বাংলাদেশে ফিল্মি স্টাইলে ব্যাংক থেকে টাকা চুরি এবং হোতা গ্রেফতার

ব্যাংক থেকে টাকা চুরির মূল নায়ক র‌্যাবের হাতে আটক (লাল-সাদা শার্ট পরিহিত)। ছবি তুলেছেন রিয়াজ সুমন। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৮/০১/২০১৪)

ব্যাংক থেকে টাকা চুরির মূল নায়ক র‌্যাবের হাতে আটক (লাল-সাদা শার্ট পরিহিত)। ছবি তুলেছেন রিয়াজ সুমন। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (২৮/০১/২০১৪)

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক ডাকাতির নায়ক এখন শ্রীঘরে।

ফিল্মি স্টাইলে ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করে নায়ক বনে গেছেন সোহেল এবং তার সহযোগী ইদ্রিস! তাকে নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। সে বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংক থেকে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা চুরি করে ৩০ ফুট সুরঙ্গ খুড়ে। চুরির দুইদিন পরে র‌্যাবের কাছে ধরাও পড়ে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে টাকা চুরির দু:সাহসিক গল্প, যা সিনেমার কাহিনিকেও হার মানায়।

সোহেল দু্‌ই বছর আগে টাকা চুরির পরিকল্পনা করেছিলেন। এজন্য ব্যাংকের পাশেই বাসা ভাড়া নেন। এরপর বাসা থেকে সুড়ঙ্গ কাটা শুরু করেন। দেড় বছর পর সোনালী ব্যাংকের ভেতরে পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা তৈরি করে ফেলেন। বাইরে যাতে আওয়াজ না যায় এজন্য তিনি সুড়ঙ্গ কাটার কাজ দিনের বেলায় করতেন। তাছাড়া চুরির কাজে সহযোগিতা নিতে ব্যাংকের ওই শাখার এক নারী কর্মীর সাথে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে তুলেছিলেন।

ব্যাংক থেকে টাকা চুরির ঘটনা প্রকাশ পাবার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় হৈ চৈ পড়ে যায়। এই চুরির মধ্যে কেউ শার্লক হোমস, কেউ দ্যা ব্যাংক জব, কেউ ধূম থ্রি, কেউ শশাঙ্ক রিডেমপশন, কেউ লেডি কিলার্স সিনেমার ছায়া খুঁজে পেয়েছেন।

প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদনে এক পাঠক মন্তব্য করেছেন:

শার্লক হোমস এর একটা গল্পে এমন ছিল। বাড়ী থেকে সুড়ঙ্গ কেটে ব্যাংক লুটের ঘটনা! এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় পেশাদার চোর ডাকাতেরাও হতবাক হয়েছেন সম্ভবত! তবে আজব বিষয় হচ্ছে ব্যাংকে টেবিলের ওপর অত টাকা পড়ে থাকে তা জানতাম না। ওই শাখায় কি ভল্ট নেই?

একই সংবাদ প্রতিবেদনে শিহাব শাহিন মন্তব্য করেছেন:

‘দা ব্যাংক জব’ চলচ্চিত্রের ছায়া অবলম্বনে নির্মিত!

মুমিন হেমিন চোরের দ্যা ইতালিয়ান জব সিনেমা কয়েকবার দেখা উচিত ছিল বলে মত দিয়েছেন:

বেশ ধৈর্য নিয়ে মানুষটা কাজটা শেষ করেছে। মাথা অনেক ঠান্ডা এটা বোঝাই যাচ্ছে। এত টাকা এত সহজে দেখার পরেও মাথা ঘুরে পড়ে যাননি, বরং এশার নামাজ (!!) আদায় করে বেশ পাক-পবিত্র (!!) হয়ে এসে টাকাগুলো হাত করেছেন। বাহ, উনাকে মাথা ঠান্ডার জন্য শশ্যাঙ্ক রিডেন্মপশন মুভির সেকেন্ড পার্টে নেয়া যেতে পারে। তবে উনার দ্যা ইটালিয়ান জবটা আর কয়েকবার দেখা উচিৎ ছিল। টাকা চুরিই বড় কথা না, সামলে রাখাটাও অনেক কিছু 😀

শাহরিয়ার তানভীর একে লেডি কিলার্স সিনেমার হুবহু অনুকরণ বলে উল্লেখ করেছেন:

যারা ”লেডি কিলারস” দেখেননিঃ

সোনালী ব্যাংক ডাকাতির মত একেবারে হুবহু ঘটনা, মাটিতে লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে ডাকাতি। একদম সেইম টু সেইম। যাক, আর স্পয়লার এলার্ট দিলাম নাহ : )

ফিল্মি স্টাইলে চুরি করে অনেকের মন জয় করে নিয়েছেন সোহেল। তাই র‌্যারে হাতে ধরা পড়ায় অনেকে কষ্ট পেয়েছেন। সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন:

‘অপারেশন সোনালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ’ সিনেমার নায়ক হাবিব ওরফে সোহেলকে অসহায়ভাবে rab এর হাতে বন্দী হতে দেখে খুব খারাপ লাগছে। তার মত একজন ক্রিয়েটিভ, প্রতিভাবান, ধৈর্য্যশীল মানুষকে আরো বড় কাজে লাগানো উচিত।

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক সেজান মাহমুদও তার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন:

সোনালী ব্যাংক ডাকাতি এবং ১৬ কোটি টাকাসহ ধরা পরা সোহেল রানা আর সহযোগীর জন্যে আমার মায়াই হচ্ছে। বেচারারা দুই বছর ধরে সুড়ঙ্গ কেটে তারপর টাকা চুরি (ডাকাতি বলবো না) করে উপভোগ করার আগেই ধরা পড়লো (একেই বলে অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন); অথচ ওরা যদি জানতো তার'চে নষ্ট রাজনীতিবিদ, ঘুষখোর আমলা, নষ্ট ব্যবসায়ী হলে বছরে ১৬ শ কোটি টাকা মারলেও কেউ তাদের ধরতে পারতো না। যাই হোক, দেশে কোন ক্ষেত্রে অধ্যবসায় এর দাম নেই। নিদেন পক্ষে এই অধ্যবসায় এর জন্যে ওদের সাধুবাদ জানাই!

জিকো চোরের প্রতিভা ঢাকা শহরের রোডম্যাপ ঠিক করার কাজে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন:

সুড়ঙ্গ বানাইয়া ১৬ কোটি টাকা যে নিসে তারে গ্রেফতার কইরা জেলে রাখার দরকার নাই। ঢাকা শহরের রোডম্যাপ ঠিক করার কাজে তারে দেওয়া হউক। সে একাই কয়েকটা আন্ডারপাস বানায় দিবে।

পোস্টটি লিখতে সহায়তা করেছেন কাজী প্রত্যয় এবং অপালা সেনগুপ্তা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .