আরব বিশ্ব: তিউনিশিয়ার পরে কার পালা?

তিউনিশিয়ার যে ঘটনা প্রবাহ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জিনে আবেদিন বেন আলিকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, তার প্রেক্ষাপটে আরব বিশ্বের নেট নাগরিকরা জিজ্ঞেস করছে: “এরপর কি আমাদের পালা?“

মিশরীয় সাংবাদিক ও ব্লগার মোনা এলতাহাওউয়ি তিউনিশিয়ার গণজাগরণের ঘটনাবলীর সময় টুইটারস্ফেয়ারের উপর গভীরভাবে লক্ষ্য রেখেছিলেন। “দয়া করে, আরো তিউনিশিয়ার মত ঘটনা ঘটুক’ শিরোনামে আজ সকালে একটি বহুল পঠিত কলামে ভদ্রমহিলা মন্তব্য করেছেন, আরব বিশ্ব কখন “আরেক তিউনিশিয়ার“ মত ঘটনা ঘটবে, তা দেখার জন্যে রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে:

ছবি এন্ড্রু ফোর্ড লায়ন্সের @ড্রু৩০০০

বেন আলির বন্দিত্ব অথবা নির্বাসন হল তার শাসনের যোগ্য বিকল্প। এর ফলে রাজনৈতিকভাবে সামনে কি আসছে পরিষ্কার নয়। বিশ্ব এই ক্ষুদ্র আরব দেশটির প্রতি লক্ষ্য রাখছে, আর বিস্ময়ের সাথে ভাবছে, এটাই কি এই অঞ্চলের দাদার বয়সী সব শাসকদের কাছ থেকে মুক্তি লাভের প্রথম পদক্ষেপ।

বিশ্লেষক হুয়ান কোল বলেছেন তিউনিশিয়ার সম্ভাবনা আরো বড় কিছুর শুরু করতে পারে:

… যেহেতু তিউনিশিয়া সুন্নী এবং আরব রাষ্ট্র, সে কারণে মিশরীয়, আলজেরীয়, সিরীয় বা জর্ডানীরা নিজেদের আভ্যন্তরীণ প্রয়োজনের জন্যে তিউনিশিয়ার গণজাগরণের কৌশল ও শৈলী ধার করার ক্ষেত্রে বিব্রত বোধ করবে না, বরং তাতে এর প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা বাড়াবে। নিঃসন্দেহে আরব বিশ্বের শাসকদের ওপর হতাশ স্নাতক ডিগ্রীধারী, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষক, প্রগতিশীল এবং মুসলমান এক্টিভিস্টস জোট সৃষ্ট সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রভাব ইরানের আয়াতুল্লাহর কর্তৃত্ব শীল শাসনের চেয়ে বেশী হবে (সুন্নীদের আয়াতুল্লাহ বা ইমাম থাকে না)। এখন দেখার বিষয় তিউনিশিয়া নামক ছোট্ট রাষ্ট্রের জন্য নতুন আশার প্রতিশ্রুতি, নাকি আরেকটি মিথ্যে ভোরের শুরু।

সারাদিন ধরে, টুইটার আর আরব ব্লগস্ফেয়ারের একই ধরনের মনোভাব প্রতিধ্বনিত হয়েছে। সৌদী সাংবাদিক এবতিহাল মুবারক (@এবতিহালমুবারক) টুইটারে লিখেছেন:

তিউনিশিয়ার বিপ্লবের পরে যদি অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে, তবে তা মিশরে নয় ঘটবে সিরিয়ায়। এখন এই আরব অঞ্চল হবে একটা নতুন আরব বিশ্ব #সিদিবোউজিদ #সিরিয়া

“মাজনুন হাবীবী“ (@মাজনুন৪) একই ভাবে লিখেছে:

আজ তিউনিশিয়া, আগামীকাল ফ্যাসিস্ট সিরিয়া। বিপ্লব আসছে। আসুন আমরা আরব মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র বয়ে আনি।

এটি তৈরী করেছে মিশরীয় @জয়নাব সামীর

সিরীয় নাগরিক আরওয়া আব্দুলাজিজ (@আরওয়া_আবদুলআজিজ) এই বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, পরবর্তী যে রাষ্ট্রের সরকারের পতন ঘটতে যাচ্ছে, সে দেশটির নাম সিরিয়া:

اليوم العالم ينشد “حماة الحمى يا حماة الحمى _ هلمو هلمو لمجد الزمن” وغداً بإذن الله سينشد العالم “حماة الديار عليكم سلام ” #Tunisia #syria
আজ বিশ্ব গাইছে [তিউনিশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত] আর আগামীকাল ঈশ্বর চাইলে তারা গাইবে [সিরিয়ার জাতীয় সঙ্গীত] #তিউনিশিয়া#সিরিয়া

সিরীয় ইয়াসিন ইসুয়াইহার (@সিরিয়ানগাভরোচে) একই অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন :

فليتعلم الطغاة و لتنتبه الشعوب: الجوع هو شرارة الغضب, لا الدين و لا الطائفة و لا “الفتنة” و لا نزاعات زعماء الأحزاب #sidibouzid #tunisia
স্বৈরশাসকেরা শিখুক আর জনগণ শুনুক: ক্ষুধা ক্রোধের স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে; ধর্ম, বর্ণ, ‘ফিৎনা বা গণ্ডগোল” বা বিভিন্ন দলের নেতাদের পরষ্পরের মধ্যে দ্বন্দ্ব নয়।

আশা সত্ত্বেও, নাদের হাদ্দাদ (@নাদেরহাদ্দাদ) উল্লেখ করেছেন যে সিরীয় সরকারি বার্তা সংস্থা তিউনিশিয়ার জনপ্রিয় এই বিদ্রোহের কথা প্রচার করেনি:

সিরীয় সরকারি বার্তা সংস্থা #তিউনিশিয়ার জনপ্রিয় এই বিপ্লবের কথা #সিরিয়া কোন ভাবেই কোথাও উল্লেখ করেনি। http://bit.ly/g4xNY8

এই ঘটনার পরে আরব বিশ্বে কি ঘটতে যাচ্ছে, তা এখনো দেখার আছে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে তিউনিশিয়ার গণজাগরণ আরব বিশ্বে পরিবর্তনের জোয়ারের আশার সঞ্চার করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .