- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনায় সারা ভারতে ক্ষোভের সৃষ্টি

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, আইন, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী

১৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারতের রাজধানী দক্ষিণ দিল্লিতে এক চলন্ত বাসে ২৩ বছরের এক তরুণীকে উপর সংঘঠিত প্রহার এবং গণধর্ষণের ঘটনা সারা ভারতকে হতভম্ব এবং ক্ষুব্ধ [1] করে তোলে।

এই ঘটনার শিকার তরুণী এবং তার পুরুষ সঙ্গীকে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়, তারপর তাদের বাস থেকে ছুঁড়ে,দিল্লির মাহিপালপুর ফ্লাইওভারের নীচে আধা-উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। এখন মারাত্মক আহত অবস্থায় মেয়েটি এখন হাসপাতালে অবস্থান করছে।

ঘটনার শিকার তরুণীটি এক ফিজিওথেরাপিস্ট এবং তার সঙ্গী একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার,তারা একটি চলচ্চিত্র দেখে ফেরার পথে [2] দ্বারকা নামক এলাকায় যাবার জন্য এক বিলাসবহুল ব্যক্তিগত বাস পায়, অভিযুক্ত বাস ড্রাইভার, সহ ছয়জন মিলে উক্ত তরুণীকে ধর্ষণ করে। পুলিশ বাসটিকে চিহ্নিত করেছে [3] এবং যে বাসে এই ঘটনা ঘটে সেটি আটক করেছে ও এর সাথে জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করেছ [4]

প্রতি বছর দিল্লিতে শত শত ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা করা হয় এবং এই ধরনের অজস্র ঘটনার সংবাদ চেপে যাওয়া হয়। ভারতে ধর্ষণকে নিষিদ্ধ বিষয় (ট্যাবু) হিসেবে দেখা হয়, যার ফলে এই ধরনের খুব কম ঘটনায় মামলা পর্যন্ত গড়ায়। এই ঘটনায় ভারতের রাজধানীর জন নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে [5]

ঘটনাটি ভারতের আলোচিত এক বিষয়ে পরিণত হয় এবং বিষয়টি সংসদেও আলোচিত হয়েছে [6]। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে বেশীর ভাগ আলোচনা হয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়।
মুনমুন ঘোষের টুইটার স্ট্যাটাস সম্ভবত বেশীর ভাগ নাগরিকের হতাশাকে ধারণ করেছে:

@মুনইনএ্যানফিল্ড [7] (মুন মুন ঘোষ): নারী হবার কারণে দিল্লিতে বাস করার ক্ষেত্রে আমি আতঙ্ক অনুভব করছি, #দেলহি, আসলে, পুরো ভারতবর্ষে। অসুস্থhttp://www.ndtv.com/article/cities [8]

Posters from the Delhi Slutwalk. [9]

দিল্লি স্লাটওয়ার্ক থেকে আসা প্রতিবাদ। ছবি রাহুল কুমার-এর। কপিরাইট ডেমোটিক্স-এর (৩০/০৭/২০১১)

টুইটারে আসা আরো কিছু প্রতিক্রিয়া:

@ভানিতাজ [10]: ডাক্তারের প্রদান করা সংবাদ অনুসারে দিল্লিতে ধর্ষণের শিকার তরুণীর অন্ত্র এবং গোপনাঙ্গ গুরুতর জখম হয়েছে । মৃত্যুদণ্ড কি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সঠিক বিচার? না, তাদের গোপনাঙ্গ কেটে ফেলা উচিত।

@অরবিন্দ কেজেরিওয়াল৭ (@অরবিন্দ কেজেরিওয়াল) [11]:২০১২ সালে দিল্লিতে ৬৩৫টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ কি শাস্তি পেয়েছে? না? এই বাস্তবতা কি এই ধরনের অপরাধকে উৎসাহ প্রদান করছে না? যে কোন ধরনের ধর্ষণ মামলার সিদ্ধান্ত এক মাসের মধ্যে প্রদান করতে হবে।

@আনন্দমহিন্দ্রা (আনন্দ মহিন্দ্রা) [12]: দিল্লির গণধর্ষণের প্রতিক্রিয়ায় সঠিক মাত্রায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এই ঘটনায় চাপ বজায় রাখার জন্য প্রচার মাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ার বিরামহীন ভাবে কাজ করে যেতে হবে।

@জাস্টিসফরওমেন [13]: ধর্ষণ কেবল #দিল্লির সমস্যা নয়, #ভারতে প্রতিদিন এবং সকল স্থানে নারী ও তরুণীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে–বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে মনোযোগের দাবিদার।

এ ওমেন ইন টুডেস ইন্ডিয়া [14] উদ্বিগ্ন :

ভারতে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম নয়, আর এটাই শেষ নয়!

আবার এই ধরনের ঘটনা ঘটবে, আবার ঘটবে, তারপর আবার ঘটবে, তারপর আবার, তারপর আবার, এক দিনে অজস্রবার ঘটবে। দেবীর পূজা করা এক জাতি, যাদের বাসস্থানকে ভারত বলে অভিহিত করা হয়, তার সবটুকু এলাকা জুড়ে এই ঘটনা ঘটবে। [..]

ভারতে ধর্ষণ সংঘঠিত হয়, কারণ আমরা বোধহীন।

এন ইন্ডিয়ান হোমমেকার [15]-এর অনেক প্রশ্ন রয়েছে:

আপনাদের কাছে কি মনে হয়, কোন বিষয়টি দিল্লির এই ধর্ষণকারীদের নির্ভয় করে তুলেছে? [..]

আপনি কি মনে করেন আমাদের সমাজ সত্যিকার অর্থে ধর্ষণকারীদের অপরাধী হিসেবে দেখে?আমাদের মধ্যে অনেকে ধর্ষণকে অনেকটা এভাবে দেখে যে,ধর্ষণ তখন সংঘঠিত হয়, যখন ধর্ষণকারী নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। দৃশ্যত, যৌন অপরাধীদের অপরাধ বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের এক নিজস্ব বিচারিক আদর্শ রয়েছে, আর ধর্ষণকারীরা তা জানে।

লক্ষী চৌধুরী [16] লিখেছে :

প্রতিবার এক উত্তেজনাপূর্ণ ধর্ষণের ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়ে আসে। প্রতিবার একজন রাজনীতিবিদ তার মুখ খোলে, এটা অন্য এক ভারতে স্বাগত না জানানোর মত এক ঘটনার স্মরণ, আমাদের ধীরে চলা ভারতে, আরো বিপজ্জনক এক জোড় যা একগুয়ের মত এগিয়ে যেতে এবং পরিবর্তিত হতে চায় না। এই বিষয়টিও অখণ্ডনীয় এক প্রমাণ যে আমাদের এই জগৎ পুরোপুরি বাস্তব নয়, যা কেবল নিজস্ব অবস্থানে অস্তিত্ব তৈরি করা সতর্ক প্রহরার বুদবুদ যা নিরাপত্তার বিভ্রান্তিতে তৈরি। এটি এমন এক বুদবুদ যা কিনা আরেকটি ভারতের ইচ্ছায় ভেঙ্গে পড়বে, আমরা যাকে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখি।

Men participating at the Delhi Slutwalk. [17]

দিল্লি স্লাটওয়াক-এ পুরুষরা অংশগ্রহণ করেছেI ছবি রাহুল কুমার। কপিরাইট ডেমোটিক্সের

রিতু ললিত [18], সোশ্যাল একটিভিস্ট, আইন প্রণেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে একটি খোলা চিঠি পোস্ট করেছে। তার এক সারাংশ:

আমাদের দেশের প্রকৃত নিপীড়িতদের প্রতি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই, আমাদের নারীদের প্রতি। আমাদের দেশের নারীদের উপর সংঘঠিত অত্যাচার কেন আপনাদের নজর এড়িয়ে যায়? কেন আপনারা তাদের মান রক্ষার্থে এগিয়ে আসতে পারেন না? আপনাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য নারী হচ্ছেন জাতীয় ব্যক্তিত্ব, আর তারা এমন কিছুর খেয়ালে আছেন যা ২০০২ সালে ঘটেছে!

দি প্রেগন্যান্ট থটস [19] মন্তব্য করেছে :

দিল্লির ধর্ষণের ঘটনার জন্ম গতকাল নয়। এটা আমাদের আইনের শাসন না থাকার ঘটনাকে বাড়াতে দেওয়ার ফলে সৃষ্ট অবৈধ সন্তান। দিল্লি ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হয়েছি আমরা।

এই বিষয়ে আমাদের কঠিন আইন রয়েছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। আরো কঠিন আইনের বদলে আমাদের আরো উন্মুক্ত এক সংস্কৃতি দরকার। এটা আসলে কি ধরনের সংস্কৃতি যেখানে যৌনতা একটা খারাপ শব্দ, আর ধর্ষণ হচ্ছে নিয়ম ।

এই বিষয়টি উপলব্ধি করার জন্য আমাদের কি প্রয়োজন যে, “একটি বিষয়কে বোঝার জন্য, তাকে উপলদ্ধির করা প্রয়োজন”।

জেগে উঠুন, উন্মুক্ত হোন!