বাংলাদেশ: কমছে কৃষি নির্ভরতা, বাড়ছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। মোট দেশজ উত্পাদন তথা জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৯.১%। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গবেষণায় কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা কমছে, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সেই সাথে কৃষিখাতে কর্মসংস্থানের হারও কমেছে। গত ৪ দশক ধরে শিল্প ও সেবা খাতের কম-বেশি বিকাশ ঘটায় ক্রমশ কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমেছে। বতর্মানে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৮ শতাংশ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। যা ২০০৬-২০০৭ সাল পর্যন্ত ছিল ৬০ শতাংশ। তাছাড়া, দেশের কৃষিখাতে কর্মসংস্থানের হারও কমেছে ২০ শতাংশ। অন্যদিকে ভূমিহীনের সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বেড়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৯ ভাগ। যা মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় দেড় কোটি।

বাংলাদেশের পরিচিতি কৃষি প্রধান দেশ হলেও কৃষির ওপর নির্ভরশীলতা দিন দিন কমছে। ছবি বলরাম মহালদারের। উইকিপিডিয়া থেকে সিসি: বাই-এনসি লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সার, সেচের পানি, বিদ্যুৎ ও ডিজেলের দাম বেড়েছে, একই সাথে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। কিন্তু কৃষকরা সে অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না। তাই অধিকাংশ সময় তাদের উত্পাদন খরচ উঠে আসছে না। এ অবস্থায় কৃষকরা কেন কৃষিকাজে আছেন সেটা নিয়েই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ব্লগার রাসেল(…):

গত ১ মাসের বাজার দর বিবেচনা করলে দেখা যাচ্ছে গত এক মাসে বাজারে গরুর মাংসের গড় মূল্য ছিলো ২৭০ টাকা, সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিলো ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, যে দেশে কৃষককে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে আধা মন ধান বেচতে হয় সে দেশের মানুষ যে এখনও কৃষি কাজ করে এটাই আশ্চর্যজনক।

যে দেশে এক কেজি তেল কিনতে গোলা থেকে ৭ কেজি ধান দিতে হয় কৃষককে সে দেশে কৃষকেরা এখনও ধান উৎপাদনের মাহাত্ম্য দেখাচ্ছেন এটাই আশ্চর্যজনক।

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দৈনিক ১ ডলারেরও নিচে আয় করেন এমন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন আরো দুর্বিসহ করে তুলবে! ছবি তুলেছেন ফিরোজ আহমেদ। ডেমোটিক্স থেকে নেয়া (৪/৮/২০১২)।

কৃষির ওপর নির্ভরতা এবং কৃষিজমির পরিমাণ কমায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনিতে ক্রয় ক্ষমতার অভাবে এদেশের মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণ করেন। কৃষকরা অন্য পেশায় গেলে, কিংবা কৃষি উত্পাদনে অংশ না নিলে অবস্থাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট ‘বিশ্ব খাদ্য নিরাপত্তা’র যে সুচক প্রকাশ করেছে এতে  ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ৩৪ দশমিক ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম। এ থেকে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি আঁচ করা যায়। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) এবং ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অর্গানাইজেশন (ফাও) এর ২০০৯ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে ৩৫ মিলিয়ন মানুষ ১৮০৫ কিলোক্যালরির কম খাদ্য গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে দেশের ৫০% লোক বছরে কোনো না কোনো সময় খাদ্য ঘাটতিতে পড়ে এবং ২৫% লোক নিয়মিত খাদ্য ঘাটতিতে পড়ে এবং ৭% লোক তিন বেলা খেতে পায় না। আমাদের দেশে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ লোক শরীরে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য শক্তি পায়।

অথচ সঠিক সংরক্ষণ ও বিপণন ব্যবস্থার অভাবে দেশে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্লগার এক থেকে আট সামহোয়ারইনব্লগে মন্তব্য করেন:

কৃষিতে আধুনিক কলাকৌশল ও সুষ্ঠু কৃষি বিপণন ব্যবস্থা, সংরক্ষণ ও পরিবহনের অভাবে প্রতিবছর প্রায় ২৫-৩০ ভাগ কৃষিপণ্য অপচয় হচ্ছে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রতিবছর যে পরিমাণ কৃষিপণ্য অপচয় হচ্ছে তার আনুমানিক বাজার মূল্য অন্তত ৪ হাজার কোটি টাকা।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাই কৃষিতে বিনিয়োগ দরকার। তাছাড়া কৃষিপণ্যের কার্যকর ব্যবহারের জন্য দরকার কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন। সরকার কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য আরো বেশি করে ঋণ দেয়া নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ২০১১-১২ অর্থ বছরে কৃষিভিত্তিক শিল্প ঋণের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অর্থ বছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে এ খাতে ১৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। আগের অর্থ বছরে (২০১০-১১) একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময়ে এ খাতে ঋণ বিতরণ ২৪ শতাংশ বেড়েছে।

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .