- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারত: আমির খানের সামাজিক বিষয়ে টিভি অনুষ্ঠান আলোড়ন তুলেছে

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি

সত্যমেভ জয়তে [1] (কেবল মাত্র সত্যের জয় হয়) নামে নতুন একটি ভারতীয় টিভি টক শো গত ৬ই মে শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানটিকে বিস্ময়ের সাথে জাতি গ্রহণ করেছে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বলিউড অভিনেতা ও চলচ্চিত্রকার আমির খান সমাজের কিছু অস্পৃশ্য বিষয় ও সংবেদনশীল বিষয় তুলে এনেছেন যা অনেক ভারতীয় কে আকৃষ্ট করেছে। প্রত্যেক রবিবার অনুষ্ঠানটি একই সাথে বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন ও সরকারী নেটওর্য়াকে প্রচারিত হয়, অনুষ্ঠানটি দেখার জন্য এ দিন দক্ষিণ এশিয়ার লক্ষ লক্ষ দর্শক টিভি সেটের সামনে বসে থাকে।

“মেয়ে ভ্রুণহত্যা” নিয়ে করা প্রথম পর্বটি দেখার পর আমরিকান দেশী’ [2]র প্রতিক্রিয়া হলো:

দৈনন্দিন জীবনে আমরা চাইলেই চোখ বন্ধ করে ভান করতে পারি যে কোথাও কোন সমস্যা নেই। এই অনুষ্ঠান আমাদের বাসগৃহের ভিতরের সত্য, সঠিক তথ্য ও উপাত্তসহ তুলে এনেছে। আমরা আর ভান করতে পারি না যে এটা অন্য কারো সমস্যা। এটা আমাদেরই সমস্যা।

[3]দ্যা লাইফ এ্যান্ড টাইমস অফ এ্যান ইন্ডিয়ান হোমমেকার [4] একই বিষয়ের উপর নির্মিত দ্বিতীয় পর্বটি দেখে শিশু যৌন নিপীড়ন নিয়ে একটি সাহসী ইমেইল তুলে ধরেন:

সত্যমেভ জয়তে [5] গভীর ক্ষতকে স্পর্শ করেছে। অতীত থেকে নেয়া একটি উত্তরণের গল্প যেন শুনছি। যেন অন্ধকার গোপন কিছু গভীরে লুকায়িত ছিল, এমন কিছু যা আমার সমগ্র ব্যক্তিত্বকে  বদলে দিয়েছে এবং আমাকে বর্তমান আমি- তে পরিণত করেছে । আমার ছেলের সাথে কথা বলে বুঝতে পারি, বাড়ির পরিবেশে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যের জন্য বাড়িতে অনেক কিছুই শিশুদের দেওয়া হয় না। তথাকথিত সামাজিক “নিয়মাবলী, মূল্যবোধ” দ্বারা শৃঙ্খলিত ঘরের মধ্যেই যে শুধু শিশু নিপীড়ন হচ্ছে তা নয়,  যেখানেই শিশু আছে সেখানেই তারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনকারীদের লক্ষ্য হলো কোমলমতি শিশুরা, তারা শিশুদের সম্পর্কে সবকিছু জেনে শুনে তাদের বিশ্বাস অর্জন করে শিশুর জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমি নিপীড়ন থেকে বেঁচে ওঠা একজন।

প্রায় ৩০ বছর পর আমি নিরবতা ভঙ্গ করলাম।

ব্লগীয় পরিমণ্ডলে অনেক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। আমিরের “ভারতীয় স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থায় দুর্নীতি” – শীর্ষক অনুষ্ঠান থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে  হাফ এ কাপ অফ টি (অর্ধেক কাপ চা) ব্লগ [6] হাসপাতালে অপচিকিৎসার গল্প তুলে ধরেন; সত্যমেভ জয়তে- এর “যৌতুক” পর্বের কাহিনীর সাথে উজিচ কনিতারি [7]র গৃহকর্মীর মেয়ের জীবন কাহিনীর মিল আছে বলে তিনি লেখেন। মহেশ মুর্তি [8]আশা করেন সত্যমেভ জয়তে হয়ে উঠবে টেলিভিশনের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত একটি সামাজিক আন্দোলন। এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে টুইটার পরিমণ্ডলেও অনেক আলোচিত হয়:

প্রিয়াশা১ [9]: গতকাল সত্যমেভ জয়তে’র প্রথম পর্ব দেখলাম, এটি সত্যিই চমৎকার। এখন আমি জানি যে লোকজন কেন এটা পছন্দ করছে।

[10]

আমির খান, ছবি- ফ্লিকার ব্যবহারকারী জিডিসিগ্রাফিকস। সিসি-বাই এসএ

অনুষ্ঠানটি বিতর্ক মুক্ত নয়। চিকিৎসকদের অসদবৃত্তির উপর নির্মিত একটি পর্ব প্রচারের পর ভারতীয় মেডিক্যাল এসোসিয়েশন দাবি করে যে এতে চিকিৎসকদের সম্মানহানী ঘটেছে এবং এর জন্য আমির খানকে ক্ষমা চাইতে বলেন, কিন্তু আমির তার বিরুদ্ধে আনা যুক্তিগুলো খণ্ডন করেন [11] এবং ক্ষমা চাইতে অস্বীকার করেন। বলা হয়ে থাকে যে এ উচ্চ বাজেটের প্রোডাকশনের প্রতি পর্বের জন্য আমির খান ৩ কোটি রুপির (৬০০,০০০ মার্কিন ডলার) উচু দরের পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন। যাহোক অস্তিত্ব [12] সত্যমেভ জয়তে’র পক্ষে কথা বলে আমির খানের সমালোচনার জবাব দেন:

এমনকি ১২১ কোটি জনগণের ১% এরও যদি আচরণের পরিবর্তন হয় তবে আমি মনে করব আমির খানের জ্ঞানবাজী এবং তথাকথিত বিরক্তিকর বিপণন চমক আমাদের জন্য মুখরোচক হবে। ভারত কি বলে?

দেবলীনা রাজা গুপ্ত [13]১০ জুন ২০১২ পর্যন্ত সত্যমেভ জয়তে’র প্রদর্শিত বিষয়গুলোর তালিকা উপস্থাপন করেন:

১. পর্ব ১     – নারী ভ্রুণহত্যা

২. পর্ব ২     – শিশু যৌন নির্যাতন

৩. পর্ব ৩     – যৌতুক

৪. পর্ব ৪     – ভারতীয় চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থায় দুর্ণীতি

৫. পর্ব ৫     – সন্মান রক্ষার্থে হত্যা

৬. পর্ব ৬     – আমাদের দেশে শারিরীকভাবে অসমর্থদের সমস্যা

তিনি মনে করেন যে এই অনুষ্ঠানটি সমালোচনার পরিবর্তে প্রশংসার দাবি রাখে:

পরিশেষে আমি এই ধারণাকে সাধুবাদ জানাই, ভারতীয় টেলিভিশন দর্শক চেতনাহীন বউ-শ্বাশুড়ি কিংবা টেলিভিশনে প্রদর্শিত অন্যান্য সাধারণ গৎবাধা বস্তাপচা ধারাবাহিকের প্রতি মগ্নতা থেকে এ অনুষ্ঠানটি ব্যতিক্রমধর্মী।

শ্রীলঙ্কা থেকে ইণ্ডি.সিএ [14] এই অনুষ্ঠানের প্রশংসা করেন:

অনেক সামাজিক সমস্যার মতই, নিপীড়নের শিকারদের নিরবতা সংক্রান্ত ষড়যন্ত্রের বিষয়টি লজ্জার উদ্রেক করে। কিন্তু এই নিরবতা ভঙ্গ একটি সাড়া জাগানিয়া প্রভাব তৈরী করতে পারে। এ ধরণের কাজে আমির খানের তারকাখ্যাতির ব্যবহার একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবধান তৈরী করতে সক্ষম। এটা টেলিভিশনে একটি বাধ্যকর অনুষঙ্গ।

দেবলীনা [13] পরিশেষে বলেন:

আমির আমাদের সবাইকে ঝাঁকি দিতে এবং সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে অনুষ্ঠানটি দেখে সত্যিকার অর্থে আমরা কতটুকু কি করতে পারব এবং তা আমাদের উপর কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবে তা ভাববার বিষয়।