কিরগিজস্তানের কনে অপহরণকারীরা কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে

জোরপূর্বক বিবাহ বিষয়ে কিরগিজস্তানের সংবিধানের অবস্থান একেবারে পরিষ্কার। সংবিধানের ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ-এর ৫ নাম্বার ধারায় বলা হয়েছে: “স্বেচ্ছায় অথবা পরস্পরের সম্মতি ছাড়া কোন বিবাহ অনুষ্ঠিত হতে পারবে না”.। .

তবে কনে অপহরণ, যা কিনা কিরগিজস্তানে আলা কাচূ নামে পরিচিত, তা দেশটির গ্রাম এলাকা বা প্রাদেশিক শহরগুলোয় ঐতিহ্য হিসাবে ব্যাপকভাবে পালন করা হয়।

বিশকেক ভিত্তিক সেন্টার ফর উইমেন-এর হিসেব [রুশ ভাষায়]-এ দেশটিতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১১,৮০০-জন-এর মত নারীকে অপহরণ করা হয়, যাদের মধ্যে গড়ে প্রায় ২০০০ জন এই ধরনের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অপহরণকারীর কোন শাস্তি হয় না। এই ধরনের ঘটনায় অপহৃত প্রতি ৭০০ জনের একজন অপহরণকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে, যদিও দেশটির অপরাধ আইনে জোরপূর্বক অপহরণকারীর শাস্তি হিসেবে তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে [রুশ ভাষায়]।

এই ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, কিরগিজস্তানের বেশীরভাগ বিবাহ বাকী বিশ্বের বিবাহের ধরনের সাথে খুব একটা আলাদা নয় । তবে মূলত, দেশটির গ্রাম এলাকায় হাজার হাজার মানুষ প্রাচীন এই ঐতিহ্য অনুযায়ী কনে অপহরণ করে বিয়ে করে। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ইয়েভগানি জোটভ-এর, ২৮ জুলাই, ২০১০ তারিখে আপলোড করা হয়েছে (সিসি বাই-এনসি-এনডি ২.0)

আলা কাচূর বিরুদ্ধে প্রচারণা

গ্লোবাল ভয়েসেস যেমনটা আগে সংবাদ প্রদান করেছিল-সম্প্রতি কিরগিজস্তানের নারীরা কনে অপহরণ অনুশীলনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত সক্রিয় প্রচারণা শুরু করেছে।পরবর্তীতে সেই একই গ্রীষ্মে, ক্রাইসিস সেন্টার-এর সহযোগিতায় গ্লোবাল ভয়েসেস-এর প্রবন্ধটি লেখা হয়েছে এবং ইয়োথ পীর এডুকেশন সেন্টার ওরফে ওয়াই-পীর ছোট ছোট নাটিকা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে [রুশ ভাষায়] কেন কনে অপহরণ-এর বিরুদ্ধে লড়াই প্রয়োজন। এই প্রচারণায় অংশ নেওয়া পুরুষরা নারী অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং এই অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত না থাকার জন্য তৈরি করা এক আবেদনে নাগরিকদের স্বাক্ষরের অনুরোধ জানান।

এই শীতে আরেকটি প্রচারণা শুরু হয়েছে যার উদ্দেশ্য হচ্ছে কনে অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদানের আইন তৈরি করার লক্ষ্যে কিরগিজ এমপিদের প্ররোচিত করা। যে সমস্ত একটিভিস্ট এই প্রচারণার সাথে যুক্ত তারা বিশ্বাস করে যে কোন মেয়েকে অপহরণ করা এবং তাকে জোর করে বিয়েতে বাধ্য করার মত অপরাধের শাস্তি হিসেবে তিন বছরের কারাদণ্ড যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে যে, কিরগিজস্তানে কেউ যদি একটি ভেড়া চুরি করে তাহলে তাকে ১১ বছর কারাগারে কাটাতে হবে।

কনে অপহরণ প্রতিরোধ প্রচারণায় ঘৃণ্য এক চরিত্র কিরগিজ সংসদ খোজাবেক রেসপাইয়ে এক ঘৃণ্য রসিকতার দ্বারা দুটি অপরাধের পার্থক্যের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন [রুশ ভাষায়]:

Но ведь скот съедают, а женщин — нет.

বেশ, গবাদিপশু উদর পূর্তিতে কাজে লাগে,কিন্তু নারীরা নয়।

জুন ২০১২-এ, ইসাক-কুল প্রদেশে একটি ঘটনায় সাম্প্রতিক এক প্রচারণার জন্ম ঘটেছে, যেখানে একটি পুরুষ, এক তরুণীকে অপহরণ করে [রুশ ভাষায়] এবং তাকে ধর্ষণ করে। যদিও সেদিনই মেয়েটির পিতামাতা তাকে খুঁজে পায় এবং পাত্রের বাসায় নিয়ে যায়, কিন্তু শীঘ্রই মেয়েটি আত্মহত্যা করে। ১ অক্টোবর তারিখে স্থানীয় একটি আদালত অপহরণকারীকে ছয় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করে যা কিনা স্বাধীনতা লাভের পর কিরগিজস্তানে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রথম মামলা [রুশ ভাষায়]
সংসদে বিতর্ক

১৮ অক্টোবরে, একটিভিস্টদের চাপে দেশটির সংসদ কনে অপহরণকারীর সাত বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে একটি আইন পাস করেছে [রুশ ভাষায়]। সংসদ সদস্যদের তীব্র এক বিতর্কের শেষে এই বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়।

যেমনটা বলা যায়, সংসদ সদস্য ইরিনা কারামুশকিনা (সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি) যুক্তি প্রদান করেছেন [রুশ ভাষায়]:

Умыкание невест, либо кража невесты — это в полном смысле слова кража человека, это похищение человека. Я понимаю, что есть такая традиция, очень такая старая традиция, ее применяют. Но традиция тогда станет традицией, когда обе стороны согласны.

কনে অপহরণ আক্ষরিক অর্থে একজন ব্যক্তিকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া, এক অপহরণ-এর ঘটনা। আমার উপলব্ধি এই যে এখানে এ রকম একটা ঐতিহ্য আছে, যা অনেক পুরোনো এক ঐতিহ্য, যেটি কিনা এখনো পালন করা হয়ে থাকে। তবে যে কোন ঐতিহ্য তখনই এক ঐতিহ্যে পরিণত হয় যখন উভয় পক্ষ তা পালন করতে রাজি।

তবে সাংসদ খোজাবেক রেইসপাইয়ে, এর সাথে একমত নন [রুশ ভাষায়], উলুকবেক বাবাকুলুভ যেমনটা উদ্ধৃত করেছেনঃ :

Ужесточение наказания за кражу невесты может привести к тому, что мы пересажаем всех мужчин в Кыргызстане.

কনে অপহরণকারীর জন্য যদি কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে কিরগিজস্তানের সকল পুরুষকে জেলে যেতে হবে।

সংসদে রেইসপাইয়ে-এর সহকর্মী দাস্তান বেকেশেভ, এই বিষয়ে আরো কঠিন শাস্তি প্রয়োগের উৎসাহ প্রদান করছেন, তিনি পরামর্শ প্রদান করেন বিষয়টি অনেক আত্মহত্যা প্রতিরোধ করবে:

На практике нередки случаи суицида среди девушек. Их родители не знают, как наказать виновных, и иногда готовы даже на самосуд. А потому ужесточение ответственности просто необходимо.

মেয়েদের আত্মহত্যা প্রতিরোধে বাস্তবিক এই শাস্তি যথেষ্ট নয় [ যে সমস্ত মেয়ে অপহরণ এবং জোরপূর্বক বিয়ের স্বীকার হয়]। কি ভাবে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে কনের পিতামাতা তা জানে না এবং অনেক সময় তারা এমনকি অপহরণকারীকে শাস্তি দেওয়ার জন্য তৈরি থাকে। যার ফলে কঠোর এক শাস্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাংসদ শিরিন এইতমাতোভা তার সহকর্মীকে সমর্থন করেছে [রুশ ভাষায়]:

Я к этому положительно отношусь. Я думаю, что это правильно.

এই বিষয়টির প্রতি আমার একটা ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে, আমি মনে করি বিষয়টি সঠিক।

লিঙ্গীয় বিষয়, যেমন কনে অপহরণের মত ঘটনা কিরগিজ সমাজের সামনে চলে এসছে, যার জন্য দেশটির সুশীল সমাজের অক্লান্ত প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ। বিশকেক ফেমিনিস্ট সুশীল দলের ডিজাইনকৃত এই প্রচারণায়, এর প্রবক্তারা সংসদে নারী আসন বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছে। এখানে কিরগিজ ভাষায় লেখা আছে, “নারী তোমার স্থান এই ভবনে”।

তবে পরিহাসের বিষয় এই যে, এই ঘটনার এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে, আইতমাতোভার সংসদীয় সাহায্যকারী কর্মী বিয়ে করার জন্য এক টিভি সাংবাদিককে অপহরণ করে [রুশ ভাষায়], অতীতে যার সাথে সে অভিসারে গিয়েছিল।

তবে উলুগবেক বাবাকুলভ যেমনটা তার ব্লগে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন:

Но, к сожалению, трезвомыслящих парламентариев в ЖК меньшинство и, как показывает практика, их голос часто тонет в гуле голосов гораздо менее достойных народоизбранников

দুর্ভাগ্যবশত, [কিরগিজ সংসদে] বিনয়ী মনোভাবের সংসদেরা সংখ্যালুঘু এবং এই ধরনের কাজের অনুশীলনে প্রদর্শিত হয়েছে যে, অনেক কম গ্রহণযোগ্য জনপ্রতিনিধিদের গর্জনের মাঝে প্রায়শ তাদের কণ্ঠস্বর শোনা প্রায় অসম্ভব।

কনে অপহরণ বিরোধী গ্রহণযোগ্য প্রচারণার অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর বিশকেকে “সাইকেল চালনা এবং আমি নির্যাতনের বিরুদ্ধে” নামক স্লোগানের অধীনে একটি মোটর সাইকেল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয় [রুশ ভাষায়]।

[বিশেষ দ্রষ্টব্য] কিরগিজস্তানের প্রায় সকল নারী টিভি ব্যক্তিত্ব জীবনে একবার অপহরণের শিকার হয়েছে ( যা কিনা সঠিক নয় ) এমন ধারনার যে ঝুঁকি, সে বিষয়ে গ্লোবাল ভয়েসেস, আগামী সপ্তাহে ট্যাবলয়েড সাংবাদিকদের কাছ থেকে কয়েকজন নারী টিভি ব্যক্তিত্বের “ভূয়া অপহরণ” বিষয়ে প্রতিক্রিয়ার বিবরণ প্রদান করবে।

এই প্রবন্ধটি কিরগিজস্তানের বিশকেকে অবস্থিত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল এশিয়ার, জিভি সেন্ট্রাল এশিয়া ইন্টারনেট প্রজেক্ট প্রকল্পের একটি অংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .