মিয়ানমারঃ দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় বদ্বীপ অঞ্চল আক্রান্ত

মিয়ানমারে বন্যা এখন একটি বার্ষিক শোকাবহ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আগস্ট মাস হচ্ছে বর্ষাকালের মাঝামাঝি এবং প্রবল বর্ষণের কারনে ইরাবতী বিভাগের বদ্বীপ অঞ্চলগুলো বন্যা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

বন্যায় প্রায় ৭২৭ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং ৩০ হাজারেরও বেশি লোক সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েছে। ২০৭ টি জরুরী ক্যাম্পে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে । দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বিবেচিত এই বন্যা চলাকালে প্রায় ৯৫ টি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে [মিয়ানমার]। বদ্বীপ অঞ্চল ছাড়াও ইয়াঙ্গুন এবং  শান রাজ্যের লাশিও বন্যা প্লাবিত এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অনেক নেট নাগরিকেরা বন্যায় আক্রান্ত অসহায় মানুষের পাশাপাশি ধান উৎপাদনের সম্ভাব্য ক্ষতির ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যেখানে প্রায় ৫৩ হাজার একর  জমির ধান প্লাবিত হয়েছে।

Myanmar's worst flooding in a decade. Photo by Nay Myo Zin, via Facebook.

মিয়ানমারে এই দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। ছবি তুলেছেন নাই মাইও জিন, ফেইসবুক হতে।

মিগ ওয়াইগন চিন্তিত [মিয়ানমার] যে আগামী দিন গুলোতে ধানের দাম অবশ্যই বাড়বে:

সুতরাং ধানের দাম বেড়ে যাচ্ছে।

নিলার আই [মিয়ানমার] সেসব কৃষকদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যাদের জমি এখন অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা পরিচালিত:

আজকের অবস্থান মিয়ানমারের জন্য ঝামেলাপূর্ণ। প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং দালাল যারা অন্যায়ভাবে জমির মালিকানা গ্রহণ করেছে তাদের হুমকি থেকে কৃষকদের রক্ষা কর।

অনেক স্বেচ্ছাসেবী দল বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। কিছু দল প্রবাসী বার্মিজদের কাছ থেকে অনলাইনে অর্থ সাহায্য তুলছে, যেখানে অন্যরা সরাসরি আক্রান্ত এলাকার জরুরী ক্যাম্পে সাহায্যের জন্য যাচ্ছে [মিয়ানমার]। নেই মাইও জিন ফেইসবুকের মাধ্যমে এসব বন্যায় আক্রান্ত গ্রামে  সাহায্যের জন্য যোগাযোগের আবেদন জানিয়েছেনঃ

পাঠক, দয়া করে থার পাঙ্গের আশেপাশের স্বেচ্ছাসেবকদের জানিয়ে দিন যাতে তারা সোমবার রাতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে।

কোন রাস্তাগুলো প্লাবিত হয়েছে? কোথায় আমাদের নৌকা বদল করতে হবে? প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কোনটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিনতে হবে? ত্রানের জন্য সবচেয়ে ভাল রাস্তা কোনটি? থার পাং থেকে এলাকাবাসী, অনুগ্রহ করে আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আমি সবকিছু আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।

মিয়ানমারের দূর্যোগ উদ্ধারে অনলাইন স্বেচ্ছাসেবী দল (ও ভি ডি আর ফর এম এম), যেটি গত বছর পাক্কাকু বন্যার্তদের সাহায্যে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল, ত্রান কেন্দ্রের কিছু অবস্থানকারী সম্পর্কে লিখেছেঃ

থার পাং শহরের ৯০ ভাগ অংশ মারাত্মকভাবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আক্রান্তরা বৌদ্ধ মঠ ও ক্রীড়া হলের সঙ্কীর্ণ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। শহরের চতুর্দিকে বন্যার পানির কারনে নিয়মিত খাবার পাওয়া খুব কঠিন। মানুষ পরিষ্কার পানির চরম সংকটে ভুগছে। বৃষ্টি হচ্ছে এবং বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

আমরা সেই দলগুলোর সাথে যোগাযোগ করছি যারা দ্রুত ত্রান দিতে পারে এবং সংগৃহীত অর্থ যাতে আক্রান্ত এলাকায় পৌঁছে তা নিশ্চিতের জন্য জরুরী কাম্প থেকে প্রতিনিধিরাও রয়েছেন।

যেহেতু শুধুমাত্র স্থানীয় লোকজন এবং স্বেচ্ছাসেবক দলগুলোই আক্রান্ত এলাকায় সাহায্য প্রদান করছে; তাই কেউ কেউ কিছু এনজিও’র অবস্থান এবং নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন যারা মিয়ানমারের চিরাভ্যস্ত অনেক বিষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর।

মাইট সন বাঁধ প্রকল্পের কিছু ছবি আপলোড করেছেন খন জা যেটি সম্ভবত সেখানকার অধিবাসীদের প্রতিবাদে স্থগিত হয়ে যায়। খন জা’র মতে, বাঁধটি দেশের বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিতঃ

আমি স্বীকার করিনা যে এটা প্রাকৃতিক দূর্যোগ। গত বছর পাক্কাকু বন্যায় ভুগেছিল। চলতি বর্ষাকালে আইয়ারওয়াদি নদী জুড়ে সমস্ত জায়গাগুলোই প্লাবিত হয়েছে। এটা ভবিষ্যতেও ঘটবে।

ইন মাই অথবা ম্যায় খা’র উভয় পাশে ৩ ফারলং প্রস্থ এবং 30 মাইল দৈর্ঘ্য করে খনন করা হয়েছে। এটা সরাসরি ইরাবতী নদী সংলগ্ন মানুষের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে।

একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, নাই মাইও জিন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের জন্য জান্তাকে দোষারোপ করেছেনঃ

প্রত্যেক আনাড়ি গভর্নরকে আমি মন থেকে ঘৃণা করি যারা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রাকৃতিক বন এবং নদীগুলোকে ধ্বংস করেছে। আমি তাদের জন্য জনগনের বর্তমানে ভোগকৃত কষ্টের প্রত্যাশা করি না। কিন্তু আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং কোনভাবেই তাদের ক্ষমা করতে পারব না। মিয়ানমারের বন্যার্ত দরিদ্র জনগনের ছোট মুখগুলো, প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং ক্ষুধা আমি যত বেশি দেখব, তত বেশি আমি তাদের ক্ষমা করতে পারব না।

মিয়ানমারের বদ্বীপ অঞ্চলের বন্যা। ছবি তুলেছেন নাই মাইও জিন, ফেইসবুক হতে

মিয়ানমারের বদ্বীপ অঞ্চলের বন্যা। ছবি তুলেছেন নাই মাইও জিন, ফেইসবুক হতে।

তালা চান মুন দেশের জলনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নতির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান:

আমাদের একটি শক্তিশালী জলনিষ্কাশন ব্যবস্থার দরকার। প্রবল বর্ষণে বন্যা স্বাভাবিক। কিন্তু বৃষ্টির পানি সাগরে দ্রুত পতিতের জন্য আমাদের নদীগুলোর আরও ভালো প্রবাহ, জলস্রোত এবং পয়ঃনালী প্রয়োজন।

সুন্নেয় হলা বন্যা ঝুঁকি হ্রাসের জন্য একটি দীর্ঘ পরিকল্পনার অনুরোধ জানিয়েছেনঃ

জরুরী প্রারম্ভিক প্রতিক্রিয়ার দলই যথেষ্ট নয়। আমাদের দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রশমন এবং অভিযোজন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .