ভারতের আম আদমি পার্টির দিল্লির জনতার হৃদয় জয় এবং সরকার গঠন

Arvind Kerjiwal, leader of Aam Aadmi Party addressing  a crowd. Image by Rohit Gautam. Copyright Demotix (10/6/2013)

জনতার উদ্দেশ্য ভাষণ দিচ্ছে আম আদমি দলের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ছবি রোহিত গৌতমের। কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১০/৬/২০১৩)।

ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক আলোচিত দল ঝড় তুলেছে, যার নাম আম আদমি পার্টি । দলটি দিল্লিতে সরকার গঠনে জাতীয় কংগ্রেস-এর গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন লাভ করেছে।

আম আদমি পার্টির (সাধারণ জনতার দল, যার সংক্ষেপিত রূপ এপিপি) নেতৃত্বে রয়েছে দূর্নীতি বিরোধী যোদ্ধা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, যা ৪ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত দিল্লি রাজ্যসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভুত হয় এবং দলটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের হিসেবে পাল্টে দেয়, যারা এই নির্বাচনে তৃতীয় স্থান লাভ করে, আর এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দিল্লির প্রাদেশিক সরকার হিসেবে দলটির ১৫ বছরের শাসনের ইতি ঘটে।

প্রথম দফায় কোন দল সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে, জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে আম আদমি পার্টি ৩৬ জন সংসদের সমর্থন অর্জনে সক্ষম হয়, যা ছিল দিল্লি রাজ্য সভায় সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন। কেজরিওয়াল যার বয়স ৪৫ বছর, তিনি হলেন দিল্লির সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী এবং দিল্লির জনতার সমস্যা সমাধানে এক পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য তাকে দশ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

সংসদে,২ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত আস্থা ভোটে এপিপির ২৮ জন, কংগ্রেসের সাতজন, জেডি (ইউ) দলের সংসদ সদস্য এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী দলটির পক্ষে ভোট দেয় এবং কেজরিওয়াল ও তার দলের জয় নিশ্চিত করে। ভোটের পূর্বে কেজরিওয়াল তার এক ভাষণে এপিপি এবং সাধারণ জনতার বিষয়টিকে ভালভাবে উপস্থাপন করেন:

সাধারণ জনতা কে? এপিপি বিশ্বাস করে যে মধ্যবিত্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষের অংশ; এই দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থাতে ক্লান্ত যে কেউ একজন সাধারণ নাগরিক।

আমি জেনেছি যে দিল্লিতে ঠাণ্ডায় দুজন নাগরিক মারা গেছে। স্বাধীনতার পর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, আর যদি এই সব টাকা ঠিকমত ব্যায় করা হত তাহলে হয়ত এই ধরনের বিষয়গুলো এড়ানো যেত। ব্যায় করা সেই সমস্ত টাকা কোথায় গেছে? সাধারণ জনতা তা জানতে চায়। আমাদের এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে হবে যে এই দেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে।

তার এই ভাষণ টুইটারে বেশ আলোচনার জন্ম দেয়:

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ভাষণ শুনে চোখে পানি চলে এসেছে। আজ থেকে আমি প্রতিজ্ঞা করলাম যে কোন অবস্থাতে আমি আম আদমি পার্টিকে ভোট দেব ও তাদেরকে সমর্থন করব। অন্য সব দল গোল্লায় যাক।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ভাষণ দেখছিলাম। ২০১৪ সালকে অনেক প্রাণবন্ত মনে হচ্ছে। এক উন্নত ভারত আশা করছি।

এনডিটিভিতে আমির খান; অন্য দল যখন সাধারণত বলে তোমরা আমাকে ভোট দাও, আমরা তোমাদের হয়ে শাসন করব, সেখানে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলছে আমাকে ভোট দিলে আমি তোমাদের শাসনব্যবস্থা চালু করব।

আম আদমি পার্টি সামনে চলে আসায় প্রচলিত সব রাজনৈতিক দলগুলোকে এই রকম প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হতে দেখে বেশ অবাক লাগছে।

ভারতের সকল তরুণ ও প্রবীণ নাগরিকবৃন্দ, নিজেকে আন্তরিক ভাবে প্রশ্ন করুন; স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সংসদে কেউ কি এই বিষয়টি উত্থাপন করেছে বলে শুনেছেন কি।

আম আদমি পার্টির কারণে এখন নাগরিকরা ক্রিকেটের চেয়ে রাজনীতিতে বেশী আগ্রহ দেখাচ্ছে।

আম আদমি পার্টির কারণে ২০১৪ সাল, রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন কিছু আনতে যাচ্ছে।

তবে শমিত মনচান্দা আম আদমি পার্টির ১০ ডিসেম্বরের ঘোষণাপত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন,যেখানে বলা হয়েছিল যে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তারা বিজেপি বা কংগ্রেসকে সমর্থন করবে না বা বিকল্প হিসেবে তাদের সমর্থনে নিজেরা সরকার গঠন করবে না:

আম আদমি পার্টির আমি একজন সমর্থক। যে বিষয়টি বেদনাদায়ক তা হচ্ছে নির্বাচন পূর্বে দলটি ঘোষণা প্রদান করেছিল যে সরকার গঠনে তারা বিজেপি অথবা কংগ্রেসকে সমর্থন প্রদান করবে না, কিংবা এই বিষয়ে তাদের কাছ থেকে কোন সমর্থন গ্রহণ করবে না। তাহলে কেন তারা আমার বিশ্বাসে আঘাত করল।

যখন আম আদমি পার্টির ১৮ টি দাবীর বেশীর ভাগ দাবী কংগ্রেস সমর্থন করে এবং সরকার গঠনে দলটিকে সাহায্য করার প্রস্তাব প্রদান করে, তখন আম আদমি এই বিষয়ে জনমত যাচাই করার চেষ্টা করে ইতিবাচক সাড়া লাভ করে। দলটি উল্লেখ করছে যে “আমরা কোন রাজনৈতিক দল নই, আমরা জনতার প্রতিনিধি”। সংবাদ জানা গেছে গত তিন সপ্তাহে সারা ভারতে আম আদমি ৫০০,০০০ জন নতুন সদস্য লাভ করেছে এবং ৩০০টি অফিস স্থাপন করেছে, আর এখন তাদের লক্ষ্য সারা ভারত জুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া ২০১৪ সালের লোকসভা বা জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .