মিশরে মুসলিম ব্রাদারহুডের ৫২৯ জন সমর্থক মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত

A state-of-the-art execution machine designed by @Ternz to help Egypt execute 529 Muslim Brotherhood supporters

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরণের জন্য একটি শিল্প মন্ডিত রাষ্ট্রীয় যন্ত্র। মুসলিম ব্রাদারহুডের ৫২৯ জন সমর্থককে ফাঁসি দেবার কাজে মিশরকে সহায়তা করার উদ্দেশে এটির নকশা করেছেন @Ternz 

মিশর আজ [২৪ মার্চ] ৫২৯ জন মুরসি সমর্থকের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড রায় প্রদান করেছে। গত আগস্ট মাসে মিশরের মিনিয়াতে সহিংস দাঙ্গায় জড়িত থাকার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে এই রায় প্রদান করা হয়।

ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ও মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মাদ মুরসির সমর্থনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক শাস্তি প্রদান করার পরপরেই এই দাঙ্গা ছড়িয়ে পরে। এই দাঙ্গায় মুসলিম ব্রাদারহুডের কয়েক শত সমর্থক মারা গেছে।

মিনিয়া দাঙ্গায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। এই অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত করে ৫২৯ জনের সবাইকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।

এই রায়টি মিশরের আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তর একটি মৃত্যুদণ্ডের রায়। রায়টি নিয়ে তিরস্কার বা প্রশংসা উভয়ই করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিস্তৃতির কোন প্রান্ত থেকে এই রায়টির সম্পর্কে প্রতিক্রিয়াটি এসেছে, তাঁর উপর নির্ভর করছে তিরস্কার করা হবে, নাকি প্রশংসা করা হবে। এই প্রতিক্রিয়াগুলোকে এখানে মাদা মাসর পর্যালোচনা করেছে।

মিশরীয় ব্লগার জেইনোবিয়া বলেছেন, এই দণ্ডাদেশের জন্য গত ২৮ এপ্রিল তারিখে একটি চূড়ান্ত রায় ইস্যু করা হয়, যা একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ডও ভঙ্গ করেছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেছেনঃ 

আমাদের দেশে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক এইচসিভি [হেপাটাইটিস সি] আক্রান্ত রোগী আছে। সারা বিশ্বের মধ্যে আমাদের দেশে যৌন হয়রানির হার সবচেয়ে বেশি। আজ আমরা আরেকটি রেকর্ড ভেঙ্গেছি। একটি মাত্র মামলায় আদালত কর্তৃক গন-মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদানের বিশ্ব রেকর্ড করেছি আমরা!! 

আমি ৫২৯ জন বিবাদীর বিরুদ্ধে গঠিত মিনিয়া অপরাধী আদালতের ঐতিহাসিক রায় সম্পর্কে কথা বলছি। হ্যাঁ, আমি সেই রায়ের কথা বলছি, যে রায় নিয়ে সারা বিশ্ব এই মূহুর্তে কথা বলছে। 

জেইনোবিয়া আরও বলেছেনঃ 

আমি এখানে ঘটনাটি সম্পর্কে কিছু বলবঃ

মিনিয়া বিচারে রাব্বা ছত্রভঙ্গের ফলাফল স্বরূপ ৫২৯ জন বিবাদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ১৫ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

এই মামলায় ১৩৯ জনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে, যেখানে বাকিদের হয় জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে নতুবা তারা পলাতক রয়েছে। 

শুধুমাত্র ৫১ জন বিবাদী বিচারে অংশ নিয়েছে। কেননা এত অল্প জায়গায় অন্যান্য বিবাদীদের স্থান সঙ্কুলান করা যায়নি।

বিচার কাজটি শনিবারে শুরু করা হয়েছে এবং সোমবারের মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলা হয়েছে। 

বিবাদীদের আইনজীবীরা বিচারক প্যানেলটিকে বদল করার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু তাদের অনুরোধ বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

“না অনুপস্থিতিতে” বিবাদীদের আইনজীবীদের বিবাদীদের পক্ষে যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করতে দেয়া হয়নি!!

মাতায় পুলিশ স্টেশনের ডেপুটি শেরিফ মোস্তফা আল আত্তারকে হত্যা করার দায়ে ৫২৯ জন বিবাদীকে অভিযুক্ত করা হয়!!

মিশরের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এটি সবচেয়ে বড় গণ মৃত্যুদণ্ডাদেশ।

মিশর-ভিত্তিক সাংবাদিক বেল ট্রু বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেনঃ 

আমি চিন্তা করতে পারছি না, কীভাবে আপনারা ৫২৯ জন লোককে ফাঁসি দিতে পারেন। যদি একজন লোককে ফাঁসিতে ঝুলাতে ৫ মিনিট করে সময় লাগে, তবে ৪৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ক্রমাগতভাবে ফাঁসি দিয়ে যেতে হবে।

মিশরীয় @তারনজ কেবল দুই সপ্তাহ আগে কার্টুন আঁকা শুরু করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি এই সমস্যার একটি সমাধান নিয়ে এসেছেনঃ শৈল্পিক উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকরণ যন্ত্রের এক রাষ্ট্র।

তিনি ব্যাখ্যা [আরবি] করেছেনঃ 

আমি যখন আরাম করে বসেছিলাম, ঠিক তখন আমি নিজেকে প্রশ্ন করলামঃ আমি কোন সর্বোত্তম উপায়ে আমার দেশের জন্য কিছু করতে পারি ? কীভাবে আমি এই পরিস্থিতিতে দেশের কাজে আসতে পারি এবং সাহায্য করতে পারি ? তাই আমি একটি কলম নিলাম এবং একটি যন্ত্রের নকশা করে ফেললাম। কেননা এই যন্ত্রটিই এই পরিস্থিতিতে মিশরে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। 

এখানে তাঁর আঁকা মূল নকশাটি পাওয়া যাবেঃ 

পর্যাপ্তভাবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকরণ বাস্তবায়ন করতে আমার একটি অবদান হিসেবে আমি আশা করি এই যন্ত্রটি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাহায্য করবে। এটি হচ্ছে শৈল্পিক উপায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকরণ যন্ত্রের এক রাষ্ট্র।

অতঃপর, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সাংবাদিক ইনিগো গিলমোর পরিশেষে বলেছেনঃ 

ভন্ড বিচারের মাধ্যমে তারা সাংবাদিকদের পশুর মতো খাঁচায় বন্দী করেছে এবং অন্যান্য ১০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে। মিশর কি চায় পর্যটকেরা তাদের দেশ ছেড়ে চলে যাক ? 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .