৫ জানুয়ারি ২০১৪-এ বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন [2]। নির্বাচনে ভোটারদের আশানুরূপ উপস্থিতি ছিল না [3]। নির্বাচনী সহিংসতায় সারাদেশে ১৮ জনের বেশী জন নিহত [4] হয়েছেন এবং অনেকে আহত হয়েছেন [5]।
বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদল এই নির্বাচন বর্জন করেছে [6]। তারা নির্বাচন ঠেকানোর জন্য সহিংস কর্মকাণ্ড [7] চালায়। নির্বাচনের আগের দিন আগুনে পুড়ে যায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান [8]।
৪০০টিরও বেশী ভোটকেন্দ্রে ভোট স্থগিত রয়েছে। এখন ভোট গণনা চলছে এবং ফল আসা শুরু হয়েছে (এই সাইটে সর্বশেষ ফলাফল [9] দেখা যাবে)।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। সেবার ভোটার উপস্থিতি ছিল ৮৭%। সে তুলনায় এবারে ভোটার উপস্থিতি খুব কম। নির্বাচন কমিশন ৪০% ভোটার উপস্থিতির কথা [10] জানিয়েছে। তবে বেসরকারি কিছু মানবাধিকার ও নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ভোট [11] পড়ার কথা বলেছে।
এবারের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে ব্লগার অমি রহমান পিয়াল [12] লিখেছেন:
সংবাদমাধ্যম খুব ফলাও করে সন্ত্রাসের খবর প্রচার করছে, আবার বলছে এই নির্বাচন একটা প্রহসনের নির্বাচন কারন মানুষ এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেনা। কিন্তু কেউ বলছেনা আসল কথা – এতো সন্ত্রাসের মধ্যে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পরেছে, জামাত-বিএনপি রাষ্ট্রযন্ত্রের উপর প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়ে আক্রমন চালাচ্ছে। এই অবস্থায় মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাবে কেমন করে? সাংবাদিকেরা এই সহজ জিনিসটা বুঝেনা এরকম ভাবার কোন কারন নেই।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটারের উপস্থিতি বিভিন্ন দেখা গেছে। কোনখানে উপস্থিতি গতানুগতিক আবার কোন কোন স্থানে ভোটার খুবই কম ছিল।
বিরোধীদল দাবি করেছে, ভোটাররা এই নির্বাচন প্রত্যাখান [15] করেছে। তবে সাংবাদিক নঈম তারিক [16] বিরোধীদলের প্রতি অভিযোগ আনলেন ভোটারদের স্বেচ্ছায় ভোটকেন্দ্রে যেতে না দেয়ার:
নির্বাচন প্রতিহত করতে আপনারা স্কুলগুলো জ্বালিয়ে দিলেন; আগুনে ঝলসে মারলেন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে; ভোটারদের আতঙ্কিত-সন্ত্রস্ত করে বাধ্য করলেন কেন্দ্র না যেতে। তারপরও কিভাবে দাবি করবেন যে, মানুষ এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে? তাদের তো স্বেচ্ছায় ভোট কেন্দ্রে না যাবার সিদ্ধান্ত নিতেও দিলেন না!
ভোট দেয়ার অভিযোগে ভোটারদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। শন আহমেদ (@uncultured [17]) টুইট করেছেন:
In the district where The John Green School is, Muslim extremists beat a man to death and injured a few others. The victims' crime? Voting.
— Shawn Ahmed (@uncultured) January 5, 2014 [18]
জন গ্রিন স্কুল যে জেলায়, সেখানে মুসলিম উগ্রপন্থীরা একজনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আরো কয়েকজনকে আহত করেছে। তাদের একটাই অপরাধ, তারা ভোট দিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে নারী ভোটারদের উপস্থিতিও খুব কম ছিল। তবে এতো সহিংসতার মাঝেও ৮৫ বছর বয়সী একজন নারী ভোটার ভোট দিতে আসার কথা জানিয়েছেন অনন্ত আকাশ (@Ashtala [19]):
85 years old Mrs. Sahera gave her vote for prosperous #Bangladesh [20]! #JoyBangla [21] pic: @banglanews24com [22] pic.twitter.com/P2f9rAC2FG [23]
— Ononto Akash (@Ashtala) January 5, 2014 [24]
৮৫ বছর বয়সী মিসেস শাহেরা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার জন্য ভোট দিলেন।
বিরোধীদল নির্বাচন বয়কট করায় ১৫৪ জন প্রার্থী [25] বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই অনেক আসনে ভোট হচ্ছে না। অনেক ভোটার তাদের ভোট দিতে পারছেন না। অনেকে তাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের একজন অমিয় আতাহার (@amiya23 [26])। ভোট দিতে না পারায় তিনি লিখেছেন:
I was so excited to have gotten my National ID, just so I could #vote [27]. This joke of an #election [28] aside, God knows when I'll be able to vote.
— Amiya Atahar (@amiya23) January 5, 2014 [29]
জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম, এটা দিয়ে আমি আমার ভোট দিতে পারবো। নির্বাচন এবার কৌতুকে পরিণত হয়েছে। আল্লায় জানেন, কবে আবার ভোট দিতে পারবো।
বিরোধীদল বিহীন নির্বাচনেও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। টুইটার ব্যবহারকারী রজব আলী (@rojob_ali [30]) লিখেছেন:
#5January [31] election drama ,children r giving vote to cast by #AL [32] due to voter was not present #SAVEBANGLADESH [33] pic.twitter.com/L33qdFoweE [34]
— Soldier Rojob Ali (@rojob_ali) January 5, 2014 [35]
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের নাটক। শিশুরাও ভোট দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল না।
ব্লগার রেজাউর রহমান রিজভী (@rizvi23 [36]) বিরোধীদল বিহীন নির্বাচনে জাল ভোটের দরকার ছিল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন:
একতরফা নির্বাচনেও যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরাই জিতবেন, তবুও কেন সারা দেশ জুড়ে জাল ভোটের এমন মহোৎসব হলো?… http://t.co/T1jOBgBMTZ [37]
— Rezaur Rahman Rizvi (@rizvi23) January 5, 2014 [38]
এদিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সারাদেশে সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল [39] ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল। এতে করে নতুন করে রাজনৈতিক সহিংসতার আশংকা করছেন দেশের সাধারণ মানুষ।
ইংরেজী দৈনিক ঢাকা ট্রিবিউনের একটি সম্পাদকীয়তে [40] বলা হয় এই নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা এবং ভবিষ্যৎের আশা সম্পর্কে:
The holding of today’s 10th parliamentary election in the absence of the main opposition party can only be justified on the basis of constitutional necessity. The results cannot and should not be viewed as a mandate to rule for a full term. [..]
We acknowledge that today’s elections neither resolve the political crisis nor bring an end to the issue of representative elections that are the people’s right. We call on both AL and BNP to move forward together to give the people elections acceptable to all.
বিরোধীদল-বিহীন আজকের ১০ম সংসদীয় নির্বাচন কে একমাত্র এই বলেই জায়েজ করা যায় যে এর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ছিল। এই ফলাফলকে অবশ্যই পুরো পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেট হিসেবে চিন্তা করলে হবে না। [..]
আমাদের স্বীকার করতে হবে যে এই নির্বাচন বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কোন সমাধান আনে না – একইভাবে জনগণের সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকারও প্রতিষ্ঠা করে না। আমরা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয়কেই অনুরোধ করছি যে সমঝোতায় এসে জনগণকে তারা একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিক।
সংকট এড়াতে তাই অনেকেই চাইছেন সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সাংবাদিক জ ই মামুন [41] বিরোধীদলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর নির্বাচনের আশা প্রকাশ করে লিখেছেন:
[…] নির্বাচন এদেশে ঈদের মতো ফূর্তি, আমরা সেরকম একটি ফূর্তির নির্বাচনের অপেক্ষায় রইলাম। আর শুভ কাজ যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল, শুভশ্য শীঘ্রম!