বাংলাদেশ: পুলিশ বিক্ষোভ সমাবেশ দমনে ‘পিপার স্প্রে’ ব্যবহার করেছে

বাংলাদেশের পুলিশ বিক্ষোভ সমাবেশ দমনে প্রথমবারের মতো ‘পিপার স্প্রে’ (মরিচের স্প্রে) ব্যবহার করেছে। আর এটা করা হয়েছে এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর। পরে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদের ডাকা বামপন্থীদের হরতালেও এই স্প্রে প্রয়োগ করা হয়েছে। ব্লগার অমৃত সুধা তার ব্লগে জানিয়েছেন, ‘পিপার স্প্রে’-তে অসুস্থ হয়ে একজন শিক্ষক ইতোমধ্যে মারা গেছেন।

পুলিশের ‘পিপার স্প্রে’র ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, নেটিজেন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও ‘পিপার স্প্রে’ ব্যবহারের সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।

এমপিওভুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের ‘পিপার স্প্রে’ নিক্ষেপ। ছবি রেহমান আসাদ। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স।

মেহেদী হাসান খান সচলায়তন ব্লগে বিদেশে “পিপার স্প্রে” ব্যবহার, এর ক্ষতিকর দিক ও বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোকপাত করেছেন।

ব্লগার দিকদর্শন সামহোয়্যারইন ব্লগে লিখেছেন:

সকল রাজনৈতিক পক্ষকেই বুঝতে হবে, দমন-পীড়নের নামে দেশে কখনও এমন কোন ক্ষতিকারক কালচার তৈরী করা ঠিক হবে না, যা বুমেরাং হতে পারে।

ব্লগার তাওহীদ এটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন:

সরকার কোন বিবেচনায় এটা আমদানি করেছে, তা বোধগম্য নয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম দমনে এ ধরনের ক্ষতিকর তরল গ্যাসের ব্যবহার অবিলম্বে বন্ধ ও এটি নিষিদ্ধ করতে হবে।

‘পিপার স্প্রে’ নিষিদ্ধ না হওয়ার অনিশ্চয়তা নিয়ে আলোর সন্ধানে পিপলস ব্লগে বলেন:

আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করবে কিভাবে? যাদের তা করার দায়িত্ব তারাই করছে এর অবাধ ব্যবহার।

ব্লগার, অ্যাকটিভিস্ট কল্লোল মুস্তাফা তার ফেসবুক পেজে লিখেন:

জনগণের আন্দোলন সংগ্রাম দমনের কাজে এই স্প্রে ব্যাবহার করে সরকার জনগণের বিরুদ্ধে রীতিমত রাসায়নিক যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর কতজন মরলে, কতজনের চোখ নষ্ট হলে এই যুদ্ধের অবসান হবে?

স্বপ্নচারী স্যাটায়ার করে টু্ইটারে লিখেন:

@স্বপ্নচারী: মরিচের গুঁড়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য হাতিয়ার।

আলী আসিফ শাওনও টু্ইটারে স্যাটায়ার করেছেন:

@ওআরকেআসিফ: ভালোবাসার পিপার স্প্রে চারপাশে, বাঁচতে চাইলে মাস্ক লাগিয়ে চলাফেরায় উত্তম…!

তবে াহো ‘পিপার স্প্রে’ ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন:

বেসরকারি নন-এমপিও ভূক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে পেপার স্প্রে ব্যবহার না করে যদি পুলিশ লাঠি চার্জ করত তাহলে শিক্ষকরা আহত হত, হাসপাতালে যেত এবং তাদের কেউ কেউ মারাও যেতে পারত। পেপার স্প্রে তাদের এই অবস্থা থেকে বাঁচিয়েছে। আর পুলিশ তথা সরকারও বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হয় নাই। অতএব, এই বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক করা অবাঞ্ছনীয়।

প্রশ্ন উঠেছে এই স্প্রে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে অনুমোদিত কি না! তবে দেশটির স্বরাষ্টমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর জানিয়েছেন, ‘পিপার স্প্রে’ অবৈধ সমাবেশ দমনে বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক কনভেশনে অনুমোদিত। তাই এ সম্পর্কে কোনো মত দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এদিকে ‘পিপার স্প্রে’ ব্যবহার বন্ধের জন্যে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন। মেহেদী হাসান খান বলছেন:

সন্ধ্যার খবরে জানা গেল ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেপার স্প্রে বন্ধ করার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সরকারের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী, কৃতজ্ঞতা থাকলো তার প্রতি। সেকেন্দার আলী আর ফিরবেন না, হতভাগা এই শিক্ষক মরে গিয়ে শেষ শিক্ষাটা দিয়ে গেছেন এই দেশের চোখ বুজে থাকা নীতিনির্ধারকদের। তারপরও কি আরো বেশি ক্ষতি হবার জন্য বসে থাকবেন তারা?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .