আফ্রিকা-ফ্রান্স: কে এই নাফিসাতো দিয়ালো? ঘটনার শিকার অথবা ষড়যন্ত্রী?

১৪ মে,২০১১, তারিখে নিউ ইয়র্ক শহরের এক হোটেলের চেম্বারমেইড-এর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংস্থার (ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড) প্রাক্তন প্রধান দমিনিক স্ত্রস কানের বিরুদ্ধে আনীত যৌন নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়টির ক্ষেত্রে মনোযোগ এখন, “সে কি অপরাধী নাকি নির্দোষ এই দিকে ধাবিত হচ্ছে”। বিশেষ করে যখন অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে তখন থেকে বিষয়টি পাল্টে যেতে থাকে। অভিযোগকারীর নাম নাফিসাতো দিয়ালো [ফারসী ভাষায়]। তার জন্ম গিনিতে, বর্তমানে যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছে [ফরাসী ভাষায়]।

অভিযোগকারীর নাম নাফিসাতো দিয়ালো [ফারসী ভাষায়]। তার জন্ম গিনিতে, বর্তমানে যে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ করেছে [ফরাসী ভাষায়]।অনেকের মতে, সে ঘটনার বাস্তব শিকার, কিন্তু নাফিসাতো দিয়ালোর কাহিনী আসলে কি তা উপস্থাপন করে থাকে, যদি আদৌ তা করে থাকে।

Picture of Nafissatou Diallo as shown by her brother in Guinea from BFMTV.com screenshot.

গিনিতে, নাফসাতো দিয়ালোর ছবি প্রদর্শন করেছে তার ভাই, এটি বিএফমটিভি.কমের এর স্ক্রিনশট ছবি

নাফিসাতো দিয়ালো, যৌনবৈষম্যবাদের এক শিকার?

ফ্রান্সের বিখ্যাত সাংবাদিক জ্যা ফ্রাসোয়া কান (জেফকে) এই ঘটনার প্রেক্ষিতে যে বিবৃতি প্রদান করেছে তার প্রেক্ষাপটে ফরাসী নারীবাদীরা ২২ মে রোববার এক প্রতিবাদের আয়োজন করেছিল। ফ্রাসোয়া কান ওরফে জেএফকে-এর মতে ডিএসকে (দমিনিক স্ত্রস কান) হয়ত বা “চেম্বারমেইডকে সামান্য ফুসলিয়ে থাকতে পারে”। তার এই বাক্যটিকে কেবল নারীদের প্রতি ঘৃণা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না, একই সাথে তা দিয়ালো নামক মেয়েটির সামাজিক শ্রেনীর প্রতি এক ধরনের নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে বলে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে যখন সে নিজে সমাজের উচ্চ শ্রেণীর সাথে যুক্ত। জেএফকে-এর স্ত্রী ডিএসকে-এর সাথে আনে সিনক্লিয়ারের বিয়ের এক সাক্ষী।

এই বিষয়ে ইউটিউবে প্রচারিত একটি ভিডিও।
ব্লগ মনোলেক্টতে প্রকাশিত শিরোনাম “ডিএসকের-ঘটনা শ্রেণী সংগ্রামকে স্বচ্ছ করেছে” (ল’অ্যাফেয়ার ডিএসকে ক্রিস্টালিজে লা গুয়ে দে ক্লাশে) [ফরাসী ভাষায়]-এগনেস মিলার্ড লিখেছে:

la petite sortie de JFK, qui doit se considérer lui-même de la gauche modérée, est des plus éclairantes quand il choisit de défendre l'indéfendable, (…) mais en déqualifiant le viol en simple « troussage domestique », (…)

জেএফকের এই সামান্য ক্ষোভ, যে সম্ভবত নিজেকে তুলনামূলক উদার সমাজবাদী বলে মনে করে, এখন তার উল্লসিত। সে নিজেকে প্রচণ্ড আলোকিত মনে করে, যখন সে রক্ষা করার যোগ্য নয় এমন একজনের সম্মান রক্ষা করতে যায় (…)। সে ধর্ষণকে অস্বীকার করে, এ ঘটনাকে এক চেম্বারমেইডকে ফুসলানো হিসেবে অভিহিত করে।

নাফিসাতো দিয়ালো, বর্ণবাদের এক শিকার?

ফরাসী নারীবাদী বিতর্ক ছাড়াও, আফ্রিকার যে সমস্ত নারীদের বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাদের কণ্ঠস্বর নাফিসাতো দিয়ালোর ঘটনাকে আরেক মাত্রা প্রদান করেছে, তাদের কারো কারো মতে সে বর্ণবাদের শিকার এক নারী, আবার তাদের কারো মতে সে এক দারুণ ষড়যন্ত্র রচয়িতা।

ফ্রান্স-ক্যামেরুনিয়ান এক লেখিকা ক্যালিক্সিথে বেইয়ালা এক খোলা চিঠি লিখছে [ফরাসী ভাষায়] যা বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে। এই লেখার শিরোনাম: “কালো মেয়েদের ধর্ষণ কর এবং সাদা মেয়েদের বিয়ে কর”।

Calixthe Beyala. Screenshot from video on Calixthebeyala.com.

ক্যালিক্সিথে বেইয়ালা (ক্যালিক্সিথে বেইয়ালা.কম -এর ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট ছবি)

বেইয়ালা লিখেছে:

Il est traumatisant de se rendre compte que certains noirs ont des chaînes dans la tête et ne se posent pas la question de l'appétence des puissants de ce monde vis-à-vis des femmes Noires, une attirance morbide où les relations n'ont guère changé depuis l'esclavage

এটা উপলব্ধি করা খুব বেদনাদায়ক এক বিষয় যে, কিছু কালো বর্ণের মানুষ এখন চিন্তায় শিকল বেঁধে রেখেছে এবং তারা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের যে কালো মেয়েদের প্রতি ক্ষুধা, সে বিষয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করে না। এক অসুস্থ আকর্ষণ, যার মধ্যে এমন এক সম্পর্ক বিরাজ করে, সেটি দাস প্রথার সময় থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।

কিন্তু এই মতামত মনে হচ্ছে অনলাইনের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তেমন একটা সমর্থন লাভ করেনি। প্রবাসী আফ্রিকান তরুণদের মধ্যে মায়বাখ কার্টার এক অন্যতম জনপ্রিয় ব্লগার। সে ক্যালিক্সিথে বেইয়ালার লেখার প্রতি উত্তরে একটি লেখা পোস্ট করেছে যার শিরোনাম, “ক্যালিক্সথে বেইয়ালার কাছে এক খোলা চিঠি: দয়া করে চুপ করুন”! (লেটার উভ্রে এ ক্যালিক্সথে বায়ালাঃ দে গ্রাস তেইজে ভু) বেইয়ালা যে “আফ্রিকার মহিলা বুদ্ধিজীবী” তার এই মর্যাদার উপর প্রশ্ন করে ভদ্রমহিলা ডিএসকের ক্ষেত্রে লেখিকার ঠিক পুরোপুরি বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে বর্ণবাদ নামক বিষয়কে তুলে ধরছেন;

Quand les origines de la victime présumée ont été révélées, j’ai su qu’à un moment donné, quelqu’un prendrait le chemin du débat racial. J’attendais cela de quelques groupes extrémistes, mais pas de la part de quelqu’un comme vous. Le méchant et tout-puissant juif contre la pauvre petite immigrée musulmane africaine : la tentation était TROP GRANDE pour vous n’est-ce pas ?

যখন অভিযোগকারীর পরিচয় উন্মোচন হল, আমি জানি যে কিছু ক্ষেত্রে, কেউ কেউ বর্ণবাদ নামক ভাবনার মধ্যে দিয়ে বিষয়টিকে দেখবে। আমি উগ্রবাদী দলগুলোর কাছ থেকে এ রকমটা আশা করেছিলাম, কিন্তু আপনার মত এ রকম কারো কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করিনি। আমি বোঝাতে চাইছি এক ক্ষমতাশালী ইহুদী নাগরিক বনাম আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসী হিসেবে আশ্রয় পাওয়া এক দরিদ্র ক্ষুদ্র মুসলিম নারী: আপনার জন্য খুব বড় এক উত্তেজনাকর বিষয়, তাই নয় কি?

ইতোমধ্যে ফেসবুকে ১৩০০ জন ব্যক্তি এই পোস্টটিকে পছন্দ করেছে।

টুইটারে এই ঘটনায় বেইয়ালার অবস্থান অজস্র জায়গায় থেকে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে।

@gregbuttay: Calixthe Beyala est un stéréotype à elle toute seule, une fausse persécutée trouvant du racisme dans chaque fais divers

ক্যালিক্সিথে বেইয়ালা তার নিজেই এক গতানুগতিক ধারার বাহক, এক ভূয়া অন্যায়ের শিকার, যে প্রতিটি সংবাদে বর্ণবাদ আবিষ্কার করে।

@Babapetruchka: RT @MrMaith ARRÊTEZ TOUT. On a trouvé l'analyse la plus stupide de l'affaire #DSK. La palme revient à Calixthe Beyala.

সকল কিছু বন্ধ কর। আমরা ডিএসকের ঘটনায় সবচেয়ে নির্বোধ এক বিশ্লেষণ লাভ করলাম। এর পুরষ্কার ক্যালিক্সিথে বেইয়ালার পাওনা।

নাফিসাতো দিয়ালো, এক ষড়যন্ত্রকারী ফুলা?
ইতোমধ্যে গিনির ক্ষমতাসীন দল “রেসেম্বলমেত দু পিপুলে নিউগিনি” (আরপিজি)-এর মুখপাত্র মিসেস. সানো দোসুও কোন্ডে বলেছেন যে, তিনি আদৌও নাফিসাতো দিয়ালোকে বিশ্বাস করেন না এবং তিনি ডিএসকের স্ত্রী আনে সিনলিয়ারকে সাহায্য করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। দোসুও কন্ডে আইভরি টেলভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন। আইভোরিয়ান ওয়েব টেলিভিশন তার এই সাক্ষাৎকার ইউটিউবে পোস্ট করেছে।

সে এখানে এই বিষয়টির উপর গুরুত্ব প্রদান করে জানায় যে এটি একেবারে তার নিজস্ব বক্তব্য, এই বক্তব্যে সে বলে:

(…)আজ আমি অপমানিত বোধ করছি এই কারণে যে, আমার দেশের এক নাগরিক এই খেলা খেলল। সত্যিকার অর্থে আমি তার কাহিনী বিশ্বাস করিনি। আজ আমি অপমানিত বোধ করছি এই কারণে যে একজন আফ্রিকান নারী যে কিনা প্রচারণার জন্য আমেরিকার সংস্কৃতি গ্রহণ করে জানালো সে ধর্ষণের শিকার। (…) আমি আপমানিত আনে সিনক্লিয়ারের প্রতি সাহানুভূতি প্রকাশ করছি, এই ঘটনায় আমার আগ্রহ তার প্রতি।

ব্লগ গিনি লিব্রে (স্বাধীন গিনি) লেখক থিয়েরনো, গিনির শাসক দলের একজন মুখপাত্রের এক রকম অবস্থানের সম্ভব্য কারণ ব্যাখ্যা করেন। তা কাছে, দোসুও কণ্ডের বলা কথা গিনির প্রেক্ষাপটে ফুলা জাতিগোষ্ঠীর প্রতি এক জাতিগত ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ:

Les ethno-racistes malinkés très nombreux ont trouvé là une occasion d'étaler toute la misère la puanteur de leur haine à l'égard des peulhs

মালিঙ্কে জাতিগোষ্ঠীর বর্ণবাদী অজস্র মানুষকে এখানে পাওয়া যাবে যারা এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে ফুলা জনগোষ্ঠীর প্রতি মানসিক পীড়ন প্রদান করবে এবং দুর্গন্ধ ছড়িয়ে নিজেদের ঘৃণা প্রকাশ করবে।

তিনি আরো লিখেছেন

Partant du faux axiome que “Une femme de culture peule, n'avouera jamais un viol – question d'honneur” Doussou Condé, sans empathie ou solidarité de personnes originaires du même pays ou de même sexe déverse sur sa compatriote un torrent de mensonges et d'infamies qui laisse pantois, coi, même les journalistes étrangers.

এক মিথ্যা ধারণার বিষয় এখানে উল্লেখ করা যায়, যে ধারণা অনুসারে “ একজন ফুলা জাতিগোষ্ঠীর নারী কখনো জানাবে না যে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে- যেখানে বিষয়টিতে তার সম্মানের প্রশ্ন জড়িত”। দোসুও কন্ডে তার দেশের জনতা, অথবা তার সম লিঙ্গের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ না করে, স্বদেশী একজনের প্রতি অপমান এবং নিন্দমূলক বাক্য বর্ষণ করেছে, যা শুধু আমাদের নয়, এমনকি বিদেশী সাংবাদিকদেরও নির্বাক করে তুলেছে।

নাফিসাতো দিয়ালো, এক মর্যাদাশীল আফ্রিকান নারী? ?

যদিও দিয়ালোকে শেষ পর্যন্ত এক আফ্রিকার নারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যে কিনা এক পশ্চিমা দেশে বাস করছে, যে কিনা নিজের মর্যাদা না হারিয়ে ফেলার পাশাপাশি জীবনের সাথে সংগ্রামে লিপ্ত?

১৯৬৬ সালে মুক্তি পাওয়া প্রথম আফ্রিকার পূর্ণ দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম ব্লাক গার্ল। সেমবানো অউসমান এই চলচ্চিত্রের পরিচালক, ক্যামেরুনের লেখক প্যাট্রিস নাগানাং সেটিকে তার ফেসবুকের ওয়ালে পছন্দ করার মধ্য দিয়ে সেখানে এই পরামর্শটি প্রদান করছে।

এই চলচ্চিত্রের গল্প এক সেনেগালী চাকরানীকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। সে মেয়েটিকে তার চাকুরীদাতারা ফ্রান্সে নিয়ে আসে। তারা ছিল এক ফরাসী দম্পতি। যারা এই মেয়েটির সাথে খুব খারাপ আচরণ করত। এই মেয়েটি ফ্রান্সের জীবনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে শেষে আত্মহত্যা করে। এই চলচ্চিত্র, তার শেষ দৃশ্যের কারণে বিখ্যাত, যে দৃশ্যে দেখা যায় মেয়েটির মৃত্যুর পর ফরাসী এই দম্পতি মেয়েটার পরিবারের সাথে দেখা করে, ক্ষতিপুরণ হিসেবে মেয়েটার পরিবারকে কিছু অর্থ প্রদানের জন্য। কিন্তু মেয়েটার পরিবার সেই অর্থ গ্রহণে অস্বীকার করে। এরপর দেখা যায়, সেই পরিবারের কর্তাটিকে একটি মুখোশ পড়া শিশু ধাওয়া করছে:

http://www.youtube.com/watch?v=W8K3PwuTUB0

কুরিয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামক পত্রিকায় প্রদান করা এক সাক্ষাৎকারে নাফিসাতো দিয়ালোর বড় ভাইকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “যদি ডিএসকের আইনজীবী আপনার বোনকে এই মামলা তুলে নেবার জন্য অর্থ প্রদান করতে চায়, তাহলে কি আপনারা তা গ্রহণ করবেন”। এর উত্তরে সে জানায়:

Nous n'avons pas besoin d'argent. Nous tenons juste à notre dignité, et voulons retrouver l'honneur et la dignité de notre soeur.

আমাদের অর্থের প্রযোজন নেই। আমরা আমাদের মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই, এবং আমরা আমাদের বোনের সম্মান এবং মর্যাদা ফিরে পেতে চাই।

দমেনিক স্ত্রাস কান-এর এই ঘটনার উপর করা আমাদের আগের প্রবন্ধগুলে দেখুন। :

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .