ইকুয়েডরের রাজনৈতিক আশ্রয়ে উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

অনেক প্রত্যাশার পরে ইকুয়েডর ঘোষণা করেছে যে তারা উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করবে। ১৬ই আগস্ট, ২০১২ তারিখ ইকুয়েডরের স্থানীয় সময় দুপুর ১টা এবং লন্ডনের স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ইকুয়েডরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিকার্ডো পাতিনো এই ঘোষণা দেন। এসাঞ্জের জন্যে ন্যায়বিচার যেমন ব্যাখ্যা করেছে:

বর্তমানে অ্যাসাঞ্জ ইকুয়েডরীয় দূতাবাসের সুরক্ষার অধীনে রয়েছেন। উইকিলিকসে তার কাজের মাধ্যমে জনস্বার্থে সত্য তথ্য প্রকাশের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিগ্রহ, নির্যাতন বা মৃত্যুর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত আশংকায় তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

নাগরিক সাংবাদিক জেমস আলবারি (@আলবারিজে) লন্ডনের ইকুয়েডরীয় দূতাবাসের বাইরে থেকে সরাসরি-ঘটনাপ্রবাহ জানাচ্ছেন।

টুইটার অ্যাকাউন্ট অ্যাসাঞ্জের জন্যে ন্যায়বিচার (@সুইডেনবনামঅ্যাসাঞ্জ) লিখেছে:

@সুইডেনবনামএসাঞ্জ: ১কোটি ৩০লক্ষ লোকের লাতিন আমেরিকার একটি দেশে সমগ্র বিশ্বের জনগণের জানার অধিকার সুরক্ষার একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। #অ্যাসাঞ্জ

৬ই আগস্ট, ২০১২ তারিখে লন্ডনের ইকুয়েডরীয় দূতাবাসের বিপরীত দাঁড়িয়ে থাকা গণমাধ্যম।

১৬ই আগস্ট, ২০১২ তারিখে লন্ডনের ইকুয়েডরীয় দূতাবাসের বিপরীত দাঁড়িয়ে থাকা গণমাধ্যম। ছবি সি লি, কপি স্বত্ত্ব ডেমোটিক্স।

ঘোষণাটির অব্যবহিত পরেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ দপ্তর (@বৈদেশিকদপ্তর) :

@বৈদেশিকদপ্তর: জুলিয়ান #অ্যাসাঞ্জকে #ইকুয়েডরে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে – আমরা ইকুয়েডরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বিবৃতিতে হতাশ।

@বৈদেশিকদপ্তর: যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষের কাছে জনাব অ্যাসাঞ্জের আবেদনের সমস্ত সুযোগ শেষ হওয়ায় আমাদের আইন অনুসারে (আমরা) তাকে সুইডেনে প্রত্যাবাসিত করতে বাধ্য

@বৈদেশিকদপ্তর: আমরা সেই বাধ্যবাধকতা পালন করবো। ইকুয়েডরীয় সরকারের আজ বিকেলের সিদ্ধান্তটি সেটার কোন পরিবর্তন ঘটাবে না। #অ্যাসাঞ্জ

@বৈদেশিকদপ্তর: প্রত্যাবাসন আইনের বাধ্যবাধকতা পালনের সুযোগ দেয় এমন একটি সমঝোতামূলক সমাধানের জন্যে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। #অ্যাসাঞ্জ

এই সব টুইটের জবাবে উইকিলিকস (@উইকিলিকস) লিখেছে:

@উইকিলিকস: অবশ্যই এটা একটা চালাকি মাত্র। যুক্তরাজ্যের জাতিসংঘের শরণার্থী (রাজনৈতিক আশ্রয়) অর্থাৎ উদ্বাস্তু অধিকার এবং এর অন্যান্য চুক্তি স্বীকারের একটি আবশ্যিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

গতকাল ১৫ই আগস্ট ইকুয়েডর যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাওয়ার পর থেকে ইকুয়েডরসহ সারা বিশ্বের নেটনাগরিকরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। বিবিসি রিপোর্ট অনুসারে পাতিনো বুধবার জানিয়েছেন: “আজকে আমরা যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে লিখিত একটি প্রকাশ্য হুমকি পেয়েছি যে আমরা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তর না করলে তারা লন্ডনে আমাদের দূতাবাসে জোর করে ঢুকে পড়তে পারে।” উইকিলিকস এই হুমকিটির বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে যাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে:

দূতাবাসের পবিত্রতার বিরুদ্ধে অসদাচরণ একটি একতরফা ও লজ্জাজনক কর্ম এবং বিশ্বব্যাপী দূতাবাস সুরক্ষার ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন।

এই চিঠিটির খবর প্রকাশিত হওয়ার পরে জ্যাকব এপলবৌম (@আইওভুল) অ্যাসাঞ্জকে সমর্থনের জন্যে লন্ডনের জনগণের প্রতি আহবান জানান:

@আইওভুল: আপনি কী লন্ডনে আছেন? জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, #উইকিলিকস  এবং সর্বত্র রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের অধিকার সমর্থন করার জন্যে ইকুয়েডরীয় দূতাবাসে চলে যান!

ইতোমধ্যে মানবাধিকার এবং পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক লেখক এবং বিশ্লেষক জশ শাহরিয়ার (@জেশাহরিয়ার) টুইট করেছেন:

@জেশাহরিয়ার: জুলিয়ান #অ্যাসাঞ্জ এর ভক্ত নই, তবে লন্ডনে ইকুয়েডরীয় দূতাবাসে জোর করে ঢুকে পড়ার ব্রিটিশ হুমকি এমন লজ্জা এবং ন্যক্কারজনক যে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

A policeman asks the man to move further away from the Ecuadoran Embassy on August 16, 2012. Photo by See Li, copyright Demotix

১৬ই আগস্ট, ২০১২ তারিখে একজন পুলিশ লোকটিকে ইকুয়েডরীয় দূতাবাস থেকে আরো দূরে সরে যেতে বলছে। ছবি সি লি, কপিস্বত্ত্ব ডেমোটিক্স।

ইকুয়েডর অ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিবে একথা ঘোষণা করার পরে  ইকুয়েডরের গুয়াকুইল থেকে ব্যবহারকারী @রবার্টটিটো১৯৯১ [স্প্যানিশ ভাষায়] লিখেছেন:

@রবার্টটিটো১৯৯১Ecuador es el país mas famoso del mundo x darle una cucharada de su propia medicina a USA y a UK #AsiloAssange @LegionJJ @anonopshispano

@রবার্টটিটো১৯৯১ [স্প্যানিশ ভাষায়]: ইকুয়েডর হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং গ্রেট ব্রিটেনকে তাদের নিজস্ব কিছু ঔষধ প্রদানকারী বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত দেশ #এসিলোএসাঞ্জ @লেজিওনজেজে @এনোনোপশিসপ্যানো

তবে সব ইকুয়েডরবাসী এই খবরে সন্তুষ্ট নয়। @জিয়ান্নিমক  [স্প্যানিশ ভাষায়] এবং ফার কাসকান্তে (@ফারকাসকান্তে) [স্প্যানিশ ভাষায়] এর মতো কেউ কেউ আবার মিডিয়ার সঙ্গে রাষ্ট্রপতি রাফায়েল কোড়িয়ার ঝঞ্ঝাপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করেছেন:

@ফারকাসকান্তে: Por Dios en que pais vivimos dan #AsiloAssange y no se respeta la libertad de prensa, que contradiccion!

@ফারকাসকান্তে [স্প্যানিশ ভাষায়]: খোদার দোহাই, আমরা কোন দেশে বসবাস করি? তারা #এসিলোঅ্যাসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে, তবে তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করে না। কী রকম স্ববিরোধিতা এটা!

এলিয়াস সুয়ারেজের মতো অনেকে (@স্ল্যাশজার) [স্প্যানিশ ভাষায়] সন্দিহান:

@স্ল্যাশজার: Algo quiere Correa que Assange tiene, no lo duden.

@স্ল্যাশজার [স্প্যানিশ ভাষায়]: কোড়িয়া এমন কিছু চায় যা অ্যাসাঞ্জের কাছে আছে, এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

অথচ ইকুয়েডরের কিউয়েন্সা এলাকার ডেভিড জিমেনেজ আবাদের  (@ডেভিডজিমেনেজএ৯৩) [স্প্যানিশ ভাষায়] মতো অন্যরা উদযাপন করছে আর অভিবাদন জানাচ্ছে ইকুয়েডর সরকারকে:

@ডেভিডজিমেনেজএ৯৩: Bien por Ecuador al otorgar #AsiloAssange y no ceder a presiones internacionales

@ডেভিডজিমেনেজএ৯৩  [স্প্যানিশ ভাষায়]: ভাল কথা যে আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে ইকুয়েডর অ্যাসাঞ্জ #এসিলোএসাঞ্জকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিচ্ছে।

নিরাপত্তা গবেষক দিলান বেরেসফোর্ড  (@ডি১এন)  উল্লেখ করেছেন যে এই মামলাটি এখনো শেষ হয়নি:

@ডি১এন: এটা এখনো শেষ হয়নি। *উচিৎ* হলেও রাজনৈতিক আশ্রয়  জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ইকুয়েডরে নিরাপদ অনুপ্রবেশের নিশ্চয়তা দিবে না।

সম্প্রতি দি গার্ডিয়ানের সরাসরি কাভারেজ উল্লেখ করেছে যে “সুইডেন অ্যাসাঞ্জের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যায়িত করে ইকুয়েডরের রাষ্ট্রদূতকে স্টকহোমে তলব করেছে।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .