ইয়েমেন: ১২ জানুয়ারি, খাটবিহীন একটি দিন

এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ। .

খাট হচ্ছে এক বিশেষ পাতা যার মধ্যে এমফিটামিন নামক উদ্দীপক বিদ্যমান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে মাদক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইয়েমেনের বেশীরভাগ পুরুষ এবং নারী প্রায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কাট চিবিয়ে থাকে। বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে অনেক সময় শিশুরাও কাট চিবিয়ে থাকে। এটা একটা সামাজিক অভ্যাস, যা শেষে নেশায় পরিণত হয় এবং যা দেশটির দারিদ্র সীমার নীচে বাস করা ৪৫ শতাংশ নাগরিকদের কথা বিবেচনা করলে তা অনেক ব্যায়বহুল।

যেমনটা আমি আমার ব্লগে নির্দেশ করেছি :

প্রায় প্রতিটি ইয়েমেনীর বাসগৃহে খাট নামক মাদক এক মহামারির রুপ ধারণ করেছে, এবং তা ইয়েমেনের কৃষি, অর্থনীতি স্বাস্থ্য এবং সমাজের ভেতর এক সুনির্দিষ্ট প্রভাব তৈরি করছে। এখন এক গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং জাতি এই অভিশপ্ত খাট চিবিয়ে তাদের মুল্যবান এই সময়টা নষ্ট করছে, যা তাদের ইয়েমেন নিয়ে ভাবনা অথবা তা গড়ার জন্য কাজ করার মত ভাবনাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে।

ইউটিউবে, ফিউচারস্টোরীনিউজ১-এই ভিডিও পোস্ট করেছে। এই ভিডিওতে ইয়েমেনী নাগরিকদের জীবনে খাটের ভুমিকা এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে।

পরিবর্তনের জন্য যে বিপ্লব, যা ১১ মাস ধরে চলছে, তা দেশটির ৩৩ বছর ধরে শাসন করে আসা শাসক, আলি আবদুল্লাহ সালেহ এবং তার শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে। তারা এখন সরকারে দূর্নীতি এবং গণ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে। এখন তাদের খাট গ্রহণের বিরুদ্ধে সমাজের ভেতরে তাদের লড়াই বিস্তৃত করছে।

লেবাননে বাস করা ইয়েমেনী একটিভিস্ট হিন্দ আলএরিয়ানি, ফেসবুক এবং টুইটারে এক সামাজিক প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা ১২ ফ্রেবুয়ারি, ২০১২-এ অনুষ্ঠিত হয়। এই উদ্যোগের নাম,”ইয়েমেনে কাট বিহীন একটি দিন”। সারা বিশ্বে সবাই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং ইয়েমেনের টুইটার ও ফেসবুকে অনেক ইয়েমেনী একে স্বাগত জানিয়েছে, যারা এই প্রচারণা যোগ দেয় এবং এই উদ্যোগের ঘটনা অন্যদের মাঝে তুলে ধরে। এই সব ইয়েমেনী নাগরিকের মধ্যে যুক্ত ছিলেন নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী এবং ইয়েমেনের অন্যতম একটিভিস্ট তাওয়াক্কাল কারমান। তিনি এই প্রচারণার লোগো ফেসবুকে তার নিজের প্রোফাইলের ছবি হিসেবে ব্যবহার করে এবং তিনি এই প্রচারণাকে সমর্থন করে তার ফেসবুকে একটি লিঙ্ক টুইট করেন

বিকয় মিশর-এ কাট নিয়ে @দিলমুনিটে এক উত্তম লেখা এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধ পোস্ট করেছে।

ইয়েমেনের একটিভিস্ট, ব্লগার, সাংবাদিক সহ ফেসবুকের অন্য সব পাতাও দ্রুত এই প্রচারণার সুযোগ গ্রহণ করে, যার মধ্যে “কাট ছাড়া ইয়েমেনের একটি দিন ” [আরবী ভাষায়] নামক পাতাটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। যে পাতাটি গত বছর জুলাই মাস তৈরি করা হয়, কাট গ্রহণ না করার জন্য আহ্বান জানানোর জন্য। ইয়েমেনের সংবাদ টিভি চ্যানেল, সুহেইল, অনলাইন সংবাদপত্র সূত্র আলমাসদারঅনলাইন, এবং একই সাথে ইয়েমেনের অনেক নাগরিক, যার মধ্যে তাইজের ফ্রিডম স্কোয়ার ও সানার চেঞ্জ স্কোয়ারের তরুণরাও এই প্রচারণাকে সমর্থন প্রদান করেছে।

একটিভিস্ট সাদেকমাকাতারাই তাইজে বাস করে। সে আর আম্মার মোজালি এই কার্যক্রমের অন্যতম সংগঠক। তারা তাদের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও আপলোড করেছে, যা এই প্রচারণার পক্ষে নাগরিকদের বক্তব্যকে তুলে ধরেছে:

এই ছবিটি ফেসবুক থেকে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা পোস্ট করেছে জালাল আল সামাই, যা প্রদর্শন করছে যে চেঞ্জ স্কোয়ারের তরুণরা সিসিওয়াইআরসি (কোর্ডিনেটর কাউন্সিল অফ দি ইয়থ রেভুলুশন অভ চেঞ্জ ছাপানো) –এর ছাপানো এবং বিতরণ করা পোস্টার বহন করেছে, যারা এই প্রচারণাকে গ্রহণ করেছে:

Youth in Change Square in Sanaa endorse the No Qat campaign

সানার চেঞ্জ স্কোয়ার নামে এলাকার তরুণরা #নোকাটজান১২ নামক প্রচারণার সুযোগ গ্রহণ করেছে

ব্রাহম, যার সানায় বাস, সে বিপ্লবের পর জনতার পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহ খেয়াল করেছে এবং তার টুইটে বলছে :

#নোকাটজান১২ নামক প্রচারণার প্রতি ইয়েমেনের নাগরিকরা এক অবিশ্বাস্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যখন থেকে বিপ্লব আরাম্ভ হয়েছে, তারপর থেকে সব বদলে গেছে।

কাট এবং কাট বন্ধ করার বিষয়ে যে কার্যক্রম, সে বিষয়ে টুইটারে যে সমস্ত প্রতিক্রিয়া এসেছে সে সব নিয়ে আমি এই প্রবন্ধ তৈরি করেছি।

সাংবাদিক @নেলশরিফআজকের দিনের জন্য যে সমস্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, সে সবের বর্ণনা প্রদান করে লিখেছে:

ইয়েমেনীরা “কাট বিহীন” একটি দিবস –এর আয়োজন করছে, দূর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য http://bit.ly/w6rPEb #ইন #নোকাটজান১২ #ইয়েমেন

@উইগাডেনগুয়েইনডা, যে কিনা যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে, সে এই প্রচারণার লোগো তৈরি করেছে:

এখানে ভদ্রমহিলা তৈরি করা পোস্টার [আরবি ভাষায়]: এখানে লেখা রয়েছে “আমি একজন ইয়েমেনী, যে নিজেকে বদলে ফেলতে আগ্রহী” এবং যে ১২ জানুয়ারি তারিখে থেকে আমি আর খাট গ্রহণ করবে না”।

#নোখাটজানু১২ নামক প্রচারণা লোগো

ভদ্রমহিলার গর্বিত পিতা এবং প্রখ্যাত একটিভিস্ট @আলগুনাইদ টুইট করেছেন:

@ উইগাডেনগুয়েইনডা-এর চিত্রসমূহ, যা সে তৈরি করেছে #নোকাট১২জানু নামের প্রচারণার জন্য, এখন বিষয়টি পরিপূর্ণ আকার ধারণ করছে। p.twimg.com/Aicpf56CAAAmdqp.twimg.com/AiWelVVCMAAHmn…

@ফোজইয়াইয়া, এই প্রচারণার জন্য আরেকটি পোস্টার তৈরি করেছে, যা সে টুইট করেছে:

#নোকাটজান১২ ছবি. টুইটার.কম.twitter.com/zYM5CbOX

এখানে তার করা পোস্টার:

কাট কে না বলুন পোস্টার নির্মাতা ফোজ ইয়াইয়া

@ফোজইয়াইয়া, একটি ভিডিও তৈরি করেছে এবং তা ইউটিউবে চ্যানেল-এ পোস্ট করেছে, এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ইয়েমেনীরা নিজেদের বদলে ফেলতে সক্ষম এবং ১২ জানুয়ারি তারিখে, তাদের একটি দিনের জন্য কাট চিবানো বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে:

@ আমিরাহ১ইয়েমেনী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে, সেও এই উদ্যোগের প্রতি তার সমর্থন প্রদান করেছে:

#সাপোর্টোফরইয়েমেন #নোকাটজান১২ # ইয়েমেন

ডাক্তার এবং একটিভিস্ট @ইচামাজা ব্যঙ্গাত্মকভাবে টুইট করেছে:

একদিনের জন্য খাট চিবানো বন্ধ করুন! মুখ আর গলার ক্যান্সার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে! ইয়েমেন #নোকাটজান১২

তিনি এর সাথে যোগ করেন:

আমি মনে করি না কাট ইয়েমেনে জন্য সবচেয়ে বাজে বিষয় #ইয়েমেন! কিন্তু বিশ্বাস করি যে এটা খুব ভালো কিছু করবে না! এবং তা সম্পদের (সময়ের) অপচয়। #নোকাটজান১২

@আফ্রানাসের, ইয়েমেন-এর অন্যতম ব্লগার যে কিনা বর্তমানে সুইডেনে বাস করে, সে টুইট করেছে কি ভাবে কাট সময় নষ্ট করার উপাদান হয়ে উঠে:

ইয়েমেনের কাট গ্রহণকারী একজন সাধারণ নাগরিক গড়ে ৮ ঘন্টা কাট কেনার অর্থ জোগাড় করার জন্য এবং ৮ ঘণ্টা কাট গ্রহণ করে সময় নষ্ট করে। আর অবশিষ্ট ৮ ঘণ্টা সে ঘুমিয়ে কাটায়। @নুনআরাবিয়া।

এছাড়াও তিনি নির্দেশ করেন যে, এটা উন্নয়নেরও পথে বাধা:

#ইয়েমেনের সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বের অন্যতম এক উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবার, কিন্তু কাট হচ্ছে সে ক্ষেত্রে অন্যতম এক প্রতিবন্ধকতা # নোকাটজান১২

@সামওয়াদ্দাহ, ইয়েমেনের এক একটিভিস্ট, যিনি বর্তমানে কানাডায় বাস করেন, তিনিও একটি ভিডিও তৈরি করেছেন এবং ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করেছেন। এটি মূলত এক বিপজ্জনক বিষয়ের উপর তৈরি করা। এটি শিশুদের খাট চিবানোর অভ্যাসের উপর ধারন করা হয়েছে, যা দৃশ্যত অনেক পিতামাতা উপেক্ষা করে, অথবা তারা বিষয়টি সম্বন্ধে অজ্ঞাত থাকে। এখানে ভিডিওটি উপস্থাপন করা হল:

কি বোর্ডের উপর আঙ্গুলের চাপ আর পর্দার পেছনে কাজ করার মাধ্যমে এই প্রচারণার জন্ম, যা অনেক নাগরিকের যৌথ উদ্যোগের ফসল, যারা প্রচণ্ডভাবে ইয়েমেনের নাগরিকদের মঙ্গলকামী। তারা ইয়েমেনের রাস্তার লড়াইরত নাগরিকদেরও ছাপিয়ে গেছে, যারা এটিকে বাস্তবে পরিণত করেছে। এছাড়াও, ইয়েমেন থেকে খাটের মত নেশাকে দুর করার জন্য যে লক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, এটি তার অন্যতম এক পদক্ষেপ।

যেমনটা @ঘানেম_এম টুইট করেছে :

#নোকাটজান১২ নামক প্রচারণা হচ্ছে একটি জাতির এক খারাপ অভ্যাস দুর করার প্রথম পদক্ষেপ #ইয়েমেন

@আরবসইউনাটেড, যে কিনা যুক্তরাজ্যে বাস করে, সে এর সাথে যোগ করেছে:

#নোকাটজান১২ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা এবং এক বাজে অভ্যাস দুর করার জন্য একটা রাস্তা খুলে দেওয়া, যে অভ্যাস মানব সম্পদের এক অপচয়-ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিত ভাবে..

এবং @ সামেরনাসার, যুক্তরাষ্ট্রে বাস করা এক ইয়েমেনী তরুণ একটিভিস্ট, সে উল্লেখ করেছে :

আমরা, ইয়েমেনে যারা কাট চিবায়/ অথবা বিক্রি করে সেই সব #ইয়েমেনীদের জন্য একটা বিকল্প কিছু বের করব। এই প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে “এর ফলাফল বোঝা”।#নোখাটজানু১২

বলাইবাহুল্য, এটা হচ্ছে ইয়েমেনের জনগণ এবং তারা আজকের এই দিন পর্যন্ত যা গ্রহণ করে সেই বিষয়ে। এক কথায় যা এই প্রচারণার সফলতাকে নির্ধারণ করবে।

এবং, যেভাবে আমি আমার ব্লগে উপসংহার টেনেছি:

আশা করি যে ইয়েমেনের জনতা তাদের দৃঢ়তা প্রদর্শন করবে। ইয়েমেনীরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্র নিয়ে চলাফেরা করা জাতি, যা্রা তাদের শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে বিশ্বের সবাইকে বিস্মিত করেছে। তারা এক অবিশ্বাস্য জীবনের জন্য পদযাত্রা নামক কার্যক্রমের মাধ্যমে ২৬৪ মাইল দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয় এবং তারা সর্বত্র দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। এখন তারা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, এবং ধীরে ধীরে সঠিক পথে এগিয়ে যাবে। এই মহামারীর মত নেশাকে দুর করার জন্য ইয়েমেনের সমাজ এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

জর্জ বার্নাড শ বলেছেন, পরিবর্তন ছাড়া প্রগতি অসম্ভব, আর যারা নিজের মানসিকতাকে বদলাতে পারে না, তারা কোন কিছুই বদলাতে পারে না।
এই প্রবন্ধটি ইয়েমেন বিক্ষোভ ২০১১-এর উপর করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ। .

থাম্বলেইল এবং ফিচার ছবিতে ইয়েমেনের বাজারে খাট বিক্রেতাকে দেখা যাচ্ছে। ছবি সালেহ মাগলাম-এর, কপিরাইট ডেমোটিক্সের (২৯/১১/২০১১)

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .