- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

দক্ষিণপূর্ব এশিয়াঃ সরকারসমূহের অলনাইন মিডিয়া প্রজেক্ট

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পূর্ব তিমুর, ফিলিপাইনস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নাগরিক মাধ্যম, রাজনীতি, সরকার

দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় সরকারসমূহ ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে বিভিন্ন সামাজিক প্রচার মাধ্যমের প্রোফাইল, ওয়ান স্টপ সেবা ব্যবস্থার পোর্টাল এবং অনলাইন স্বচ্ছতা টুলস স্থাপনের মাধ্যমে।

এই অঞ্চলে আমাদের যাত্রা শুরু ইন্দোনেশিয়া থেকে, যেখানে সম্প্রতি সাতু লায়ানান [1] (একস্থানে সেবা বা ওয়ান সার্ভিস) নামের পোর্টালের উদ্বোধন হয়েছে। এই ওয়েবসাইট সরকারের ৫০টি সংস্থার তথ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ জন সেবাসমূহের ঘোষণা প্রদান করে থাকে। এই ওয়েবসাইট তার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যে বিবৃতি প্রদান করেছে ইকবাল ফারাবী তা অনুবাদ [2] করেছে:

Satu Layanan is meant to answer the public’s needs of a reliable main reference for people to search for information about government services for their daily needs.

………এই পোর্টালের মানে এই নয় যে সরকারের প্রতিটি সংস্থা অনলাইনে সেবা প্রদান করার স্থান বদলে ফেলেছে। বলা যায়, সাধারণভাবে এটা প্রকৃত সেবার একটি ডিরেক্টরি বা নির্দেশীকা হিসেবে কাজ করে যা প্রতিটি সংস্থা আলাদা ভাবে প্রদান করে থাকে। সাতু লায়ানান সাইটটি আশাবাদী যে ভবিষ্যতে তা সাধারণ নাগরিকদের সাথে যুক্ত হবে, যাতে তারাও এতে অবদান রাখতে পারে।

ইকবাল উল্লেখ করেছে [3] যে এই পোর্টাল, ওপেন গর্ভমেন্ট ইন্দোনেশিয়ার [4] এক উদ্যোগ, মূলত আমলাতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক এক সংস্কারের চিন্তা থেকে যা তৈরি করা হয়েছে :

একজন ইন্দোনেশীয় হিসেবে যেমনটা আমি ভাবি, এক সময় আমার সবসময় এই ভাবনার মধ্যে দিয়ে যেতাম যে আমাদের সরকারি সংস্থাসমূহ জঘন্য ভাবে জনসেবা প্রদান করে থাকে। আর ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুশিলো বামবাং ইয়োধায়োনোর জন্য এটাই ছিল অন্যতম এক লক্ষ্য, যেন দুটি মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আমলাতন্ত্রে এক ধরনের সংস্কার পরিচালনা করা সম্ভব হয়। আর এর জন্য ইন্টারনেটকে ধন্যবাদ, প্রতিষ্ঠানকে এই ভাবে ঝাঁকি দেওয়ার বিষয়টি এখন কাজ করা শুরু করেছে, এখন কিছু নাগরিক নাগরিক পরিসেবার কাজ, যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স [5]–এখন অনলাইনে আবার রিনিউ করতে পারছে।

ইকবাল থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে, ওপেন গভার্নমেন্টস ইন্দোনেশিয়া আরো দুটি ওয়েব এপ্লিকেশন তৈরি করবে, যে দুটি এপ্লিকেশন সাতু পেমেরিনতাহ (এক সরকার) এবং সাতু পেতা (এক মানচিত্র)। .

Open Government Indonesia [4]

ওপেন গর্ভমেন্ট ইন্দোনেশিয়া

এদিকে প্রতিবেশী মালয়েশিয়ায়। প্রধান মন্ত্রী নাজিব রাজাক ১মালয়েশিয়া [6] নামক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাগরিকদের সাথে যুক্ত হন:

১ মালয়েশিয়া এমন এক উদ্দেশ্যে [7] তৈরি যাতে বিনে পয়সায় সেবা প্রদান এবং উন্মুক্ত এক ফোরাম গড়ার যায়, যে ফোরাম একক একটি জাতি হিসেবে আমাদের সাথে গভীর ভাবে যুক্ত বিষয় নিয়ে আমাদের আলোচনার স্থান।

আমি আশা করি মালয়েশীয় হিসেবে আমাদের পরিচয় আবিস্কার, আমাদের উদ্দেশ্য এবং নির্দেশনার জন্য এই ওয়েবসাইট এক উন্মুক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

মালয়েশীয় সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহেরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু ফেসবুকের এক পাতা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১.৮ মিলিয়ন রিঙ্গিত (৫৭৮,০০০ মার্কিন ডলার) খরচ করার ব্যাপারে এক সংসদ সদস্য প্রশ্ন তুলেছে [8]:

পর্যটন মন্ত্রণালয় আজ আবারো প্রচণ্ড এক সমালোচনার মুখে পড়ে, যখন সংসদের সদস্যরা প্রশ্ন করেন কেন পর্যটন মন্ত্রনালয় ফেসবুকে তাদের একটি পাতা তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১.৮ মিলিয়ন রিঙ্গিত খরচ করেছে- যা তার বিতর্কিত প্রকল্পে যুক্ত করা আরেকটি অংশ। এন্থনি লোকে (ডিএপি রাসা) নামক সংসদ সদস্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাইটে এত টাকা খরচ করার বিষয়ে প্রচণ্ড সমালোচনা করেছেন, যেখানে এই সমস্ত সাইট বিনে পয়সায় ব্যবহার করা যায়।

এবার সিঙ্গাপুরে যাওয়া যাক, যেখানে সরকারের সামাজিক প্রচার মাধ্যম ডিরেক্টরি [9] অজস্র অনলাইন কর্মসূচির এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেঃ

অনলাইন ডিরেক্টরি হচ্ছে সামগ্রিক তথ্য ভাণ্ডার যা কিবা আপনাকে সিঙ্গাপুর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিশেষ ওয়েব ২.০ এবং অন্য সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উদ্যোগ অনুসন্ধানে এবং পাঠে সাহায্য করবে, যার মধ্যে রয়েছে ফেসবুক-এর পাতা, ইউটিউব চ্যানেল, টুইটার একাউন্ট, ফ্লিকার ফটোস্ট্রিম এবং অন্যান্য একাউন্ট।

কুল ইনসাইডার [10], সরকারের কিছু সামাজিক প্রচার মাধ্যম উদ্যোগ চিহ্নিত করেছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে সিঙ্গাপুরের গভক্যাম্পের [11] আয়োজন করা হয়, যাতে প্রযুক্তির ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে সরকারের সাথে নাগরিকদের সংযুক্ত করার গবেষণার বিষয়টি যাচাই করা এবং তা প্রচার করা যায়:

গভক্যাম্প সিঙ্গাপুর দেশটির সরকারের অবস্থানের উপর গুরুত্ব প্রদান করে, যেখানে সরকার দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খাতের সাথে একক একটি আলোচনার কেন্দ্র হিসেবে যুক্ত হয় এবং কি ভাবে নাগরিকদের এর সাথে যুক্ত হওয়ার এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান উন্নত করা যায় সে ব্যাপারে যৌথ ভাবে কাজ করে।

ফিলিপাইন [12] হচ্ছে ওপেন গর্ভমেন্ট পার্টনারশিপ [13]-এর আরেক সদস্য হচ্ছে। সরকারের বাজেট বিষয়ক পোর্টাল [14] নাগরিকদের এখানে এই বিষয়ে প্রশ্ন করতে এবং পরামর্শ জমা প্রদান করতে [15] উৎসাহ প্রদান করছে:

এ্যাকুইনো প্রশাসনের উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থিক বিষয়ে স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ এবং নাগরিক যুক্ততার বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা। সিটিজেন পোর্টাল হচ্ছে জাতীয় বাজেট বিষয়ে জনতার অনুসন্ধান এবং সংযুক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত করা। স্থানীয় পর্যায়ে কোন কর্মসূচি বা কার্যক্রমের কোন ছবি বা ভিডিও আপনার কাছে রয়েছে কি? তাহলে নীচের বাটনে ক্লিক করে সেগুলো জমা দিন। আপনার নেতাদের দায়িত্ববান হতে বাধ্য করুন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নাগরিকদের বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে অনলাইন আলোচনায় যোগ দেওয়ার জন্য সরকার বিশেষ হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে, যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায় দেশটির যে সমস্ত রাস্তা খোয়া বসানো হয় সে সবের ক্ষেত্রে #লুবাক২নরমাল [16] নামক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়। নেটনাগরিকরা #সালামাতেজেসে [17] নামক হ্যাশটাগ ব্যবহার করে সরকারি কোন জনপ্রিয় মন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করার জন্য। সরকার তথাকথিত সংযুক্ত হ্যাশট্যাগ #অয়ালাংপাসাক [18] ব্যবহারের ঘোষণা প্রদান করেছে [19], মুষলধারে বৃষ্টি এবং শাক্তিশালী টাইফুনের আগমনে ক্লাশ বাতিল করার জন্য। সাম্প্রতি দেশটির দক্ষিণ অঞ্চলে ভূমিকম্পের সময় এই পরিস্থিতির বিষয়ে তাজা সংবাদ প্রদানের জন্য #পিএইচট্রেঞ্চকোয়েক [20] নামক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়।

এর বাইরেও পূর্ব তিমুরে, সরকার তিমুর ট্র্যান্সপারেন্সি পোর্টাল [21] নামের একটি পোর্টাল তৈরি করেছে যা কিনা রাষ্ট্রের বাজেট, সাহায্য, ক্রয় এবং এই সমস্ত কাজে সরকারের আয় ও ব্যয়ের ফলাফলকে তুলে ধরবে।.

গর্ভমেন্ট রেজাল্ট পোর্টাল হচ্ছে [22] একটি ওয়েবসাইট যা কিনা সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য, প্রকল্প এবং কর্মসূচীর বিষয়ে প্রাপ্ত ফলাফল প্রকাশ করার উদ্দেশ্য তৈরি করা হয়েছে ।

এবং সবশেষে, তিমুর লেসতির ইপ্রোকিউরমেন্ট পোর্টাল [23]-এর কথা তুলে ধরা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা। এই ওয়েবসাইট নাগরিক, দাতা, এনজিও এবং সাংবাদিকদের অনুমতি দেয়, সরকার যে সমস্ত পণ্য সেবা অথবা কাজের জন্য খরচ করছে সে সব তথ্য বিশ্লেষণ করার বা অনুসন্ধানের অনুমতি প্রদান করে।