দক্ষিণ কোরিয়াঃ জেজু নৌ ঘাটি নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু দ্বীপে নৌ ঘাটি নির্মাণের প্রতিবাদে গাংজেওং গ্রামের অধিবাসীরা কয়েক বছর ধরে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক এই প্রকল্পটি যেহেতু ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থানে অবস্থিত সেহেতু প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয়দের সম্মতির প্রয়োজন। জে জু অধিবাসীদের ৯৪% এ ঘাটি স্থাপনের বিপক্ষে মত দিয়েছে।

যদিও এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরীয় সরকার প্রকল্পটি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই রয়েছে। ৭ মার্চ, ২০১২ তারিখে দক্ষিণ কোরীয় নৌবাহিনী এবং নির্মাণ কোম্পানি স্যামসাং কর্পোরেশন তীরবর্তী পাথুরে ভিত্তিভূমি ফাটানোর কাজ শুরু করে। পরবর্তী দিনে হাজারও সক্রিয়তাবাদী দ্বীপে চলে আসে এবং পোতাশ্রয় নির্মাণের জন্য তীরবর্তী পাথর যেন আর না ফাটানো হয় সে বিষয়ে নৌ বাহিনীকে কাজ বন্ধ করতে বলে। এ ঘটনায় অনেকেই গ্রেফতার হয়।

দ্বীপের অধিবাসী ও সক্রিয়তাবাদীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ  এবং কিভাবে নৌ স্থাপনা দ্বীপটির তটরেখাকে ধ্বংস করতে পারে তার প্রচারণামূলক ভিডিও চিত্রঃ

৭ মার্চ ফেসবুকে প্রকাশিত কোরীয় যুদ্ধ বন্ধে জাতীয় প্রচারণা- তে পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করা হয়ঃ

জেজুতে তটরেখায় বিস্ফোরণ বন্ধে সক্রিয়তাবাদীদের উদ্যোগ।

জেজুতে তটরেখায় বিস্ফোরণ বন্ধে সক্রিয়তাবাদীদের উদ্যোগ। ছবি- ফেসবুকে কোরীয় যুদ্ধ বন্ধে জাতীয় প্রচারণা-এর সৌজন্যে।

পবিত্র বলে বিবেচিত জেজু দ্বীপের গুরেওম্বি আগ্নেয় তটরেখায় জেজুর গভর্নর উ কর্তিক দক্ষিণ কোরীয় নৌবাহিনীকে বিস্ফোরণ বন্ধের আবেদন জানানো সত্বেও নৌবাহিনী এবং স্যামসাং কর্পোরেশন তীরবর্তী এলাকায় ৮০০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন। গত পাঁচ মাসে সেখানে ৪৩ টন বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

স্থানীয় বিশ্লেষকেরা মনে করেন যে  যদি ক্ষমতাসীন দল এপ্রিলের সাধারণ নির্বাচনে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভে ব্যর্থ হয় তাহলে রাষ্ট্রপতি লী মুং ব্যাকের নৌ ঘাটি নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে তাড়াহুড়া করার অভ্যাস স্থায়ী ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইতিমধ্যে এ ধরনের পদক্ষেপের কারনে অনেক সাধারণ নাগরিক উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

জেজুকে রক্ষা কর- শীর্ষক ফেসবুক পাতায়, জেজু অধিবাসীরা ও সক্রিয়তাবাদীরা তথ্য নবায়নের কাজ শুরু করেছেন। পাথুরে পরিধি প্রাচীর ভেদ করে প্রায় ২০ জোন সক্রিয়তাবাদী গুরম্বি পাহাড়ে প্রবেশ করেছে। ৯ মার্চ সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়েছেন সু লীঃ

জেজুতে ৫ জন জেজু অধিবাসীসহ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আগত ডেনিস ও আর ৯ জন সক্রিয়তাবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

৭ মার্চ কি দেখেছেন সে বিষয়ে ইমক চা বর্ণনা করেনঃ

Police line. By Imok Cha on Facebook.

পুলিশের সারিঃ ছবি- ফেসবুকে ইমক চা এর সৌজন্যে

৩ স্তরের পুলিশ বেষ্টনী দিয়ে গাংজুং পুরোপুরি অবরুদ্ধ ছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, আনুমানিক দুপুর দুইটার দিকে। ৫ মাস ধরে বিস্ফোরণ ঘটানোর অনুমোদন আছে। কয়েক দফায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। গেটের কাছে ৮ টন এবং  দূরে পশ্চিম প্রান্তে ৩৫ টন বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণের জন্য গুরুম্বীতে তারা ৪.৫ মিটার গভীর গর্ত করে। কেন তারা এটা করছে!!!

হায়েন লী ছিলেন খুবইআশাহতঃ

এ প্রকল্পটি একটা বেকুবি ছাড়া আর কিছুই না! এমন কাজ আমরা কেন করব যা আমরা  কখনই পুনরুদ্ধার করতে পারবনা এবং যার জন্য আমাদেরকে নিশ্চিতভাবেই অনুশোচনা করতে হবে! দয়া করে বন্ধ কর এসব!

সুং হী এমেওং বলেনঃ

এটা অনেকটা পৃথিবীর মূল্যবান অংশ হারানোর মত।

এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের অবশ্যই মাথা ঘামানো উচিত। এটা কোন মামুলি সমস্যা নয়,এটা পৃথিবীর একটা দ্বীপের সমস্যা!

জেজুতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব সংরক্ষণ কংগ্রেস শুরু হওয়ার আগে সরকারের এ ধরনের কার্যকলাপকে এরিন ক্যাং পাগলামী বলে মনে করেনঃ

এটা পুরোপুরি হাস্যকর যে গাংজেওং এ এখন যা ঘটছে সে পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বর ১০১২ তে জেজুতে বিশ্ব সংরক্ষণ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ও সংবাদ সংস্থাদের এ ভণ্ডামির বিষয়ে জানানো উচিত। দয়া করে আয়োজকদের মেইল করুন এবং প্রচার মাধ্যমকে সতর্ক করুন।

গাংজেওং এ চলমান নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে আর বেশি মানুষকে জানানোর জন্য আমাদের  সম্ভাব্য উপায় খুঁজে বের করতে হবে।

পরিবেশগত দিক ছাড়াও আন্তর্জাতিক শান্তি আন্দোলনের কর্মীরা বিশ্বাস করে যে চীনের চারপাশে আঞ্চলিক সামরিক কৌশলের অংশ হল এই নির্মাণ। এ পরিস্থিতি জেজু অধিবাসীদের একটা আঞ্চলিক উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিবে। জেজু দ্বীপ রক্ষা কর- কোন নৌ ঘাটি নয়- আবেদনে বলা হয়েছেঃ

পাঁচ বছর আগে নৌ ঘাটি নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও ৯৫% জেজুবাসী ভোটের মাধ্যমে এর বিরোধিতা করেছে। এখনও তাঁদের প্রতিবাদ আপনাদের সরকারের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করছে না।

চীনকে বেস্টন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে দক্ষিন কোরিয়ার সরকার তাঁর নিজ দেশের দ্বীপবাসীদের নিরাপত্তা বিসর্জন দিতে প্রস্তুত বলে স্থানীয় অধিবাসীরা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সে বিষয়ে আমরা একমত। নৌ ঘাটি স্থাপনে কোরীয় জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জেজু অধিবাসীরা প্রত্যাখান করেছে। তাঁরা জানেন এটা ভবিষ্যতে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে এবং দ্বীপটিকে সামরিক সংঘাতের প্রধান ক্ষেত্র করে তুলবে।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের শান্তিবাদী কর্মীরা দ্বীপটি ভ্রমণ করেছেন এবং স্থানীয় আন্দোলনে আরও বেশি আন্তর্জাতিক সমর্থনের দাবি জানিয়েছেন। প্রেসিয়ান.কম থেকে অনুবাদ করে  ইমক চা জানানঃ

নোবেল শান্তি পুরষ্কার প্রার্থী আঞ্জি জেটলার আরও ২ সপ্তাহ গাংজুং এ অবস্থান করবেন। গতকাল তিনি গুরুম্বি তীরের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং সেখানে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি বলেন আরও অনেক শান্তি রক্ষী এখন এখানে দরকার।  পরিবেশ রক্ষায় সরকারের নির্জলা মিথ্যা ও পরিবেশ রক্ষায় গ্রামবাসীর আন্দোলন দেখে তিনি বিস্মিত।

জেজু প্রতিবাদের একজন সক্রিয় কর্মী ব্রুস গাংনন আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তাঁর ব্লগে বলেনঃ

জেজু দ্বীপে আন্তর্জাতিক শান্তি কর্মীদের এ সময়ে পাঠানো  মানে এই যে বৈশ্বিক শান্তি আন্দোলনের কর্মীরা যাতে স্থানীয় সংগ্রামের কৌশল পরিষ্কার ভাবে উপলব্ধি করতে পারে।  এশিয়া- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে ওবামা কর্তৃক “সর্বোচ্চ গুরুত্ব” প্রদানের ঘোষণা এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিকবাহিনীর কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দ্বৈততা সৃষ্টি করবে- আর এক্ষেত্রে চীন তীরবর্তী এলাকায় নৌ বাহিনীর আরও পোর্ট- অব- কল এর প্রয়োজন হবে। আর এক্ষেত্রে গাংজেওং গ্রাম কেবল ৩০০ মাইল দূরে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .