সৌরশক্তি ভারতীয় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলছে

Solar array pattern captured at Auroville, Pondicherry, India. Image from Flickr by Amaresh Sundaram Kuppuswamy. CC BY

ভারতের পন্ডিচেরির সোলার প্যানেল ব্যবস্থা। অমরেশ সুন্দরম কুপ্পুস্বামীর ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট থেকে ছবি নেয়া হয়েছে। সিসি বিওয়াই-এনসি-এসএ।

বিশ্বে বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সংখ্যা ৬২৮ মিলিয়ন। এর ২৯০ মিলিয়নই বসবাস করেন ভারতের গ্রামাঞ্চলে। সেজন্য বেশিরভাগ ভারতীয় কৃষক চাষাবাদের জন্য সেকেলে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে নলকূপ দিয়ে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন।

ভারতের সরকার জমিতে সেচের জন্য ডিজেল চালিত ২৬ মিলিয়ন গভীর নলকূপের পরিবর্তে সৌরশক্তি চালিত নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। আর এর ফলে বিদ্যুৎ এবং ডিজেলের পিছনে বছরে সরকারের যে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভর্তুকি, তা বেঁচে যাবে। তাছাড়া দিন দিন যেভাবে কয়লার চাহিদা বাড়ছে, সেটাও লাঘব হবে। সৌরশক্তির মাধ্যমে উত্পাদিত বিদ্যুতের অব্যবহৃত অংশ জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হবে

২০১৩ সালে ভারত তাদের সৌরশক্তি উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করেছে। বর্তমানে এর পরিমাণ ২.১৮ গিগাওয়াট। ভারত তার জাতীয় সৌরশক্তি পরিকল্পনা নীতি- জহরলাল নেহরু ন্যাশনাল সোলার মিশন অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে ১০ গিগাওয়াট এবং ২০২২ সালের মধ্যে ২০ গিগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উত্পাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তাছাড়া রাজস্থানের সাম্ভারে দেশের বৃহত্তম সৌর প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের আবেদন করেছে।

ইন্ডিয়ান পাবলিক সেক্টর ব্লগে ইয়াদভ কে সাম্ভারে ৪ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সৌর প্ল্যান্টের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন:

রাজস্থানের সাম্ভারের এই প্রজেক্টের জন্য ১৯ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। প্রথম ধাপে এতে ব্যয় হবে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ভারতীয় টাকা। […] সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য পিভি মডিউল ভিত্তিক ক্রিস্টালাইন সিলিকন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্ল্যান্টের মেয়াদকাল হবে ২৫ বছর। এই প্ল্যান্ট থেকে প্রতি বছর ৬ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। তাছাড়া পরিবেশ-বান্ধব এই প্রজেক্ট প্রতি বছর ৪ মিলিয়ন টন কার্বন ড্রাইঅক্সাইড নির্গমন কমাবে।

কেটি ফেহরেনবেচার প্রযুক্তি বিষয়ক ব্লগ গিগা ওমে লিখেছেন:

আরো বেশি যন্ত্র নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটে সংযোগ স্থাপন করতে পারবে- অন্তর্জালিক উপস্থিতিও বাড়বে – তারা আগের চেয়ে আরো বেশি করে সৌর শক্তির উৎস খুঁজবে। বর্তমানে সৌরশক্তি সবচে’ সস্তা এবং এটা খুব সহজেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে গিয়ে সরবরাহ করা যায়। […]

ভারত যদি এই পরিমাণ সৌরশক্তি চালিত নলকূপ স্থাপন করতে পারে, তাহলে একটি মাত্র দেশে এই ধরনের প্রযুক্তির সবচে’ বড়ো ডেভলপমেন্ট বলে বিবেচিত হবে। ভারতের সরকারের এই উদ্যোগ সফল হলে, এটা শুধু গ্রিড বিদ্যুৎ এবং ব্যয়বহুল ডিজেলের ব্যবহার কমাবে না। এটা ক্ষতিকর কার্বণ নি:সরণ কমানোর পাশাপাশি কৃষকদের বিদ্যুতের খরচও কমিয়ে দেবে।

সরকারের উদ্যোগ নিয়ে টুইটারে অনেকে টুইট করেছেন:

আগামী ৫ বছরে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। ২ লাখ নলকূপ সৌরশক্তির আওতায় আসবে। রক্ষা পাবে ভারতের পুরোনো গ্রিড।

ভারত বিশ্বের বৃহত্তম সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করছে। ৭৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই প্ল্যান্টে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উত্পন্ন হবে… চমত্কার খবর… কিন্তু কবে? এমন ঘোষণা শুনে খুশি হলাম।

ভারতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতি কিলোওয়াটের খরচ ৭.৫০ ভারতীয় টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।

তবে দ্রুত অগ্রগতির জন্য বাণিজ্যিকভাবে সৌরশক্তি উৎপাদন করা দরকার, যা আবার জৈব বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে:

ভারত এবং চীনের সোলার প্যানেল কারখানার আশেপাশের নদী এবং কৃষিজমিতে লক্ষ লক্ষ টন সিসা ফেলা হচ্ছে।

ব্লগার এবং সৌরশক্তি বিশেষজ্ঞ, রীতেশ প্রধান মনে করেন, ভারত যদি সৌরশক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চায়, তাহলে এমন কিছু ইস্যু রয়েছে, ২০১৪ সালের মধ্যে তা সমাধান করা দরকার।

ভারতের সৌরশক্তির উন্নয়ন সম্পর্কে আরো কিছু জানতে রিনিউয়েবল এনার্জি ইন্ডিয়া এবং সোলার পাওয়ার ইন্ডিয়া‘র ফেসবুক পেজ ভিজিট করতে পারেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .