তুর্কমেনিস্তান: মানবাধিকার? কিসের মানবাধিকার?

২০১৩ সালের শুরুতে মানবাধিকার এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা সম্পর্কিত খবরে সমৃদ্ধ হয়ে তুর্কমেনিস্তান আরো একবার আন্তর্জাতিক পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছে। ৪ঠা জানুয়ারি তারিখে দেশটি তার প্রথম মিডিয়া আইন প্রণয়ন করেছে [রুশ ভাষায়] যাকে গ্লোবাল মিডিয়া পর্যবেক্ষক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ‘কাল্পনিক’ অভিহিত করেছে

এটা সম্ভবতঃ এই শিরোনামেরই যোগ্য, কারণ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত বছর রিপোর্টে করেছে বাস্তবতার চেয়ে কাগজে-কলমে স্বাধীন মিডিয়ার সঙ্গে তুর্কমেনিস্তানের সম্পর্ক ভাল:

I২০১১ সালের আগস্টে বার্দিমুখামেদভ কেবল টেলিভিশনকে স্যাটেলাইট ডিশে পরিবর্তনের আদেশ দিয়েছেন। আদেশটি কার্যকর হলে তথ্যে দর্শকদের প্রবেশাধিকার – বিশেষতঃ বিদেশী অনুষ্ঠানসমূহ – উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে, কারণ যে কোনোভাবেই হোক সরকার কেবল টেলিভিশন সম্প্রচারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। একটি আন্তর্জাতিক হৈ চৈ এর কারণে ২০০৭ সালে বার্দিমুখামেদভের স্যাটেলাইট ডিশ বন্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টাটি ব্যর্থ হয়েছে।

তুর্কমেনিস্তানের বেশিরভাগ নেটনাগরিকদের মধ্যে এই ধারণাটিই বিরাজ করে। তারা বিশ্বাস করে যে মিডিয়ার স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার কাস্পিয়ান রাষ্ট্রটিতে সাধারণভাবে ‘কাল্পনিক’ ছাড়া আর কিছুই নয়। Chrono-TM.org এর একটি সংবাদ প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পাঠক ‘জেমলিয়াচকা’ সমসাময়িক তুর্কমেনিস্তানে মানবাধিকারের ধারণার আদৌ অস্তিত্ব রয়েছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন [রুশ ভাষায়]:

Однажды моего знакомого спросили в американском посольстве в Туркменистане: «Как вы относитесь к тому,что в Туркменистане нарушаются права человека?». На что он ответил: «Как можно нарушать то,чего НЕТ»

তুর্কমেনিস্তানের মার্কিন দূতাবাস একবার আমার এক বন্ধুকে প্রশ্ন করেছিল: “তুর্কমেনিস্তানে মানবাধিকার লংঘন সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন? তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন: “যার অস্তিত্ব নেই সেটা আপনি লংঘন করবেন কিভাবে?”

ফ্রিডম হাউস ঘোষিত বিশ্বের “নিকৃষ্টদের মধ্যে নিকৃষ্টতম” মানবাধিকার লংঘনকারী দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত তুর্কমেনিস্তানের একটি নিজস্ব জাতীয় গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আরেকজন পাঠক ‘৪৫% বনাম তেনি’ দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে পশ্চিমী দেশগুলোর অনেকটা দায়সারা প্রচেষ্টা নিয়ে বিলাপ করেছেন  [রুশ ভাষায়]:

Не чего они [западные страны] не решат… Курбангулы Президент умный. У него с Америкой, с Западом и с России все ОК, он все их условия выполняет, пока у него с ними все намази никто Туркменистан не в чем не обвинит. Если президент обидет Запад или Америку вод тогда ТОЛК БУДЕТ. А я уверен что он будет им Ж…. лизат как надо.

তারা [পশ্চিমী দেশগুলো] কোনো [মানবাধিকার সমস্যার] সমাধান করবে না… গুরবঙ্গুয়ে [বার্দিমুহাম্মাদভ] একজন করিৎকর্মা রাষ্ট্রপতি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,  রাশিয়া এবং পশ্চিমের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে; তিনি তাদের সকল চাহিদা পূরণ করেন; তাদের [এই দেশগুলির] সঙ্গে তার সম্পর্ক যতক্ষণ ভাল, কেউ তাকে কিছুর জন্যে দুষবে না। রাষ্ট্রপ্রধান পশ্চিমাদের বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করলে তখন অবশ্যই কিছু একটা ঘটবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে তিনি তাদের পাছা চুম্বন করতেই থাকবেন।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এবং ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা একটি ছবি তুলেছেন গুরবঙ্গুয়ে বার্দিমুহাম্মাদভের সঙ্গে, ফ্রিডম হাউস (নিউ ইয়র্ক, ২০০৯) অনুসারে যিনি “নিকৃষ্টদের মধ্যে নিকৃষ্টতম” মানবাধিকার লংঘনকারী দেশের রাষ্ট্রপতি। ছবিটি পাবলিক ডোমেইনে রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বার্দিমুহাম্মাদভ রুশ নেতা দিমিত্রি মেদভেদেভ এবং কাজাখ রাষ্ট্রপতি নুরসুলতান নজরবায়েভের সঙ্গে, ২০০৯ সাল। রুশ রাষ্ট্রপতির কার্যালয়,  উইকিপিডিয়ার (সিসি বাই-৩.০) মাধ্যমে পাওয়া।

এছাড়াও তুর্কমেন ভিন্নমতাবলম্বী কণ্ঠগুলোও দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার ব্যাপারে মনযোগ দিয়েছে। তারা দাবি করেছে যে অত্যাচারী রাষ্ট্রটি তার যেসব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে পছন্দ করে না তাদেরকে ‘চরমপন্থী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। ফুচিক স্মরণ করেছেন  [রুশ ভাষায়] রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর চরেরা কিভাবে একবার তাকে একটি ‘ওয়াহাবি‘ গোষ্ঠীর সদস্যপদের দায়ে অভিযুক্ত করেছিল:

В 2006 году, в конце правления Туркменбаши, на меня наехало МНБ [Министерство национальной безопасности] с обвинениями в…ваххабизме- на основании только того, что я знаю арабский и работаю у арабов… Не уверена, что господа из министерства национальной безопасности вообще понимали, что такое ваххабизм.

তুর্কমেনবাসি’র [রাষ্ট্রপতি সাপারমুরাত নিয়াজভ] শাসনের শেষের দিকে ২০০৬ সালে এমএনডি [জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়] কর্মকর্তারা আমাকে অভিযুক্ত করে… ওয়াহাবীপন্থার দায়ে, আমি আরবিতে কথা বলি এবং আরবদের জন্যে কাজ করি বলে…  আমি নিশ্চিত নই মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা ওয়াহাবীপন্থা কী সেটা আদৌ বুঝে কিনা।

কিন্তু নেটনাগরিকরা সবসময় সার্বিকভাবে বৃহত্তর স্বাধীনতার জন্যে যুক্তি করে না। এমনি সরকারের চালু করা মন্ত্র যে “গণতন্ত্র রাতারাতি আসে না” – বা এমনকি স্বাধীন অস্তিত্বের বিশ বছর পরেও না – অনেকেই যে অবস্থানটি মিডিয়া এবং অন্যান্য স্বাধীনতার ব্যাপারে গ্রহণ করেছে।

জাতিসংঘে তুর্কমেনিস্তানের সর্বশেষ ব্যাপক মানবাধিকার প্রতিবেদন দাখিল সম্পর্কিত একটি ভিডিওতে কয়েকজন ব্যবহারকারী দেশটিতে মিডিয়া বিধিনিষেধ নিয়ে যুক্তি-তর্ক করেছে। একজন ব্যবহারকারী  ‘এমির৩৮৩৯’ যুক্তি করেছেন [রুশ ভাষায়] যে তুর্কমেন সরকারের ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ জনিত কারণে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের একটি ‘সার্বভৌম অধিকার’ রয়েছে:

сайты во всех цивилизованных странах мира контролируются и при надобности блокируются. если правительство Т-ана решило, что те или иные сайты могут нести опасность целостности или безопасности Т-ана, то это их суверенное право обезопасить себя и своих граждан.

দুনিয়ার সকল সভ্য রাষ্ট্র ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজন হলে সেগুলোর কোন কোনটি অবরুদ্ধ করে। তুর্কমেনিস্তান সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে নির্দিষ্ট কতগুলো ওয়েবসাইট তুর্কমেনিস্তানের অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তার জন্যে হুমকি তৈরী করছে তাহলে [ওয়েবসাইট বন্ধ করে] এটা [দেশ] এবং তার নাগরিকদের রক্ষা করা তাদের সার্বভৌম অধিকার।

তুর্কমেনিস্তানের সঙ্গে জ্বালানী সহযোগিতার সম্ভাবনার কথা সারাক্ষণ ওয়াশিংটন এবং ব্রাসেলসের নীতিনির্ধারকদের মাথায় থাকায় পশ্চিম হয়তো সম্মতির সঙ্গে মাথা নোয়াবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .