কম্বোডিয়াতে ধর্ষিতারাই অভিযুক্ত

গণধর্ষণের শিকার অল্পবয়স্ক একজন নারীর মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় ভারতে ব্যাপক ক্ষোভ এবং প্রতিবাদ হলেও এর বিপরীত পরিস্থিতি কম্বোডিয়াতে, সেখানে ধর্ষণের ক্ষেত্রে জনগণের হৈচৈ সামান্যই।

কম্বোডিয়ার মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থা (এডহক) ২০১১ সালে ৪৬৭টি এবং ২০১২ সালে ৩২০টি ধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত করলেও ধর্ষণ মামলাগুলো কম গুরুত্ব পেয়েছে। যে দেশে ধর্ষণের অভিযোগ কদাচিৎই করা হয়ে থাকে সেখানে এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে।

গোষ্ঠীটির মতে, ধর্ষণের ক্ষেত্রে অপরাধীরা এর শিকারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব দিতে পারে বলে এই মামলাগুলো প্রায়ই আদালতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। এছাড়াও কম্বোডীয় মানবাধিকার কেন্দ্র (সিসিএইচআর) একটি সত্য তুলে ধরেছে যে মে ২০১০ থেকে মে ২০১১ তারিখ পর্যন্ত তাদের নথিভুক্ত ২৫০টি ধর্ষণ মামলার মধ্যে ৫৩টির ক্ষেত্রে ধর্ষণের অপরাধীরা পরিবারের একজন সদস্যকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে

কম্বোডিয়াতে ধর্ষণের মানচিত্রায়ণ। ছবিটি সিথি থেকে নেওয়া।

সবচেয়ে খারাপ, কিছু কিছু আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা হচ্ছে ধর্ষিত হওয়ার জন্যে এর শিকারদেরই দুষছে। কান্দাল প্রদেশের কিয়েন স্ভে জেলার একটি কলা বাগানের মধ্যে ধর্ষিতা একজন ১৯ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী মহিলার সাম্প্রতিক একটি মামলার ক্ষেত্রে, জেলা পুলিশ প্রধান প্যাম স্যাম এথ বলেছেন:

সে ধর্ষিত হওয়ার সময় রাত নয়টা বেজে গিয়েছিল। তার এতক্ষণ বাইরে থাকা উচিৎ হয়নি।

ধর্ষণের ঘটনার মখোমুখি হওয়ার পর কিছু কিছু সরকারী কর্মকর্তাদের এধরনের মন্তব্যে তাদের মনোভাব প্রতিফলিত হয়; এবং এটা শিকারদের সঠিক সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সহায়তা চাইতে বাঁধা প্রদান করে। দুঃখজনকভাবে, এই মনোভাবটি শুধুমাত্র একটি জেলায় সীমাবদ্ধ নয় এবং সরকারী কর্মকর্তারা এধরনের মন্তব্য উচ্চারণ করেছে বলে অভিযোগের কয়েকটি দৃষ্টান্ত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খেমার মহিলাদেরকে আরো নম্রভাবে কাপড়-চোপড় পরিধানের আহবান জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসা শতাধিক মানু্ষের একটি সমাবেশকে সমর্থন করেছেন বলে জানা গিয়েছে:

সংক্ষিপ্ত স্কার্ট এবং যৌন আবেদনময় পোশাক পরার ফলে ধর্ষণ সঙ্ঘটিত হয়। কারণ সাদা চামড়া দেখার সঙ্গে সঙ্গে সব পুরুষদের যৌন সঙ্গম করার কথা মনে হয়।

‘কম্বোডিয়াতে ধর্ষণ ও আইনি শাস্তি’ সম্পর্কে ‘ইকুইটিক্যাম’ এর ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি

কম্বোডীয় দৈনিকের জন্যে লিখতে গিয়ে কম্বোডিয়াতে ধর্ষণের ঘটনার ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বিষয়ে সতর্কবাণী প্রদান করা এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ২০১০ সালের একটি প্রতিবেদনকে উদ্বৃত করেছেন মেক দারা এবং ডেনিজ রহবি

দায় মুক্তি এবং ব্যাপক দুর্নীতির একটি সংস্কৃতির মধ্যে কম্বোডিয়াতে যৌন সহিংসতায় আক্রান্তদের ন্যায়বিচার প্রায়ই অস্বীকৃত হয়;  স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য অনানুষ্ঠানিক ফি দিতে কষ্ট ভোগ করতে হয়; এবং সহায়তা ও সমর্থন পেতে যুদ্ধ করতে হয়। সাধারণভাবে, পুলিশ এবং আদালত কর্মীসহ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা বেআইনীভাবে আক্রান্ত এবং অপরাধীদের (বা তাদের পরিবারের) মধ্যে আদালত বহির্ভূত টাকা-পয়সা লেন-দেন করে থাকে।

কার্যকর তদন্ত ও বিচারের অভাব আক্রান্তদের আরো ক্ষতি করে। এতে তারা অতিরিক্ত মানসিক যন্ত্রণা এবং একটি সম্ভ্রমহানির অনুভূতিসহ প্রায়ই ভয়ে থাকে না জানি অপরাধী মুক্তি পেয়ে তাদেরকে আবার  আক্রমণ করে। অপরাধের বিচার ব্যবস্থাসহ কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাগুলো প্রশ্নাতীত থেকে গিয়ে প্রাথমিক নির্যাতনেরই একটি প্রলম্বিত অংশ বনে যায়।

নথিভুক্ত আরেকটি বৈষম্যমূলক বিবৃতি হলো ২০০৯ সালে নম পেনের গভর্নরের রাত ৯টার পরে ১৬ বছরের কম বয়সী মেয়েদের একাকী বেরুনো বন্ধের প্রস্তাব। তার বিশ্বাস যে অল্পবয়সী মেয়েদের শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করা যেতে পারে এমন ক্লাব, কারাওকে বার বা অন্যান্য বিনোদনের জায়গায় দেখা যেতে। তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন যে সমাজে ভাল নৈতিকতা চালু করাই এই প্রস্তাবটির উদ্দেশ্য। তবে, অনেকেই প্রস্তাবিত মেয়েদের কারফিউটির সমালোচনা করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নিছক আক্রান্তদের দোষারোপ না করে আইন প্রয়োগের প্রতি মনযোগ দিতে বলেছেন।

নারীদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব (সিসিএইচআর এই নথিবদ্ধকরণের সময় ধর্ষণের কোন পুরুষ শিকার অথবা কোন মহিলা অপরাধীর কোনো দৃষ্টান্তের সম্মুখীন হয়নি) নারীদেরকে আরো ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। এটা সরকারের ‘নারীরা জাতির মেরুদণ্ড’ ঘোষণা র সঙ্গে বিরোধাত্মক।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .