করা হয়। সর্বশেষ রিপোর্ট কার্ড অনুযায়ী কিউ রেল সবচে’ বেশি স্কোর পেয়েছে। আর সবচে’ কম স্কোর করে বাজে পাতালরেলের নাম কুড়িযেছে সি ট্রেন।

টুইটারেও পাতালরেলের যাত্রীরা তাদের মতামত তুলে ধরেছেন:

কাজে যেতে আজ দেরি হয়ে যাবে। টাকাপয়সার ক্ষতি হবে। কারণ, আমি সময়মতো এসেছি। যদিও তাদের আমি মাসে ১১২ ডলার করে দিই।

জি ট্রেনের অপেক্ষায় পুরো শনিবারটাই আমার মার্টেল-উইলিংবিতে থাকার ইচ্ছে ছিল না। তবে কর্তৃপক্ষের মনে বোধহয় অন্য ইচ্ছে ছিল।

কুইন্সের অধিবাসীরা মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষকে আবারো ‘অমাবস্যার চাঁদের মতো’ সেবা দেয়ার জন্য অভিনন্দন জানাবে।

অন্যরা অবশ্য প্রাযুক্তিক সুবিধা দেয়ার উদ্যোগ নেয়ায় প্রশংসা করেছেন:

মেট্রোপলিটান ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ সৌর শক্তি ব্যবহারের চেষ্টা করছে। প্রথম উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে ব্রনক্সে। এই সম্পর্কে জানুন এখানে

পছন্দ হোক আর না হোক, এই শহরের লাখ লাখ অধিবাসীর কাছে নিউ ইয়র্ক পাতাল খুবই প্রয়োজনীয় একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই অনেকে কিছুর বিনিময়ে হলেও এই সম্পর্ক আরো জোরদার করতে চান। একটি উদাহরণ: এই ভিডিও-তে একদল লোককে দেখা যাচ্ছে, যারা রেলের কন্ডাক্টরদের চমক দিতে চান। কন্ডাক্টররা সাদা-কালো ডোরাকাটা বোর্ড দেখে সাবওয়ে প্ল্যাটফর্মে নিরাপদে ট্রেন থামানোর নির্দেশ দিয়ে থাকেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .