বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দিলো আল কায়েদা

আইমান আল জাওয়াহিরির একটি ভিডিওর স্ক্রীনশট

আইমান আল জাওয়াহিরির একটি ভিডিওর স্ক্রীনশট

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক আল কায়েদার একটি অডিও-ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দিয়েছে। সংগঠনটির প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ ইন্টারনেটে প্রচারিত আরবি ভাষায় দেয়া এই বার্তায় বাংলাদেশে, তাদের ভাষায় ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেয়া হয়েছে।

তিনি ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশি মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন:

এই উপমহাদেশে এবং পশ্চিমের দুস্কৃতকারীরা, ইসলামের বিরুদ্ধে এবং তার নবীর বিরুদ্ধে যারা ক্রুসেড পরিচালনা করছে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য। তাদের লক্ষ্য এদেশের মুসলমানদের একটি অবিশ্বাসের এবং ধ্বংসের জগতের দাস করে রাখা।

এখানে সেই ভিডিও মেসেজের একটি লিখিত সংস্করণ(পিডিএফ) রয়েছে।

২৮ মিনিট এবং ৫৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও বার্তাটির শিরোনাম: “বাংলাদেশ: নিস্তব্ধতার দেয়ালের পেছনে গণহত্যা”, যাতে আল জাওয়াহিরির বার্তার অডিও প্রচার হয় তার এবং অন্যদের স্থিরচিত্র সহকারে। হেফাজতের মিছিলের ছবিও সেখানে দেখানো হয়। জিহাদোলজি সাইটের পরিচালনাকারী অ্যারন ওয়াই জেলিন ইউরোবিডিনিউজ অনলাইনকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন এটি নিশ্চিত যে এই কণ্ঠস্বর আয়মান আল জাওয়াহিরির।

বাংলাদেশের র‍্যাব এই বার্তার উৎস খুঁজতে গিয়ে রাসেল বিন সাত্তার নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই বাংলাদেশে আল কায়দার নেতা জাওয়াহিরির বার্তাটি প্রথম ছড়িয়েছে। সে কুখ্যাত উগ্রপন্থী ফেইসবুক পাতা বাশেরকেল্লা এবং আরও কিছু জিহাদী ব্লগের পরিচালক (অ্যাডমিন) যেগুলো ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা চালিয়ে থাকে বলে ধারনা করা হয়। সে স্বীকার করেছে যে এই ভিডিওটি সে পাকিস্তানী এক ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে এবং বাংলাদেশে এটি ছড়িয়ে দেবার উদ্যোগ নেয়।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম সহ উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এই অপতৎপরতার সাথে আল কায়েদার জিহাদের আহবান একই সূত্রে গাঁথা বলে অভিযোগ করেছেন নেটিজেনরা।

রায়হান রশীদ (@rayhanrashid) টুইট করেছেন:

জামায়াত-বিএনপিকে সমর্থন দিতে আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিয়েছেন। এবার আনুষ্ঠানিক আঁতাঁত প্রতিষ্ঠিত হলো।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী সংগঠন জামায়াত তাদের জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। মোফাকখারুল তৌফিক মনে করছেন, আল কায়েদার এই ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জামাতের জঙ্গী সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পাওয়া গেল:

এ বার ভিডিও-বার্তায় প্রকাশ্যেই জামাত-নেতাদের পাশে দাঁড়ালেন আল কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি। এর পরেও কি কেউ বলবেন যে জামাত জঙ্গী সংগঠন নয় ?

এদিকে জামায়াত এবং হেফাজত দু’দলই আল কায়েদার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে।

নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতারসহ তের দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম সহিংস কর্মসূচী পালন করে। ছবি ফিরোজ চৌধুরী। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (৫/৫/২০১৩)

নাস্তিক ব্লগারদের গ্রেফতারসহ তের দফা দাবিতে হেফাজতে ইসলাম সহিংস কর্মসূচী পালন করে। ছবি ফিরোজ চৌধুরী। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (৫/৫/২০১৩)

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা: ইমরান এইচ সরকার আল কায়েদার ভিডিও বার্তার প্রেক্ষিতে জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন:

এক ভিডিও বার্তায় জামাত- হেফাজতের আন্দোলনকে সমর্থন করে ধর্মের নামে মানুষ হত্যার কথিত জিহাদের ডাক দিয়েছে আল-কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি।

জোটবদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া কি? যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী সংগঠন জামাত-শিবির, হেফাজত কে নিষিদ্ধ করতে আর কতো অপেক্ষা?

প্রথম আলোর পাঠক আবদুল্লাহ আল-মামুন একে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন:

এটি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের প্রতি সরাসরি হুমকি বা হস্তক্ষেপ। এসব হুমকি আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।

সাংবাদিক অঞ্জন রায় ভিডিও বার্তার সত্যতা যাচাই করার আহবান জানিয়েছেন:

বাংলাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জাওয়াহিরি- এই ভিডিওটি এখন আলোচনায়, প্রথমত দরকার ভিডিওটির তথ্য সত্যতা যাচাই। সত্য হলেও বিন্দুমাত্র শংকার নাই- আমরা শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি। এটা আফগানিস্তান না, পাকিস্তান না। এটা বাংলাদেশ- আল কায়দাকে কায়দা করতে দেয়ার জন্য আমাদের পিতা আর ভাইয়েরা যুদ্ধ করেন নি। আমাদের মা আর বোনরাও জানেন কিভাবে অনুপ্রেরণা দিতে হয় প্রিয়জনকে যুদ্ধে যাবার।

একেএম ওয়াহিদুজ্জামান মনে করেন, রাজনীতির মাঠ গরম করতে এই ভিডিও বার্তাটি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে:

দেশে-বিদেশে যখন এই বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে, এমন কী সভ্যদেশগুলো যখন এই হত্যাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাতিল করছে। তখন ‘বিডি নিউজ ২৪’ গত ১৪ জানুয়ারি আল শাহাব মিডিয়ার তৈরি এবং জিহাদোলজি ডট নেট সাইটে প্রকাশিত একটি ভিডিও বার্তা নিয়ে মাঠ গরম করে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দেবার পাশাপাশি জঙ্গী ইস্যু দিয়ে পশ্চিমাদের মন গলানোর চেষ্টা করছে।

আরে গর্দভের দল, ওটা সত্যি হলে আরো একমাস আগেই পশ্চিমা মিডিয়া এবং আল জাজিরা লিড নিউজ করতো। তোমাদের মত চিপায় পরে এস্কেপ রুট খোঁজার জন্য একমাস বসে থাকতো না।

আল কায়েদার হুমকিকে তদন্ত করে দেখছে সরকার। তবে একে বড় হুমকি হিসেবে দেখছেন না দেশটির স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এদিকে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুর রশীদ বিষয়টিকে হালকাভাবে না নেয়ার কথা বলেছেন:

আল কায়েদার শক্তি কমে গেলেও ভাবাদর্শগতভাবে বাংলাদেশে তাদের অনুসারী আছে। তারা উজ্জীবিত হয়ে আল-কায়েদার সহায়তায় কোন নাশকতা করতে পারে। এ আশংকাকে আমি উড়িয়ে দিচ্ছি না।

অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ইশতিয়াক আলি চোধুরী ডেইলি স্টারে একটি মতামত লিখেছেন:

আমরা যারা একটি গণতান্ত্রিক দেশ, একটি বহু ধর্মের, বহু সংস্কৃতির, শিক্ষিত, স্বাস্থ্যবান এবং সমৃদ্ধিশালী জাতি চাই, তাদের কাছে জাওয়াহিরির বার্তা, যদি মিথ্যাও হয়, এটিই প্রমাণ করে যে শত্রু অতি নিকটে এবং আমাদের সবা্রই এগিয়ে আসতে হবে তাদের প্রতিহত করতে। জাতি হিসেবে দল ও মতবাদ নির্বিশেষে আমাদেরকে ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রতিহত করতে একমত হতে হবে এবং এ লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .