কম্বোডিয়ার স্কুলের আশেপাশের সব সাইবার ক্যাফে নিষিদ্ধ করা হয়েছে

কম্বোডিয়ার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০০ মিটারের মধ্যে যেসব সাইবার ক্যাফে আসে, সেগুলো নিষিদ্ধ করে সার্কুলার জারি করেছে। সার্কুলারে ১৮ বছরের কম বয়সীদেরকেও সাইবার ক্যাফেতে ঢোকা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কম্বোডিয়ার দৈনিক পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে সার্কুলারে এও বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের কারণে সন্ত্রাস, অর্থনৈতিক অপরাধ এবং পর্নোগ্রাফির সরবরাহ বেড়েছে।

এই সার্কুলারের কয়েকমাস আগেও কম্বোডিয়ার সরকার আরেকটি সার্কুলার জারি করেছিল। সেখানে সরকার ইন্টারনেট ক্যাফেগুলোতে নিবন্ধন এবং নজরদারি করার জন্য ক্যামেরা বসানোর নির্দেশ দিয়েছিল।

ইন্টারনেট-মুক্ত অঞ্চল গড়তে হলে নম পেনের বেশিরভাগ ইন্টারনেট ক্যাফের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। ম্যাপিং নেয়া হয়েছে লিকাডো থেকে।

কম্বোডিয়ার ব্লগাররা সরকারের এই নির্দেশে বিস্মিত হয়েছে। থারাম বান ভোয়া ব্লগে লিখেছেন, কম্বোডিয়ার নতুন সরকার নম পেন শহরের সাইবার ক্যাফের নামনিশানা মুছে ফেলবে।

সার্কুলারে ভাসা ভাসা ভাবে ইন্টারনেটে গেমস খেলা বন্ধের কথাও বলা হয়েছে।

নম পেন শহরের ১৭ বছর বয়সী স্কুল ছাত্র টেপ সোভিচেটের ধারণা, সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস ফাঁকি দেয়া কিংবা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে গেমস খেলা বন্ধ করতে পারবে না। অবশ্য সে নিজে সরকারের নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেছে।

সব সাইবার ক্যাফেতেই ছাত্র-ছাত্রীরা গেমস খেলে না। অনলাইন অপরাধের সবগুলোও সাইবার ক্যাফে থেকে হয় না। সব ছাত্র-ছাত্রী-ই গেমস খেলার জন্য সাইবার ক্যাফেতে যায় না। এটা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয় […] যেমন ধরুন অ্যাসাইনমেন্ট করার কাজে, নতুন কিছু জানতে, বিভিন্ন উত্স থেকে খোঁজখবর জানার কাজে।

সাকুর্লারে সারাদেশের সাইবার ক্যাফের মালিকদের মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তি করতে বলা হয়েছে।

খেমারবার্ড নামের একজন কম্বোডিয়ান ব্লগার লিখেছেন:

সার্কুলারের পেছনের বিষয়গুলোকে আমি সমর্থন করি। তবে আমি মনে করি, ক্যাফেতে ইন্টারনেট থেকে গেমস এবং পনোর্গ্রাফিতে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দিলেই হয়। এরজন্য সাইবার ক্যাফে বন্ধের দরকার পড়ে না। আমরা যদি এই নিয়ম প্রয়োগ করি, তাহলে নম পেন শহরের বেশিরভাগ সাইবার ক্যাফে বন্ধ হয়ে যাবে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, যদি কোনো ইন্টারনেট ক্যাফে রেড জোনে (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০০ মিটারের মধ্যে) থাকে, অথবা যে ক্যাফেতে অপরাধ সংঘটিত হবে, তাহলে ওই দোকান বন্ধ করে দেয়া হবে, সকল যন্ত্রপাতি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এবং দোকানের মালিককে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

ফেইন গ্রিনউড একজন শখের ব্লগার এবং ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াভিত্তিক সাংবাদিকতা করে থাকেন। গত ১৮ ডিসেম্বরের ইন্টারনেট ক্যাফের ওপর নিষোধাজ্ঞা নিয়ে তিনি তার ব্লগে লিখেছেন:

এই সার্কুলারের কতটা ক্ষমতা আছে, এটা কম্বোডিয়ার অবস্থা কতটা পরিবর্তন করবে, এটা আইনে পরিণত হবে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। তবে এই সার্কুলার একটা দিক ইঙ্গিত করে, কম্বোডিয়ার সরকার চীনের মতো মুক্ত ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণে নানা বিধিনিষেধ আরোপের দিকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, হুন সেন সরকারের আমলে চীন কম্বোডিয়ার ভালো বন্ধু ছিল।

নম পেন শহরের ক্রাউড ম্যাপিং প্রজেক্ট আরবান ভয়েস কম্বোডিয়া এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে তারা জনগণকে অনুরোধ করেছে তাদের ওয়েবসাইট ‌সামিট রিপোর্টে নিজ নিজ এলাকার ইন্টারনেট ক্যাফেগুলোকে যুক্ত করতে।

মানবাধিকার গ্রুপ লিকাডোও সার্কুলারের বিরুদ্ধে কথা বলেছে:

কম্বোডিয়ায় জোর চেষ্টা চলছে সামর্থ্যের মধ্যে থাকা এবং সহজেই যাওয়া যায় এমন ইন্টারনেট ক্যাফেগুলো বন্ধ করার। এখানে কোনো ধরনের বেআইনি কিছু হয়নি। জনগণকে বিভিন্ন সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট এবং সামাজিক মিডিয়ার মতো স্বাধীন উত্স থেকে সঠিক সংবাদ পাবার উপায় বন্ধ করতেই এটা করা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .