মুদ্রার সাথে সাথে কি ইরান সরকারেরও পতন ঘটতে যাচ্ছে?

মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর ২০১২ তারিখে ইরানের মুদ্রা রিয়ালের রেকর্ড পরিমাণ অবমূল্যায়ন ঘটে, সে সময় ইরানী কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিল এবং তারা এই অর্থনৈতিক সুনামী মোকাবেলায় অক্ষম ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ইরানের মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে, ডলারের বিনিময় হার ৩৪,৫০০ রিয়ালে পরিণত হয়, আর এর জন্য কর্তৃপক্ষ ইরানের উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করছে। এর মাত্র কয়েকদিন আগেও, এই রোববারে, এক ডলারের বিনিময়ে ২৯,৫০০ রিয়াল পাওয়া যেত।

ইরানের আইন প্রণেতারা দেশটির মুদ্রা মানের এই দ্রুত অবমূল্যায়নের ঘটনা রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সংসদে হাজির করার উদ্দেশ্য এক দরখাস্তে স্বাক্ষর করেছে

এদিকে তেহরানের বাণিজ্য, শিল্প, খনি এবং কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানসমূহের সংগঠনের সভাপতি ইয়াহইয়া এশহাঘাহ এই অর্থনৈতিক সঙ্কটকে যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন এবং বলেছেন, মুদ্রা ব্যবস্থায় এক মিসাইল আঘাত করেছে। “ এই ঘটনায়, ইরানের রাষ্ট্রপতি তার সরকারের অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করছেন এই দাবীর ভিত্তিতে যে, দেশটির শত্রুরা “ইরানের বিরুদ্ধে মনস্তাত্বিক এক যুদ্ধ” শুরু করেছে।

ইরানী মুদ্রার এভাবে দ্রুত অবমূল্যায়নের প্রতিবাদে ব্যবসায়ী এবং দোকানদারদের আহবানে বুধবার, ৩ অক্টোবর তারিখে, তেহরানের বাজারসমূহে ধর্মঘট পালন করা হয়

আহমাদিনেজাদ অস্বীকার করেছেন যে রিয়ালের বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে

বেশ কয়েকজন নেট নাগরিক সেপ্টেম্বর ২০১২-এ প্রকাশিত আহমাদিনেজাদের সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছে, সে সময় তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে ডলারের দাম বৃদ্ধি পেয়ে ৩০,০০০ রিয়াল পরিণত হতে পারে, মনস্তাত্বিক যুদ্ধের যা এক উদাহরণ।

এই শাসন ব্যবস্থা কি ভেঙ্গে পড়বে?

ইরানী ব্লগার আজরাক বলছে [ফার্সী ভাষায়] :

বিদেশী মুদ্রার তুলনায় রিয়ালের মানের ক্রমে অবনতি ঘটছে, প্রতি ঘণ্টায় এই ঘটনা ঘটছে, এক অভূতপূর্ব সঙ্কট…। সংসদ সদস্যদের একটি অংশ এই সঙ্কটে আহমাদিনেজাদ জড়িত থাকার অভিযোগ করছে, এদিকে কোন ধরণের সাক্ষ্য বা প্রমাণ ছাড়াই সরকারি কর্মকর্তারা, রিয়ালে এত দ্রুত পতনের জন্য দেশটির একদল মাফিয়াকে অভিযুক্ত করছে। ইরানের আধ্যাত্মিক নেওয়া আয়তোল্লাহ খামেনি এবং তার দপ্তর এই বিষয়ে নিরব। বেশীরভাগ বিশ্লেষক বিবেচনা করছে, পরমাণু কর্মসূচির কারণে ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ঘটনা থেকে এই সঙ্কটের উৎপত্তি… যে দেশে অনেক কর্মী এখন কর্মহীন এবং বেতনের জন্য বেশ কয়েকটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাজে দরিদ্রের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমরা কি ধারণা করতে পারি যে রিয়ালের পতনে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটাতে যাচ্ছে?

দারজারেহবিন পরিহাসের সাথে লিখেছে [ফার্সী ভাষায়] যে ৪০ বছর ধরে আমরা এই সংবাদ শুনে আসছিঃ “ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এক ডলারের বিনিময়ে ৩০ বিলিয়ন রিয়াল গ্রহণ করার আহবান জানাচ্ছে”।

ব্লগার আরো লিখেছে [ফার্সী ভাষায়]:

আমি আশা করছি যে এই মুদ্রা সঙ্কটের শীঘ্রই সমাধান ঘটবে, যদি এই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকে, তাহলে তা সমাজকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে…। ইরানের নেতারা কেবল তখনই তার নাগরিকদের প্রতি মনোযোগ প্রদান করে, যখন নির্বাচন সামনে এসে দাঁড়ায়…। ইরানের নাগরিকরা তাদের গন্তব্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রী ক্ষমতাহীন এবং ইরানে কোন বিরোধীদের কোন অস্তিত্ব নেই। আমাদের সামনে অন্ধকার এক ভবিষ্যৎ এবং সবকিছু হয়ত ভেঙ্গে পড়বে। আমি আশা করি যে আমার এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হবে।

গ্রীনসিটি লিখেছে“[ফার্সী ভাষায়]:

ইরানের জনতা, আপনাদের ধৈর্য্য অসীম। জেনে রাখুন যদি অন্য কোথাও এই পরিস্থিতি দেখা দিত, তাহলে সেখানকার নাগরিকরা প্রতিবাদ করত এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পদত্যাগ করত।

এদিকে অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে ক্রমশ রিয়ালের অবমূল্যায়ন ঘটতে থাকায়, ইরানের নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রাম আরো তীব্র হয়ে উঠছে। দৃশ্যত সরকারের নিপীড়ন এবং বিশ্বের ক্ষমতাসীনদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের নাগরিকরা ধারাবাহিক যন্ত্রণার শিকারে পরিণত হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .