মিশরিয় নারীদের সাথে ঝামেলা নয়

ম্যারিয়ানি গাব্বানি হলেন মিশরে অবস্থানরত একজন কানাডিয় প্রবাসী ব্লগার। তিনি তাঁর ব্লগে একটি নতুন পোস্ট করেছেন যার শিরোনাম হলো, “মিশরিয় নারীদের সাথে ঝামেলা নয়”। তিনি যে গ্রামে বাস করেন সেখানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া দুটি গল্পের কথা ব্লগ পোস্টটিতে উল্লেখ করেছেন।

তাঁর গ্রামের নারীদের দেখে যে ধারণা হয়েছে তা দিয়ে তিনি তাঁর গল্প শুরু করেছেনঃ

আমার এলাকার নারীদের আমি গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। ভয়ঙ্কর কঠিন পরিস্থিতিতেও তাঁরা তাঁদের খামার, পরিবার ও ঘরের যত্ন করেন। কিন্তু কখনোই তাঁদের মুখের হাসি ও সাদর সম্ভাষণ ফুরায় না। অন্যের দুঃসময়ে হাত বাড়িয়ে দিতেও তাঁরা পিছপা হন না। তাঁরা তাঁদের পরিবারের জন্য ইস্পাত স্বরূপ। যখন এই হচ্ছে দেশটির ঐতিহ্যগত এবং কঠোর ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি অংশ, তখন এই নারীরাই আবার খুব বন্ধুভাবাপন্ন ও সহজেই সব কিছু মানিয়ে নিতে সক্ষম। আমার মতো অতি ঐতিহ্যহীন বয়স্ক একজন কানাডিয় নারীর কাছে তাঁরা সবসময়ই হাসি ও আনন্দের যোগানদাতা।

তাঁর প্রতিবেশীদের অনেকেই যারা মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসন সমর্থন করেন না তাঁদের কাছ থেকে শোনা গল্পটি তিনি বলছেনঃ

একজন প্রতিবেশী আমাকে বললেন প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য কীভাবে প্রতিবাদকারীদের বাসে করে হেলিওপোলিস (কায়রোর একটি এলাকা) নিয়ে যায়। প্রাসাদটি কয়েক সপ্তাহ আগে রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিলো। আমার চারপাশের কয়েকজন মা তাঁদের ছেলেদের জানালেন, যদি কেউ বাসটি শহরের ভিতরে নিয়ে যেতে চায় তাহলে তাঁরা তা করতে পারে। কিন্তু সেখানে ফিরে আসা যাবে না।

পরের গল্পটি আট জন সদস্যের একটি ছোট নতুন ধর্মীয় দল সম্পর্কে। তাঁরা স্থানীয়দের আরও “উপযুক্ত” ভাবে আচরণ করা শেখাতে চেয়েছিল। ম্যারিয়ানি বলেছেনঃ

দৃশ্যত: তাকফির ওয়াল হিগরা (সমাজচ্যুত ইহুদিদের মিসর থেকে প্রস্থান) দলটি আমাদের এলাকায় স্থানীয় লোকেদের আরও “উপযুক্ত” আচরণ শেখাতে কার্যক্রম শুরু করে। সংক্ষিপ্ত গালাবেয়াস (ঐতিহ্যবাহী পোষাক) পরা অবস্থায় তাঁদেরকে রাস্তায় হাটতে দেখা যেত। তাঁরা একটি মসজিদে ধর্মপ্রচারের কাজ শুরু করে এবং সুসংগঠিত হওয়ার জন্য আবু সারে একটি অফিস নেয়। এক সপ্তাহ বা তার কিছু আগে ঐ আটজনের দলটি আবু সারের প্রধান সৌক (উন্মুক্ত বাজার) এ গিয়েছিল। সেখানে ঢোকার সময়ে তাঁরা খেয়াল করেন, একজন মহিলা তাঁর সন্তানকে পাশে নিয়ে বসে আছেন। গালাবেয়ারের ফাঁক দিয়ে তাঁর পায়ের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে। খুবই রুঢ়ভাবে মহিলার পায়ে লাথি মেরে তাঁরা তাঁকে পা ঢাকতে ও আরও বেশী শালীন হতে বলে। এটি ছিল একটি বিরাট ভুল। কারণ যার সাথে এই ঘটনা ঘটেছিল সেই মহিলা ছিলেন সৌকটির নারীদের প্রধান এবং এই এলাকার একটি জনবহুল গোষ্ঠীর কয়েক হাজার সদস্যের একজন। তিনি সহ অন্যান্য মহিলারা একত্রে বাজারে সেই আটজন লোকের উপর আক্রমণ করেন। তাঁরা তাঁদের এতোটাই মারধর করেন যে শেষ পর্যন্ত তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল। এর জন্য লোকগুলো পুলিশের কাছে মামলা করতে গেলে পুলিশ তাঁদের মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে, তাঁরা সেই নারীদের সমর্থন করে… লোকগুলো কি পাগল? তাই আবু সারের তরুণেরা এখন সেই অফিসটাকে চা পানের জন্য ব্যবহার করে। সেই মসজিদটিতে এখন আর মৌলবাদী বক্তৃতা প্রদান করা হয় না। এর পরে তাকফির দলটিকে কেউ আর কিছু সময়ের জন্যও দেখতে পায়নি।

তিনি তাঁর পোস্টটি শেষে করেছেন নিচের বিষয়টি নিশ্চিত করেঃ

মিশরের ইসলামপন্থিদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে কাকে সমর্থন করতে হবে এটা ভেবে যদি কেউ হতাশ হন, তবে তাঁর জন্য উত্তর আছে। আমি এ পর্যন্ত যতো শক্তিশালী নারী দেখেছি তাদের মধ্যে মিশরের নারীরা অন্যতম।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .