আফগানিস্তানঃ স্কুলে যাওয়ার কারণে ছাত্রীদের বিষ প্রয়োগ

আফগানিস্তানের উত্তরপূর্ব অঞ্চলের প্রদেশ তাকহার-এর এক স্কুলের ৬৫ জন ছাত্রীকে ৩ জুন ২০১২ তারিখে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয় [ফার্সী ভাষায়], শরীরে বিষ প্রয়োগের কারণে তাদের এই দশা হয়। এই প্রদেশে ধারাবাহিকভাবে মেয়েদের স্কুলে সে সব হামলার ঘটনা ঘটছে, এটি তার মধ্যে সাম্প্রতিকতম। ২৯ মে তারিখে আরেকটি স্কুলে গ্যাস প্রয়োগে হামলার পর উক্ত স্কুলের প্রায় ১৬০ জন ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ বছরের বসন্তের শুরুতে দুটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে, স্কুল-বিরোধী একদল গোষ্ঠি হামলায় ২৭০ জনের বেশী ছাত্রী বিষাক্ত উপাদান দ্বারা আক্রান্ত হয়। গত বছর দেশ জুড়ে চালানো একই ধরনের হামলায় শত শত ছাত্রী আক্রান্ত হয়েছিল।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগান কর্তৃপক্ষ এই সব ঘটনার জন্য তালেবানদের দোষারোপ করে এসেছে। কিন্তু এরপর যখন এই মৌলবাদী দলটি দেশটির বেশীর ভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় তখন তারা মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করে। যদিও দেশ থেকে তালেবান শাসন অপসারণের পর লক্ষ লক্ষ মেয়ে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে, কিন্তু তালেবান জঙ্গী এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরা শিক্ষা লাভের জন্য যে বালিকা পথে বের হচ্ছে, তাদের ক্রমাগত শাস্তি প্রদান করে যাচ্ছে।

স্কুলে বিষাক্রান্ত কিছু কিশোরী স্কুলছাত্রী উত্তরের তাকহার প্রদেশের রাজধানীর একটি হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। ছবি পাজহোয়াক আফগান নিউজের, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (১৮/০৪/২০১২)।

যেহেতু শিক্ষা নিতে আসা বালিকার ক্রমাগত আক্রমণ এবং সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছে, যার ফলে আফগানিস্তানে একটি মেয়েকে স্কুলছাত্রী হবার জন্য একজন যথেষ্ট সাহসী হতে হয়। ছবি তেরেসা নাবাসির-এর, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (০৩/ ০৭/ ২০০৯)।

তালেবান নামক সংগঠনটি স্কুল বিরোধী হামলায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করে আসছে। তারপরে, তারা কাউকে সহজে তা বিশ্বাস করাতে পারছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন ব্লগার এরিকা এম. জনসন, লিখেছেন:

মেয়েদের স্কুলে এবং ছাত্রীদের উপর হামলা চালানো তালেবানদের জন্য এক সাধারণ কৌশলে পরিণত হয়েছে। নারীদের কেবল সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহারও তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। একই সাথে তারা, শিক্ষা লাভ করতে চাইলে [নারীদের] অবশ্যই শাস্তি প্রদান করবে। যদিও তালেবানরা এই ধরনের হামলায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করছে, কিন্তু এই ব্যাপারে তাদের নিজস্ব ইতিহাস রয়েছে– যার মধ্যে দিয়ে দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত চলা তালেবান শাসনামলে অনেক মেয়েকে স্কুলে যেতে দেওয়া হয়নি- যে বিষয়টি ধারনা দিচ্ছে যে নারী শিক্ষা, তালেবানদের আগ্রহ বিরুদ্ধ একটি বিষয়।

এরিকার লেখার প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের আরেকজন ব্লগার ক্যাথেরিন লোরাইনি ব্যাখ্যা করেন:

নারীদের শিক্ষা প্রদান, যৌন সমতা আনার দ্রুত এবং বাস্তবিক উপায়। ফলে স্বাভাবিক ভাবে তালেবানদের সকল পুরুষ শ্রেণী নারীদের অবদমিত করে রাখতে চায় এবং সমাজের সর্বনিম্ন অবস্থানে জীবন যাপনে বাধ্য করে।

পুরস্কার বিজয়ী লেখিকা জুডি মোলান্ড ঘোষণা প্রদান করেছেন:

কেউ যদি শিশুদের প্রতি এতটা ঘৃণা পোষণ করে যে তাদের উপর সে বিষ প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে সে তার নিজের ভেতরের মানবতাকে হারিয়েছে।

আফগান ব্লগার হুসাইন ইব্রাহিম লিখেছে [ ফার্সী ভাষায়]:

 حال دشمنان افغانستان از ابزار دیگری برای پیروزی شان در جنگ و مخالفت با دولت افغانستان استفاده می کنند و این ابزار چیزی نیست جز مسموم کردن شاگردان مدرسه ها و بسته شدن این نهادهای تعلیمی و آموزشی در ولایت های مختلف افغانستان که نگرانی ها را روز به روز افزایش می دهد و این خود می تواند ضربه بزرگ باشد برای دست آوردهای ده ساله افغانستان که باز شدن نهادی های تعلیمی و آموزشی بعد از سرنگونی رژیم طالبان خود یکی از بزرگترین دستآوردهای این دهه اخیر است.

আফগানিস্তানের শত্রু এখন [দেশটির] সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক নতুন কৌশল চালু করেছে। আর এই কৌশলের অংশ হিসেবে স্কুলের ছাত্রীদের বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছে, যাদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন প্রদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া… যার ফলে কিনা তালেবান শাসনের পর নতুন স্কুল স্থাপনের মত এক দশক ধরে অর্জন করা একটি বিষয়ের সাথে তীব্রভাবে আপোষ করতে হতে পারে।

কিছু নাগরিকের জন্য, আফগানিস্তানে স্কুল বিরোধী হামলার সংবাদ শিক্ষার প্রতি তাদের আচরণ পুনঃবিবেচনার বিষয়। দিনেতা কুভার টুইট করেছে :

@ওয়ার্ডসঅফদিনেতা: তালেবানরা আফগানিস্থানের মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখার জন্য, পানি বিষাক্ত করে রাখা হচ্ছে। আর আমি এসএমএইচ-এর পড়া নিয়ে অভিযোগ করছি।

নেট নাগরিকরা শঙ্কিত যে ২০১৪ সালে দেশ থেকে ন্যাটো পরিচালিত বিদেশী সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার পর তালেবান এবং অন্য মৌলবাদী দলগুলো শিক্ষা থেকে দুরে রাখার জন্য মেয়েদের প্রতি আরো প্রচণ্ড ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।

চোলে লোগান ইয়াহুর একজন সংবাদ প্রদায়ক, যিনি লিখেছেন:

এই ধরনের হামলা যখন সংঘটিত হচ্ছে, তখনও আফগানিস্তানে ন্যাটোর সেনাবাহিনী বিদ্যমান। আমরা বিস্মিত হব, বালিকাদের যে নিরাপত্তা প্রদান করা হচ্ছে, তা যদি অপসারণ করা হয়। আর যদি তা প্রদান না করা হয়। তাহলে তারা তাদের শিক্ষা চালিয়ে যাবার মত সাহস ধরে রাখতে পারবে কিনা। আমরা জানি যে তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের শিক্ষায়, তারা যে বিষয়টির অভাবের মাঝে বাস করছে।

জ্যান নামের আরেকজন ব্লগার ধারনা করছে:

দুঃখজনক ভাবে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী “অনুষ্ঠানিক” ভাবে আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে যদি কোন আফগান বালিকা স্কুলে যাবার সাহস করে, আর যে কোন আফগান নারী যে শিক্ষা গ্রহণ করতে চায়, অথবা হাসপাতালে নার্স, অথবা সেক্রেটারি , অথবা কোন নিত্যপণ্যের দোকানে কেরানি হিসেবে কাজ করতে চায়, কিংবা অলিম্পিক দৌড়ের দলের জায়গা করে নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টারত কোন বালিকা, অথবা ব্যাডমিন্টন কিংবা দাবা খেলোয়াড় হতে ইচ্ছুক কোন বালিকা, অথবা কিভাবে পড়তে এবং লিখতে শিখতে হয়, এই বিষয় আগ্রহী যে সমস্ত নারী, আপনিও জানেন এবং আমিও জানি, আর আমরা সকলেই জানি, সেই সমস্ত মেয়েদের ক্ষেত্রে আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .