ইয়েমেন: যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা বৃদ্ধিতে ক্ষোভ

এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের উপর ড্রোন হামলার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে, যা ব্যাপকভাবে ক্ষোভ এবং উদ্বেগের সঞ্চার করেছে।

কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা বাড়তি অধিকারের মাধ্যমে সন্দেহভাজন আল কায়েদার ঘাঁটিগুলোর উপর এই ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে। এই ধরনের হামলায় সিআইএ এবং সামরিক বাহিনী, শুধুমাত্র ক্ষেত্রে গোয়েন্দা কার্যক্রমের “নির্দেশনা” অথবা কেবল মাত্র আচরণগত সন্দেহের ভিত্তিতে, হামলাকারীদের পরিচয় না জেনেই লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর অনুমতি লাভ করে।

ইয়েমেনি-আমেরিকান সামের নাসের টুইট করেছে:

@সামেরনাসের:#ইয়েমেন: মূলত, সিআইএ এবং সামরিক বাহিনী ড্রোন হামলা চালাতে পারে, এমনকি এই ঘটনায় নিহতদের পরিচয়ও যখন অজানা। রাষ্ট্রপতি ওবামা এই ধরনের হামলার অনুমতি প্রদান করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর জেনারেল এ্যাটমিক্সের তৈরী এম কিউ -১ প্রিডেটর নামক ড্রোন, যা কিনা পাইলটবিহীন এক বিমান। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী জেমস_গর্ডন_লস_এ্যাঞ্জেলস ( সিসি বাই এনসি২.০)

ইয়েমেনী লেখক এবং একটিভিস্ট ইব্রাহিম মোথানা, এই ড্রোন নীতির বিষয়ে মন্তব্য করেছে:

@ইমোথানাইয়েমেন: ড্রোন হামলা বৃদ্ধি, ইয়েমেন বা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের অনুকূলে কাজ করবে না। এটা কেবল আদিবাসী এলাকায় তালেবানীকরণ-এর মত ঘটনা বাড়াতে থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক এবং ইয়েমেন টাইমস-এর প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জেব বুন বলছে:

জেববুন :ড্রোন হামলা কেবল যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী এবং আল কায়েদির-পন্থী অনুভূতির জন্ম দেবে না, এই ধরনের হামলা # ইয়েমেন সরকারের বৈধতার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করবে। বিপজ্জনক পরিস্থিতির তৈরী করবে।

এখন দক্ষিণ ইয়েমেনের লক্ষ্যবস্তুর উপর ড্রোন হামলা চালানো হচ্ছে এবং গবেষক আতাইফ আলয়াজির মন্তব্য করছে:

@ওমেনফ্রমইয়েমেন:এই বিষয়টি বেদনাদায়ক যে উত্তর ইয়েমেনের অনেক নাগরিক এই হামলার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে, কারণ এই ঘটনা তাদের উপর প্রভাব ফেলছে না। এটা অনেক বাড়াবাড়ি একটা বিষয়। #নর্থ #ইয়েমেন

জেরেমি স্কাহিল এক পুরস্কার বিজয়ী অনুসন্ধানী সাংবাদিক, যিনি ইয়েমেন, পাকিস্তান এবং সোমালিয়ায় ড্রোন ব্যবহারের বিপক্ষে যুক্তি প্রদান করেছেন, তিনি সম্প্রতি আল জাজিরা ইংরেজি টিভি চ্যানেলের জন্য একটি তথ্যচিত্র তৈরী করেছেন, যার শিরোনাম “আমেরিকার বিপজ্জনক খেলা”। এতে প্রশ্ন করা হয়েছে, পাকড়াও করে অথবা খুন করে যুক্তরাষ্ট্র কি আরো বেশী শত্রুর সৃষ্টি করছে কিনা।

সম্প্রতি, এপ্রিল ২৮-২৯ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আয়োজিত ড্রোন বিষয়ক সম্মেলন -এর সূত্রমতে মত ড্রোন হামলায় প্রায় ৩,০০০-এর মত নাগরিক নিহত হয়েছে, যার মধ্যে নিহত শত শত ব্যক্তি ছিল সাধারণ মানুষ। এই স্টোরিফাই (টুইটার ভিত্তিক কাহিনী), ড্রোন হামলা এবং ইয়েমেনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি বিষয়ক সম্মেলনের থেকে কিছু টুইট সংগ্রহ করেছে। এই সম্মেলনে জেরেমি স্কাহিল-এর ভাষণ এখানে দেখতে পাওয়া যাবে।

লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটি ভিত্তিক ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নাল ইয়েমেন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ছদ্ম হামলার পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে:

২০০১-২০১২ সাল পর্যন্ত ইয়েমেনে, যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ছদ্ম হামলা
যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত মোট হামলার সংখ্যা :৪১ – ১৩২
যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ড্রোন হামলা: ৩১-৬২
সংবাদে প্রাপ্ত মোট নিহতে সংখ্যা: ২৯৪- ৬৭৩
প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে নিহত মোট সাধারণ নাগরিকের সংখ্যা: ৫৫-১০৫
প্রাপ্ত সংবাদ অনুসারে নিহত মোট শিশুর সংখ্যা:২৪

এ ছাড়াও ব্যুরো অভ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নাল, ইয়েমেনে চলানো যুক্তরাষ্ট্রের ছদ্ম হামলার প্রাপ্ত রিপোর্টের বিস্তারিত ডাটা সংগ্রহ করেছে।

৩০ এপ্রিল তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সন্ত্রাস প্রতিরোধ উপদেষ্টা জন ব্রেনানরাষ্ট্রপতির সন্ত্রাস প্রতিরোধ নীতি এবং কার্যকারিতা” শিরোনামে এক বক্তৃতা প্রদান করেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোনের ব্যবহারকে সমর্থন করেন। একটিভিস্ট মেডেয়া বেনজামিন তাকে এবং পাকিস্তান, ইয়েমেন এবং অন্যান্য দেশে ড্রোনের মাধ্যমে হত্যার মত ঘটনাকে চ্যালেঞ্জ করেন, যেমনটা এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে:

“এক সাহসী নারী, সিআইএ-এর ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে কথা বলছে” শিরোনামের এক লেখায় ইয়েমেনী ব্লগার আফ্রা নাসের, মেডেয়া বেনজামিনের সাহস ও তার বক্তব্যের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছে:

“আমাদের ড্রোন হামলায় পাকিস্তান, ইয়েমেন, এবং সোমালিয়ায় শত শত নিষ্পাপ নাগরিকের হত্যার বিষয়ে কি বলা উচিত? আমি সেই সমস্ত নিষ্পাপ নাগরিকদের হয়ে কথা বলছি। ব্রেনান তারা আপনার ক্ষমা প্রার্থনার দাবীদার। আপনি কতগুলো নাগরিকের জীবন উৎসর্গ চান? কেন আপনি আমেরিকার নাগরিকদের কাছে মিথ্যা বলছেন এবং তাদের জানাচ্ছেন না, এই ধরনের হামলায় প্রকৃতপক্ষে কতগুলো নাগরিক নিহত হয়েছে? লজ্জাকর বিষয়! “

ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ নীতি” নামক পোস্টে সম্প্রতি আমি যেমনটা বলেছি:

ইয়েমেনের মাটিতে সন্দেহভাজন আল কায়েদা নেতাদের হত্যার জন্য ড্রোনের ব্যবহার, কিশোর এবং অন্যান্য সাধারণ নাগরিকদের অন্যায় ভাবে হত্যাকে খুব সাধারণ ভাবে “ঘটনাক্রমে সৃষ্ট ক্ষতি” বলে উল্লেখ করা হচ্ছে এবং এক সাংবাদিকের এক অন্যায় সঙ্গা, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আরো শত্রুতার সৃষ্টি করেছে।[…] কেবল মাত্র “আল কায়েদার” বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইয়েমেনকে সাহায্য করা এবং নিষ্পাপ নাগরিক হত্যার জন্য দায়ী ক্রমাগত ড্রোন হামলা চালানো বন্ধ করে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস প্রতিরোধ নীতিকে পরিষ্কার ভাবে মূল্যায়ন করা উচিত, যে এই বিষয়টি সামাজিক অর্থনৈতিক কারণের মধ্যে নিহিত, যার কারণে সন্ত্রাসের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই ঘটনা, যুক্তরাষ্ট্রকে সাধারণ ইয়েমেন নাগরিক থেকে বিচ্ছিন্ন করছে, তার প্রতি অন্যদের ক্ষোভ তৈরী করছে এবং এই ধরনের উগ্রবাদী জেহাদি দলে যোগ দেবার জন্য এক কারণের সৃষ্টি করছে।

এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .