জর্ডান: সংসদ ইন্টারনেটের ওপর নতুন নিয়ন্ত্রণ আইন অনুমোদন করায় শোক দিবস পালন

অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণে জর্ডান সংসদ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে তথ্য এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন সংশোধনী পাস করেছে। সংসদের বেশিরভাগ সদস্যই বিলের পক্ষে ভোট দেন। এ সময়ে অ্যাক্টিভিস্ট এবং সংবাদকর্মীরা সংসদের সামনে বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষোভ চলাকালে অ্যাক্টিভিস্টরা প্রতীকি কফিন বহন করেন, যাতে ‘ইন্টারনেটের স্বাধীনতা’ লেখা ছিল। এর মাধ্যমে তারা ইঙ্গিত দেন জর্ডানে ইন্টারনেটের মৃত্যু ঘটছে। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা কালো রঙের শোক পোশাক পরেছিলেন।

অনুমোদিত এই বিলটি আইনে পরিণত হতে সংসদের উচ্চকক্ষে এবং সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের অধিকারী রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহর অনুমোদন লাগবে। জামিল নিমরি নামের একজন সংসদ সদস্য যিনি আবার সাংবাদিক সংগঠনেরও প্রধান তিনি বিলের বিপক্ষে ভোট দেন এবং বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি দাবি করেন, এই আইন শুধুমাত্র মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করতেই ব্যবহৃত হবে।

নতুন এই আইন ইন্টারনেটকে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ এবং সেন্সরশিপ আরোপে ক্ষমতা দিয়েছে। তাছাড়া এই আইনের ফলে ‘অন্য প্রকাশনার মতোই’ ওয়েবসাইট নিবন্ধন করতে হবে এবং সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। আবার পাঠকরা লেখা পড়ে যেসব মন্তব্য করবেন, সেগুলো প্রকাশের জন্য ওয়েবসাইট পরিচালনাকারী দায়ী থাকবেন।

এই আইনের প্রস্তাব আসার সময়েই নেটিজেনরা ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন। নতুন আইনের ব্যাপারে সবার মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তারা এ নিয়ে অনলাইন ক্যাম্পেইনও করেন।

টুইটারে এ বিল নিয়ে নেটিজেনরা তাদের মনের কথা তুলে ধরে।

The beginning of the Internet freedom funeral in front of the Jordanian Parliament

জর্ডানের সংসদের সামনে ইন্টারনেটের স্বাধীনতা শেষকৃত্য'র শুরুর মূহুর্ত। ছবিটি টুইটারে মোহাম্মদ আল কোয়াক শেয়ার করেছেন।

মোহাম্মদ আল কোয়াক [আরবি] টুইট করেন:

بلشت جنازة حرية الانترنت #انترنت_بلا_قيود
@মোআলকোয়াক: ইন্টারনেট স্বাধীনতার শেষকৃত্য শুরু হয়েছে। ‫

তিনি ডানে প্রতিবাদের এই ছবিটি শেয়ার করেছেন।

নিজার সামারি এর সাথে যোগ করেন:

أقر مجلس النواب قبل قليل مشروع القانون المعدل لقانون المطبوعات و النشر.. اخص
@নিজারস্যাম: মাত্র কয়েক মূহুর্ত আগে সংসদে তথ্য এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন সংশোধনী পাস হয়েছে… লজ্জাকর ঘটনা।

@গোডটবাশা প্রশ্ন করেন:

@গোডটবাশা: আমি যদি জর্ডান ও পুলিশি রাষ্ট্র পাশাপাশি আঁকি, তাহলে কি #সেন্সরশিপ আইনে আমাকে শাস্তি প্রদান করা হবে? #ফ্রিনেটজো

হিসাম আল বালাউনেহ টুইট করেন:

مش مقتنع ابدا هدف قانون المطبوعات والنشر هو التنظيم بل هدفه تكميم الافواه وارجاع الاردن للخلف
@জরটুডে: আমি কোনো মতেই বুঝি না যে এই করা হয়েছে তথ্য এবং প্রকাশনা শিল্পকে সংগঠিত করার জন্য। এটা করা হয়েছে জনগণের কণ্ঠ বন্ধ করতে, জর্ডানকে পিছিয়ে দিতে।

হানিন আবু সামাত সোজাসুজি বলেন:

@হানিশ: #ফ্রিনেটজো’র সাথে নাটক কিসের? সংসদের উচ্চ কক্ষ প্রথমে এটার অনুমোদন দিলেন… আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সিনেটরদের বিশ্বাস করি, এমপিদের করি না! #জো

শাহজেইদোর প্রতিক্রিয়া এমন:

@শাহজেইদো: জর্ডানের জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি রুদ্ধ করতে আমলারা এই পশ্চাদগামী আইন করেছে। তবে মেধাবী সরকার রিসেশনের যুক্তি দিয়েছে। #ফ্রিনেটজো

মাজ ইউসেফ বলেন:

الحرية في بلادنا قتلوها و اتهموها بشرفها عشان يطلعوا براءة من دمها

@মাইউসেফ: তারা আমাদের দেশের স্বাধীনতা খুন করেছে। তারা একে অশ্রদ্ধা করার অভিযোগে অভিযুক্ত। তাই তারা নিজেদের মুক্তি দিতে পারে।

ফাদি জাগমাউট মন্তব্য করেন:

يوم أسود في تاريخ الأردن

@আরবঅবজার্ভার: এটা জর্ডানের ইতিহাসে কালো দিন।

মোহাম্মদ সাওয়াশ সতর্ক করে দেন:

مش قادر اعبر اكتر عن امتعاضي – مجلس النواب الأردني انتو لعبتو بالنار

@ময়েস: আমি আমার অসন্তোষ নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে পারবো না- জর্ডানের সংসদ আগুন নিয়ে খেলছে।

বাশার জিদান ইন্টারনেটের স্বাধীনতার ওপর আঘাতকে জর্ডানের বসন্তের ওপর আঘাত হিসেবেই দেখেছেন। তিনি বলেন:

منذ بدء #الربيع_الاردني والحكومة تقمع وترفع وتحجب وتقمع.. فاهمين الموضوع غلط!
@বাশারজিদান: জর্ডানের বসন্তের সময় থেকে সরকার দমন, সেন্সর, গ্রেফতার শুরু করেছে। তারা ইস্যুটাকে ভুল বুঝেছে।

ওমর কুদাহ বলেন:

مجنون من ظن أنه قادر على تسييج الفضاء كما يسيج دوار ومزرعة‏! ‏
@ওমরকুদাহ: তার ধারণা, খামারে যেমন বেড়া দেন, তিনি তেমন একটা বৃত্তাকার বেড়া দিয়েছেন!

ওমর কাদের সংসদের সিদ্ধান্তকে নির্বাচন বয়কটের একটা সিগন্যাল হিসেবে দেখছেন:

مجلس “الأنياب” .. اشوف فيك يوم !! وهذا سبب الف بعد الالف لمقاطعة الانتخابات!
@বিএসএইচমাশাওয়ার: সংসদের এই বিষাক্ত ছোবল… আপনি ভোগ করবেন, আশা করি আমি তা দেখবো। এরকম হাজারটা কারণেই নির্বাচন বয়কট করবে।

অ্যাক্টিভিস্টরা Avaaz.com এ ‘সেভ দি ইন্টারনেট’ নামের একটি পিটিশন খুলেছে। সেখানে বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, তথ্যমন্ত্রী এবং সংসদের সদস্যদের প্রতি তথ্য এবং মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইনের সংশোধনী বাতিলের আহবান জানিয়েছে।

সংসদের বিল পাস হওয়ার পরে হিউম্যান রাইট ওয়াচ তাদের জর্ডান ওয়েবসাইটে ‘জর্ডান: অনলাইনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সেন্সরশিপ আরোপ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .