বিশ্ব: আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শ্রেণিকক্ষের বাইরে এসে ওয়েবে ঠাঁই নিচ্ছে

আমাদের এই পোস্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ কভারেজ এর অংশ।

শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট এবং ওয়েব ২.০ এর মাধ্যমে এখন খুব দ্রুত ও সহজেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের (আইআর) ওপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বৃত্তির তথ্য, কোর্স, বইপত্র সম্পর্কে জানতে পারছে। এসব তথ্য এখন অনলাইনে সহজলভ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রিধারী, বর্তমানে সানফ্রান্সিসকো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সঞ্জয় ব্যানার্জি ইমেইল যোগাযোগে বলেন:

প্রাযুক্তিক উন্নয়নের বিশেষত ইন্টারনেটের প্রধান সুবিধা হলো, এটা গবেষণা কাজকে খুব দ্রুততর করে। গুগল স্কলারের মতো সার্চ ইঞ্জিনে যে কেউ আগের চেয়ে আরো দ্রুত ওই বিষয়ের ওপর আর্টিকেল, বইপত্র খুঁজে পাবেন। অবশ্য পড়া, বুঝতে পারার কাজটা সহজ নয়। আমি ছাত্রাবস্থায় যা পড়েছি, তার চেয়ে আমার ছাত্ররা আরো বেশি বিষয়ে পড়ে।

৯০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের শিক্ষার্থী, বর্তমানে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের উর্ধ্বতন প্রকল্প ব্যবস্থাপক শাহজাদা আকরাম আরো যোগ করেন:

বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের নীড়পাতা

বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের নীড়পাতা।

এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অঞ্চল বলে পরিচিত আরব দেশগুলোতে। আর এটা হয়েছে আরব বসন্তের মাধ্যমে। উইকিলিকস কুটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্টগুলোর মধ্যে প্রভাব ফেলেছে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাগুলো টেলিভিশন এবং ইন্টারনেটে সরাসরি সম্প্রচার হয়েছে। আর এগুলো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্ব এবং পড়াশোনার প্রথাগত পদ্ধতি, কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করছে। এখন আইআর একটা শাখা হিসেবে এটা অনেকটা ওয়েব-বেজইড হয়ে গেছে (আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলা যায়)। মিডিয়া এবং কমিউনিকেশনের ওপর নতুন নতুন কোর্স ফোকাস করার মাধ্যমে আইআর সাম্প্রতিক সময়ের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখছে। আইআর একটা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এখন আর কয়েকটা আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং এটা আরো বেশি উন্মুক্ত হয়েছে, এর ভেতরে ঢোকা আরো সহজসাধ্য হয়েছে।

তাছাড়া ইতিহাসবিদ জুয়ান কোলের মতো ‘এক্সপার্ট ভয়েস’ এর সংখ্যা বেড়েছে। যারা শ্রেণীকক্ষে পড়ানো বাদ দিয়ে ব্লগে, টুইটারে, ইউটিউবে এবং ফেসবুকে পড়াচ্ছেন।

আকরাম মনে করেন, ‌সফট ডিপ্লোম্যাসি’র মতো ধারণার ব্যাপক ভিত্তি পেতে এই ‘এক্সপার্ট ভয়েস’ সাহায্য করবে। সরকারও তাদের কার্যক্রম ও নীতি নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সতর্ক হয়েছে।

অন্যদিকে অনেক ‘এক্সপার্ট ভয়েস’ বিভ্রান্তি তৈরী করতে পারে। অধ্যাপক ব্যানার্জি বিশ্বাস করেন:

শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্লগ এবং অন্যান্য সামাজিক মিডিয়ার গুরুত্ব খানিকটা কম। সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখানে যথেষ্ট প্রাজ্ঞতার সাথে লেখা হয় না। একাডেমিক লেখালিখির বিকল্প হিসেবেও একে ব্যবহার করা যায় না।

পুসান ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট কেলী, যিনি রবার্ট কেলী-এশিয়ান সিকিউরিটি ব্লগের একজন ব্লগার তিনি ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিসসিপিউলাস ব্লগে মন্তব্য করেছেন:

অবশ্য ইন্টারনেট এসে পড়াশুনার বিষয় পরিবর্তন করছে। আমরা ব্লগকে আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করছি। আমার ধারণা, বৈদেশিক নীতিতে ওয়াল্ট ফ্ল্যাগশিপ ব্লগে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করেছে। কিন্তু ড্যাজনার  এক্ষেত্রে অগ্রগামী। এখানে ডাক অব মিনার্ভার মতো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর ব্লগ রয়েছে।

তিনি সতর্ক করে দেন যে, ব্লগিংয়ের প্রকৃত মূল্য হল ধারনা মানসম্পন্ন কি না তা পরীক্ষা করে দেখা। যা নিয়ে আপনি জার্নালে জমা দেয়ার জন্য চূড়ান্তভাবে কাজ করবেন।

দ্য ডাক অব মিনার্ভা নামের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর ব্লগটির স্ক্রিনশট।

২০১২-এর জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শাখায় সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েব ২.০ কিভাবে প্রভাব ফেলছে সেটার ওপর একটি জরিপ প্রকাশ করে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন। ড্যানিয়েল ডব্লিউ ড্যাজনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে তার ব্লগে ফলাফলের একটা আকর্ষণীয় খণ্ডচিত্র প্রকাশ করেছেন:

  • ২৮% এর বেশি অংশগ্রহণকারী তাদের স্কলারশিপের জন্য ব্লগের পোস্ট উল্লেখ করে এবং ৫৬% এর বেশি ব্লগকে শিক্ষার টুল (উপকরণ) হিসেবে ব্যবহার করে। ৯০% অংশগ্রহণকারী বলেছে, তারা পড়ার জন্য ইউটিউব ব্যবহার করে।
  • ৯০% অংশগ্রহণকারী বিশ্বাস করে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ব্লগ বৈদেশিক নীতি প্রণয়নে প্রভাব ফেলে। আর ৫১% এর বেশি অংশগ্রহণকারী মনে করেন, এই ধরনের ব্লগ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ২০টি দেশ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। এটা পাওয়া যাবে এখানে

কিছু উর্ধ্বতন শিক্ষাবিদের আপত্তি থাকলেও আইআর শিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক মিডিয়ার ভুমিকা বাড়ছে।

ISN logoআন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে বিশ্ববাসী নাগরিক কণ্ঠস্বর খোঁজার অভিপ্রায়ে ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (আইএসসি) এই পোস্ট এবং স্প্যানিশ, আরবি এবং ফরাসি ভাষায় এর অনুবাদ অনুমোদন দিয়েছে। এই পোস্ট প্রথম প্রকাশিত হয় আইএসএন ব্লগে। এ ধরনের আরো লেখা দেখুন এখানে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .