সিঙ্গাপুর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাখান করেছে

৩০ ঘন্টা সমুদ্রে এলামেলোভাবে ঘুরতে থাকার পর, ৫ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে ভিয়েতনামের জাহাজ এমভি নাসকো ভিক্টোরি ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদ্ধার করে। এর কয়েকদিন পরে জাহাজটি সিঙ্গাপুরে পৌঁছে, কিন্তু দেশটির সরকার উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানে অস্বীকার করে। সিঙ্গাপুরের নেট নাগরিক এবং মানবাধিকার সংস্থাসমূহ, শরণার্থীদের ফিরিয়ে দেবার সরকারি এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে।

মারুয়াহ সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে চরম সঙ্কটে পতিত এই সমস্ত নাগরিকদের সাথে মানবিক আচরণ করা উচিত:

সরকার–এর মন্ত্রণালয়, আমাদের সিঙ্গাপুর নামক আলোচনায় মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ স্থানে রেখে তার দ্বারা আপ্লুত; বিশেষ করে যখন এই বিষয়টি প্রয়োগ করা হচ্ছে যে রোহিঙ্গাদের সমুদ্রে ছেড়ে দিয়ে আসা হচ্ছে? সিঙ্গাপুরের ধারায় আমরা সমুদ্রে অবস্থানরত জাহাজের প্রতি আচরণ করব?

সিঙ্গাপুর যাতে আরো বেশী মানবিক এবং সহানুভূতিশীল সমাজে পরিণত হয় তার জন্য সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা সুস্পষ্টভাবে তাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে।

মায়ানমার সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া একদল রোহিঙ্গাদের একটি ক্যাম্প। ছবি অনিকেত-এর, কপিরাইট@ডেমোটিক্স-এর (১০/১৫/২০১২)

সিঙ্গাপুর ডেমোক্রেটিক পার্টি মনে করে যে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দেওয়া হত সঠিক সিদ্ধান্ত:

যেহেতু তাদের খাবার এবং চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন, সেই কারণে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল ভুল। সঠিক সিদ্ধান্ত হত তাদের সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা এবং তাদের শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পরে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো যেত।

সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা অনেক ধৈর্য্যশীল এক জাতি এবং যে সরকার আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছে, সে যেন অবশ্যই শীতল এবং নিষ্ঠুর না হয়, আর সরকার যেন সব কিছু বস্তুর মাপে হিসেব না করে।

এদিকে বিয়ার রোমা ফ্রি সরকারকে ‘নির্দয় হবার কারণে অভিযুক্ত করছে:

প্রথম বিশ্বের মর্যাদা পেতে সিঙ্গাপুরের সকল প্রচেষ্টা, এই ঘটনার মুলে কলঙ্কের কালি ঢেলে দিয়েছে। আমাদের সরকার এক হৃদয়হীন সরকার। মাত্র ৪০ জন শরণার্থী আর আমরা তাদের আশ্রয় প্রদান করতে পারলাম না? একবার আশ্রয় প্রদান করলে আগামীতে আরো আসবে এ রকম যুক্তির কথা ভুলে যান। এই ধরনের যুক্তির মানে হচ্ছে আপনারা স্বেচ্ছায় আরো ৪০ জন নাগরিককে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলেন, কারণ আপনারা এতটা আত্মবিশ্বাসী নন যে আপনারা আরো বেশী শরণার্থীকে গ্রহণ করতে সক্ষম।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের বিরুদ্ধে সরকারের যুক্তির বিষয়টি লিম্পেহ উন্মোচন করেছে:

…যখন আপনারা গণহত্যা অথবা যুদ্ধ থেকে পালাতে যান, আপনি কেবল পালাতে থাকেন এবং যেখানে যেতে চান সেখানে চলে যান, এটা কাজের সন্ধানে কোন উন্নত এলাকায় অভিবাসন নয়। এমনকি খুব সহজে-এর মানে, তাদের অস্থায়ী ভাবে আশ্রয় প্রদান করা-সেটাও কি আপনাদের জন্য খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে?

ফেসবুকে এই বিষয় নিয়ে দীর্ঘ এবং উত্তপ্ত এক মত বিনিময় হয়েছে:

ইএনজি প্যাট্রিক যখন জানা যাবে কেউ তাদের যত্ন নিয়েছে, তখন আমার হৃদয় আনন্দ অশ্রুতে পূর্ণ হয়ে যাবে। আমি মনে করি যে সিঙ্গাপুর তাদের কিছু সময়ের আশ্রয়স্থল হতে পারে, যতক্ষণ না তার অন্য কোথাও আশ্রয় পাচ্ছে। তাদের আশ্রয় না দেওয়ার ঘটনাটি বেদনাদায়ক।

সেড্রিক কখ তারা নিজস্ব ভূমি থেকে উচ্ছেদকৃত একদল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। আমরা যদি তাদের সাহায্য না করি, তাদের সমগ্র জাতি, তাদের সংস্কৃতি, তাদের জীবন ধরনের উপায়, সব কিছু ধ্বংস প্রাপ্ত হবে, আর এর বিপরীত আমরা তাদের আমরা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছি।

ডি জিন তোহ, তাদেরকে সাহায্য না করে আমরা বলছি না যে আমরা কোন কিছু এড়িয়ে যাচ্ছি না, তাদেরকে সাহায্য না করে আমরা বলছি যে আমরা তাদের সাহায্য করব না। এর চেয়ে বেশী কিছু নয়। বিশ্ব জুড়ে লক্ষ লক্ষ শরণার্থী, তাদেরকে সাহায্য না করার মানে কি এই যে আমরা যুদ্ধ, দাসত্ব, সংঘর্ষ, গণহত্যা, ইত্যাদি এড়িয়ে যাচ্ছি?

সবশেষে আরেকটি বিষয়, আমি ওই সমস্ত নাগরিকদের সাহায্য করার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু আমি তাদের এখানে প্রবেশ করতে দেওয়ার বিরুদ্ধে। তাদের কিছু খাদ্য এবং পানীয় দিন, এরপর তাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া আমার মতে একটা উত্তম পন্থা হতে পারে।

ফ্রাঙ্কিপিএনজি পৃথিবীতে এমন অনেক দেশ আছে, যাদের প্রচুর সম্পদ আছে, এমনকি তারা এই সমস্ত শরণার্থীদের গ্রহণ করে না। আমাদের সম্পদ এবং ভুমি নেই। কি ভাবে আমরা আমাদের দরজা উন্মুক্ত করব। তাদের খাদ্য এবং ওষুধ প্রদান করুন, ৮০ লক্ষ মানব বসতির একটা ছোট্ট দ্বীপের জন্য এটাই যথেষ্ট মহৎ উদ্যোগ। মানবতা অথবা যথাযথভাবে কাউকে খুশী করা খুব কঠিন।?

রাজনীতিবিদদের এভাবে শরণার্থীদের পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ডেসপারেটবিপ হতাশ:

সম্ভবত রাজনীতিবিদেরা এমন কিছু দেখেছে যা আমরা এখানে দেখিনি, কিন্তু যাদের আমরা সার্বিকভাবে সহানুভূতি প্রদান করেছি যা দৃশ্যত সার্বিকভাবে ভুল। যখন পশ্চিমারা যারা তাদের আবাস থেকে বিতাড়িত হয়েছিল তখন তারা সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের প্রতি আক্রোশ প্রদর্শন করার সিদ্ধান্ত। যখন নির্দয়ভাবে নাগরিকদের খুন হতে থাকার কারণে নাগরিকরা পালাতে থাকে, তখন আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে তারা আমাদের সহানুভূতির যোগ্য নয়। ঠিক নিশ্চিত নই, কোথা থেকে এই যুক্তির আগমন ঘটল।

সিঙ্গাপুরের এক টুইটার ব্যবহারকারী একই সাথে সরকারের এই সিদ্ধান্তে বেদনার্ত:

@চোটেমিইয়া৩ যদি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বহনকারী জাহাজকে ফিরিয়ে দেওয়ার সংবাদ যদি সত্য হয়, তাহলে নিজেকে সিঙ্গাপুরী হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করব।

রোহিঙ্গারা হচ্ছে এমন এক জাতি, মায়ানমারে যারা তাদের পরিচয়ের জন্য লড়াই করেছে। কিন্তু মায়ানমার সরকার বরাবরের মত রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানে অস্বীকার করছে। এ বছর পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন এবং রোহিঙ্গা গ্রামে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। রোহিঙ্গারা গণহত্যা এবং ধর্মীয় আক্রোশের শিকার হচ্ছে, যে বিষয়টি দেশটির সরকার অস্বীকার করছে।
সৌভাগ্যক্রমে মালয়েশিয়া ওই ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদানে স্বীকৃত হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .