আমাদের এ পোস্টটি বাহরাইন প্রতিবাদ ২০১১-সংক্রান্ত স্পেশাল কাভারেজের অংশ
ব্লগার ও নেটিজেনদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের ক্ষেত্রে আরব বিশ্বের সুনাম আছে, সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে ১৪ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণের পর থেকে বাহরাইন ও এর ব্যতিক্রম নয়। বাহরাইনি চিকিৎসকেরা যেভাবে টুইটার ব্যাবহার করে কারারক্ষীদের যে সব অত্যাচার ও অনাচার প্রত্যক্ষ করেছেন তা বিশ্ববাসীর সামনে যেভাবে তুলে ধরেন সেভাবে নেজরাদ (@নেজরাদ) ছদ্মনামের একজন টুইটার ব্যাবহারকারী গত কয়েক দিনে তাঁর কারা অভিজ্ঞতার কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন।
নাজরেদ এর মতে তার টুইট বার্তির কারনে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, তিনি তাঁর নতুন আপডেটে জানিয়েছেন যে তিনি ঘটনাটি সবাইকে জানাতে চান [ আরবি ভাষায়]:
তিনি তাঁর অগ্নিপরীক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেনঃ
@নেজরাদঃ জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতে এক লোক এসে ইয়েমেনি উচ্চারনে আমাকে জিজ্ঞেস করল : “ তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি? তুমি কোথায় কাজ কর? তুমি কি স্যুট পরেছ?” এরপর সে আমাকে টেনে নিয়ে স্যুট ছিঁড়ে ফেলে, আমাকে থাপ্পড় মারে এবং থু থু ছুড়ে মারে।
তিনি বলেনঃ
@নেজরাদ : এরপর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে আমাকে দুজন জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাঁদের প্রশ্ন গুলো ছিল অদ্ভুত ধরণের। এটা সত্যিকারের কোন জিজ্ঞাসাবাদ ছিল না। এটা ছিল আমার জন্য অপমানজনক, ও অসম্মানের।
নেজরাদ তাঁর দুর্দশার বিষয়ে নিচের টুইট গুলো করেনঃ
@নেজরাদঃ জিজ্ঞাসাবাদের সময় একজন প্রশ্নকারী ইরাকি উচ্চারনে আমাকে জিজ্ঞেস করেন: “তুমি কি সাদ্দাম হুসেন কে ভালবাস? ইরাকিদের প্রতি তোমার দৃষ্টিভঙ্গি কি? তুমি কি ইরাকি সঙ্গীত শুন?” এরপর সে আমাকে গান গাইতে বলে।
@নেজরাদ: অন্য একজন প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করেনঃ “ তুমি কি গোল চত্বরে গিয়েছিলে?” এরপর সে আমার কাছে এসে আমার টাই ধরে টেনে তোলে এবং প্রশ্নগুলোর পূনরাবৃতি করে ও আমাকে হুমকি দেয়। আমি তাঁকে বললাম হ্যা কৌতূহল বশত: আমি সেখানে গিয়েছিলাম।
@নেজরাদ: পাঁচ ঘণ্টার জেরা শেষ হওয়ার পর একজন জেরাকারী আমাকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বললেন। আমি তাঁকে বললাম “আমি এখন ক্লান্ত” – তিনি বললেন: “আমরা তো এখনও তোমাকে কিছুই করি নি।”
নেজরাদকে এরপর কারা কক্ষে স্থানান্তর করা হয়, সেখানে তিনি অন্যদের সাথে তাঁর গ্রেফতারের ঘটনাটি শেয়ার করেন। প্রতিদানে তিনিও অন্য কয়েদীদের উপর কারারক্ষীদের চালানো বর্বরতা প্রতক্ষ্য করেন। নিম্নে তিনি তার কাহিনী তাঁর নিজের ভাষায় টুইট করেছেন। সকল টুইট আরবিতে।
@নেজরাদ : সেল এ প্রবেশ করার পর যুবারা আমাকে স্বাগত জানালো, তাঁরা আমাকে বসতে দিল, পানি পান করতে দিল। তাঁরা আমাকে ঘিরে ধরল। আমি কিছুটা স্থির হলে তাঁরা আমার গ্রেফতারের কাহিনী শুনতে চাইল।
@নেজরাদঃ একই দিনে, সেলে পাঁচ জন ডিটেনশনপ্রাপ্ত আসামী আসেন, তাঁদের শরীরে স্পস্টতই অত্যাচারের চিহ্ন ছিল। এদের মধ্যে একজনের গলা ভাঙ্গা আর আরেকজনের কাপড়ে রক্ত ও মাটির দাগ ছিল।
@নেজরাদ: কারা পূর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিদিনই নতুন ডিটেনশনপ্রাপ্ত আসামীদের দলকে নিয়ে আসা হত। কারা কক্ষগুলো ধারণ ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল। কারাবন্দীদের মেঝেতে ঘুমাতে হত।
@নেজরাদঃ এক রাতে বাহরাইনের জাতীয় বাস্কেটবল দলের নয়জন খেলোয়ারকে নিয়ে আসা হয়। এ খেলোয়াররা প্রতিবাদ সমর্থনে এথলেটদের আয়োজিত র্যালীতে অংশ নিয়েছিল। আল- নাইম কারাগার খেলার ক্যাম্পে পরিণত হয়েছিল।
@নেজরাদ: আমার কারা বন্দিত্বের কিছুদিন পরে অন্য পাঁচ জন ডিটেনশন প্রাপ্তদের সাথে আমাকেও তলব করা হয়, আমাদের চোখ বাধা ছিল, চোখ খুললে আমরা আমাদের সামনে ক্যামেরা দেখতে পেলাম।
@ নেজরাদ: আমি মুখ ঢাকা কিছু মানুষ দেখেছি, তাঁরা আমার স্বাক্ষরিত কাগজ আমাকে দিল। জেরার সময় আমি ঐ কাগজে স্বাক্ষর করি। তাঁরা ক্যামেরার সামনে আমাকে ঐ কাগজ পড়তে বলে।
@নেজরাদঃ আল-নাইম কেন্দ্রের দিনগুলো ছিল বেশ কঠিন, বিশেষত যখন আমাদের ডিটেনশন প্রাপ্ত একজন অসুস্থ হল। যখন একজন নতুন ডিটেনশন প্রাপ্ত কয়েদিকে দেওয়ালের অন্যপাশে পেটানো হচ্ছিল, আমরা তাঁর আর্ত চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম।
@ নেজরাদ: যে বিষয়টি আমাকে আতংকিত করে তুলত তা হল মুখ ঢাকা একজন লোক দেরিতে আসত। নতুন ডিটেনশন প্রাপ্তদের আরেক দফা মারপিট করার জন্য সে সামনে এসে দাঁড়াত।
@নেজরাদ: কারাগারে থাকার সময়গুলো বিরক্তিকর, অনেকগুলো বিষয় আমাদের বিরক্ত করত আর সে কারনে আমরা ঘুমাতে পারতাম না।
@নেজরাদ: আল-নাইম কারাগারে বাথরুমে যাওয়া ছিল অন্যতম একটি বিরক্তি উদ্রেককারী বিষয়। ডিটেনশন প্রাপ্তদের মধ্যে কিছু স্বেচ্ছাসেবক বাথরুম পরিস্কারের উদ্যোগ নেয়, কিন্তু সে উদ্যোগ কোন কাজে আসে নি।
@নেজরাদ: নাইম কারাগারে আমার অবস্থানের ১৭ তম দিনে, মধ্যরাতে একজন কর্মকর্তা আসেন এবং অন্য ১৫ জন ডিটেনশন প্রাপ্তের সাথে আমার নাম ধরে ডাকেন, আমাদেরকে ড্রাই ডক কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
@নেজরাদ: মধ্য রাতে আমাদের ড্রাই ডক কারাগারে স্থানান্তর করার পর আমাদের শৃঙ্খলিত করা হয়, চোখ বেঁধে ফেলা হয়। অভ্যর্থনা ছিল ‘উষ্ণ’ কারন আমাদের পশ্চাৎ দেশে পেটানো হয়, লাথি ও থাপ্পড় মারা হয়।
@নেজরাদ: ডিটেনিদের মধ্যে যারা আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেকেই চীরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন- এটা দেখে আমি শংকিত হয়ে পড়ি। অনেকে তাঁদের চোখ হারিয়েছেন অনেকের অঙ্গহানি ঘটেছে।
@নেজরাদঃ কারা প্রধান মাঝে মাঝেই আমাদের সেলের বাইরে সরু একটা করিডরে জমায়েত করতেন, লাইনে দাড় করাতেন, সকল কয়েদিকে নিজেই গুনতেন আর জাতীয় সঙ্গীত গাইতেন।
বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ আল খলিফা কতৃক নিয়োগকৃত রাজকীয় কমিশনের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বাহরাইনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ দমনে “গ্রেফতারকৃত ডিটেনিদের প্রতি কতৃপক্ষ নিপীড়ন ও আগ্রাসী বলপ্রয়োগ করেছে” – নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কারাবন্দিদের নির্যাতনের বিষয়েও উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আমাদের এ পোস্টটি বাহরাইন প্রতিবাদ ২০১১-সংক্রান্ত স্পেশাল কাভারেজের অংশ