গুয়াতেমালার ডিপুকিডসঃ সংসদে এক নতুন প্রজন্ম

গুয়াতেমালার গৃহযুদ্ধ (১৯৬০-১৯৯৬) দেশটির অনেক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নেতা এবং শিক্ষবীদকে হয় মেরে ফেলেছে অথবা তাদের নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেছে। এর ফলে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গন এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গুয়াতেমালা শান্তি চুক্তির পর থেকে, দেশটির সংসদে তরুণদের সংখ্যা সেই আগের মত স্বল্পই রয়ে গেছে এবং উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরা এখনো রাজনীতিতে অংশ গ্রহণ করতে ভয় পায়।

তবে ইদানীং দেশটির রাজনীতিতে এক নতুন প্রজন্মের আগমন ঘটেছে, যাদের বয়স ৩০ বছরের নীচে। তাদের ডিপুকিডস নামে ডাকা হচ্ছে। এই ঘটনাটি এক বিতর্কের জন্ম দেয়, যখন রাজনৈতিক দলগুলো ২০১২-২০১৬ এই সময়ের সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী হিসেবে একদল তরুণকে মনোনয়ন প্রদান করে, যাদের এই নির্বাচনে জয়লাভের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

http://www.youtube.com/watch?v=jHXh5M46_3Q&feature=player_embedded

ইউটিউবে ডিপুকিডসরা ছবি ভেনেনো ক্রুজ-এর

কংগ্রেসো ট্রান্সপ্যারেন্টো [স্প্যানিশ ভাষায়] গুয়াতেমালার কংগ্রেসের একটি নতুন উদ্যোগ, যার মধ্যে দিয়ে সংসদ জনতার কাছে আরো সুস্পষ্ট এবং ঘনিষ্ঠ হবে । এটি তরুণ কয়েকজন প্রার্থীর বিষয়ে তথ্য প্রদান করেছে। এই সব প্রার্থীদের বয়স ২০-এর ঘরে, যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে মনোনয়ন লাভ করেছ, কিন্তু তাদের সবার প্রেক্ষাপট এক। নির্বাচিত হবার জন্য তারা তাদের নাগরিক অধিকার চর্চা করছে।

এদের বেশির ভাগের বয়স কুড়ি বছর বা কুড়ি থেকে তিরিশ-এর মাঝামাঝি। এদের জন্ম গৃহযুদ্ধ পরবতী সময়ে। তার সবাই বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বিশেষ উচ্চ শ্রেণীর শিক্ষা লাভ করেছে এবং বিশ্বের অনেক জায়গা ঘুরে এসেছে- তাদের আগমন বিশেষ সুবিধাভোগী সমাজ থেকে, যা সাধারণ গুয়াতেমালার জীবন থেকে খানিকটা আলাদা।

এখানে তালিকার সেরা কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হল, যাদের এই নির্বাচনে জেতার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এদের বেশীরভাগই তরুণ পেশাজীবী, যেমন জুলি হার্নান্দেজ [স্প্যানিশ ভাষায়] [বয়স ২৫] (@জেএফহার্নান্দেজজিটি)। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ডিগ্রী নিয়েছেন। ডিয়েগো কালভো [স্প্যানিশ ভাষায়] (বয়স ২৬); এ্যাডুয়ার্ডো স্মিথ [স্প্যানিশ ভাষায়] [বয়স ২৬ ]; এবং হুগো মোরান [স্প্যানিশ ভাষায়] [বয়স ২৬], তার তিনজনে আইনের উপর ডিগ্রী নিয়েছে। এছাড়াও রয়েছে এলিসা স্থাহাল বিয়েনার (@এলিসাসবিয়েনার), যার গণ যোগাযোগের উপর ডিগ্রী রয়েছে [স্প্যানিশ ভাষায়] ; আনা লুসিয়া মাজারিয়েগস [স্প্যানিশ ভাষায়] (বয়স ২০), জুয়াল দিয়োগে আস্ট্রিস @জুডিয়াস৯ (বয়স ২১),এবং জোয়ান গোডয় [স্প্যানিশ ভাষায়] (বয়স ২৩), এই তিনজন এখনো ছাত্র।

এখানে আপনারা আনা লুসিয়া মাজারিয়েগসের কর্মকাণ্ড দেখতে পারবেনঃ

ডিপুকিডসদের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির বিষয়টিও লক্ষ্য করা যাচ্ছেঃ দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং গুয়াতেমালা সিটির বর্তমান মেয়রের সন্তান আলভারো আরজু জুনিয়র এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, আলেজান্দ্রা গারসিয়া এক বিখ্যাত সংসদ সদস্যার কন্যা, সেও মধ্য আমেরিকার সংসদের (সেন্ট্রাল আমেরিকান পার্লামেন্ট বা পার্লাসেন)-এর এক পুনঃনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

“কতটা তরুণ আদতে তরুণ” এই শিরোনামে বৃটিশ রাষ্ট্রদুত জুলি চ্যাপেল তার প্রাতিষ্ঠানিক ব্লগে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেঃ

“ডিপুকিডস একটা বেশ আকর্ষণীয় এক শব্দ, যা সহজেই মনে লাগে! কিন্তু এভাবে বর্ণনা করা কি ঠিক? তারা হচ্ছে এমন এক প্রজন্ম যাদের “আগামীর দূত” বলা যায়। আমি যদি এই বিতর্কে কয়েকটি বাক্য যোগ করি তাহলে আশা করি আপনারা কিছু মনে করবেন না। ১০ জুলাইয়ের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে বৃটিশ নির্বাচনে বয়স এবং অভিজ্ঞতার বিষয়টি। এটা সত্যি যে বৃটেনে গড়ে একজন ডিপুকিডসের বয়স ৫০ বছর। রাজনৈতক দলের গবেষক, ভাষণ লেখক এবং ইন্টার্নী হিসেবে কাজ করে তারা সামনে এগিয়ে যায়। তবে এটা সত্যি যে বৃটেনের ২০১০ সালের নির্বাচনে সকল প্রধান রাজনৈতিক দল এমন কিছু প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রদান করেছিল যাদের বয়স ২৪ বছরের নীচে ছিল । সে সময় সবচেয়ে কম বয়সী প্রার্থীর বয়স ছিল ১৮ বছর, এবং সবচেয়ে যে তরুণ প্রার্থী জিতেছিল, তার বয়স ছিল ২৬ বছর। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রক্ষণশীল দলে প্রথম ভাষণ প্রদান করার সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর, এবং এই আগ্রহ তাকে ৩০ বছর আগে একজন নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কাজে যখন অভিজ্ঞতা একেবারে অপরিহার্যভাবে গুরুত্বপুর্ণ, ঠিক এ কারণে নতুন চিন্তা, উদ্যম, এবং কোন বিষয়কে ভিন্ন এক দৃষ্টিতে দেখাও গুরুত্বপুর্ণ

তবে সকল মতামত এতটা খোলামেলা এবং ভালো ছিল না। ব্লগ পলিটিকাল ক্যান্ডিডেটস ২০১১, সংসদের জন্য তরুণ সংসদ প্রার্থী [স্প্যানিশ ভাষায়], শিরোনামে একটি লেখায় কি ভাবে এত তরুণ একজন তার প্রচারণার ব্যয়ভার বহন করছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করে। এছাড়াও লেখক প্রশ্ন তুলেছে কি ভাবে এত তরুণ একজন প্রার্থী সাধারণ নাগরিকদের দাবী পুরণে সক্ষম হবে বিশেষ করে করে তাদের অনেকে যখন সমাজের উচ্চশ্রেণী থেকে আগত।
প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক জর্জ পালমিয়েরি তার প্রবন্ধ “তারুণ্য যথেষ্ট নয়”-এ বর্ণনা করেছেন কি ভাবে গুয়াতেমালার নাগরিকরা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে, যেখানে তাদের তরুণরা জাতির ভাগ্য নতুন ভাবে গড়ছে। তিনি গুয়াতেমালার বিখ্যাত লেখক এবং চিন্তাবীদ মারিও মন্তেফোর্টে টোলেডোর কথা উদ্ধৃত করেছেন, যে কিনা ২৬ বছর বয়সে সংসদে নির্বাচিত হয়েছিল এবং তার সাথে আরো উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছেন।

তবে ব্লগার এনসাবানবেল-এর কাছে ডিপুকিডসরা “তারুন্যের এক ঝঙ্কারের প্রতীক” [স্প্যানিশ ভাষায়]

জ্যাভিয়ার তার ব্লগ “ক্যাওটিক স্ট্রম অভ আইডিয়া-তে” একটি পোস্ট লিখেছে। যার নাম রাজনীতির খেলা অথবা খেলনা রাজনীতি?” [স্প্যানিশ ভাষায়]:

… introducir un enorme grupo de personas con cero experiencia en leyes, tanto su creación como su ejecución y análisis, es, para todas las intenciones y propósitos, algo realmente estúpido e inaudito.  Se pretende enmascarar la inexperiencia de estos postulantes y vendernos la idea de que la juventud es una característica lo suficientemente importante como para que ignores su falta de capacidad.  ¿Cuántas veces se han escuchado quejas porque gente no preparada, irrelevante de su edad, se encuentra en el Congreso?  ¿Acaso el que estos sean jóvenes los hace inmunes a esta misma queja?

…রাজনীতিতে এমন একদল সদস্য আসছে, আইনসভায়, আইন তৈরি, সেটিকে প্রয়োগ করা এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে যাদের অভিজ্ঞতা একেবারে শূন্যের কোঠায়, এটা কেবল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যের খাতিরে করা হচ্ছে। এমন একটা বিষয় যা নির্বোধের মত বিষয় এবং এটি অভুতপুর্ব ঘটনা। তারা এই সব প্রার্থীদের অভিজ্ঞতার অভাবকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে এই তারুণ্যের মুখোশের অন্তরালে, তারা আমাদের কাছে শেষের বিষয়টি এই নতুন চিন্তা বিক্রির জন্য ব্যবহার করেছে যে, তারুণ্য হচ্ছে এমন এক বিষয় যে ক্ষেত্রে যোগ্যতার অভাবকে উপেক্ষা করা যায়। আমরা কতবার এই বিষয়য়টি শুনেছি যে প্রস্তুতি ছাড়া কোন নাগরিক, তার বয়স যাই হোক না কেন, সে সংসদে আসন দখন করবে? একজন তরুণ হিসেবে তাদের কেউ কি এই অভিযোগ প্রতিহত করতে পারবে।

গুয়াতেমালার জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৬৭ লক্ষ নাগরিকের বয়স ১৮ -এর নীচে, যাদের অর্ধেক আদিবাসী এবং তাদের দুই-তৃতীয়াংশ গরীব। গুয়াতেমালার ৩০ শতাংশের কম ব্যক্তি হাই স্কুলের পড়ালেখা শেষ করে। জনসংখ্যার সামান্য অংশ যারা বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে এবং তাদের মধ্যে থেকে মাত্র সামান্য অংশ ডিগ্রী অর্জন করে।

নির্বাচিত হলে ডিপুকিডস নামের ব্যক্তিরা যাদের প্রতিনিধি হবে, তাদের থেকে একেবারে আলাদা বলে বিবেচিত হবে। আর তরুণ এই সব ব্যক্তি সেই সব প্রয়োজন এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, যা তাদের বাস্তবতার অনেক বাইরের বিষয় । আমরা আশা করতে পারি, যদি তারা নির্বাচিত হয়, তাহলে এই নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবীদের যে ভিন্ন ভিন্ন তারুন্যের প্রতিনিধিত্ব করছে, তারা তা ভুলে যাবে না।

এখানে যে থাম্বনেইল ছবি রয়েছে, তা ভেনেন ক্রুজ-এর ডিপুকিডস অন ইউটিউব নামক ভিডিওর স্ক্রিনশট থেকে নেওয়া হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .