পাকিস্তান: আমরা একজন মানুষকে কবর দিয়েছি, তার সাহসকে নয়

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দ্রাবাদ শহরে নাগরিক সমাজের কর্মীরা পাঞ্জাব প্রদেশের গর্ভনর সালমান তাহির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করছে। ছবি ইয়াসির রাজপুতের। কপিরাইট ডোমোটিক্স-এর।

পাঞ্জাবের গর্ভনর সালমন তাসিরের খুনের ব্যাপারে অনেক কথা বলা হয়েছে। তারপরে বলা প্রয়োজন নয় যে, তার মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া বিশ্ব হতবাক এবং আতঙ্কিত করে তোলে। এই ঘটনায় দেশে উগ্রবাদের উত্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সালমান তাহিরের মৃত্যুকে “পাকিস্তানের উদার নৈতিকতাবাদের মৃত্যু” হিসেবে দেখা হচ্ছে”। তাসিরের মৃত্যু, পরিষ্কার এক বিভাজনকে সামনে নিয়ে এসেছে। এর একদিকে আছে তারা, যারা খুনের ঘটনায় সুবিধা নিচ্ছে এবং খুনিকে গৌরবান্বিত করছে, আর অন্যদিকে রয়েছে তারা, যারা এই মৃত্যুকে জাতীর জন্য পিছিয়ে যাওয়া এক ঘটনা এবং একে জাতীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করছে।

ঘটনাবলিকে এক দৃষ্টিভঙ্গিতে রেখে, নাভিন নাকভি মন্তব্য করেছেন:

পাকিস্তান পিপলস পার্টির সংসদ সদস্য শেরি রেহমান ব্লাসফেমি আইন সংশোধনের খসড়া জমা দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে ইসলামপন্থী দলগুলো দুটি মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে। তার একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর এবং আরেকটি ৯ জানুয়ারী তারিখে। দ্বিতীয় মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ৪০,০০০ জন ছাড়িয়ে যায়। আমার মনে কোন সন্দেহ নেই যে, ইসলামপন্থী দল এবং মূলধারার প্রচার মাধ্যমের দ্বারা সালমান তাসিরের খুনিকে গৌরবান্বিত করা রাজনৈতিকভাবে ইসলামের আবেগকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু যখন এই সমস্ত মানুষেরা ৯ জানুয়ারী তারিখে ব্লাসফেমি আইনের সমর্থনে স্লোগান দিতে দিতে রাস্তায় নেমে আসে, তখন তারা জানে যে তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। খোলাখুলিভাবে বলতে গেলে এই বিষয়ে সত্যিকার অর্থে কোন নৈতিক অবস্থান নেই। যখন এই আইনের বিরোধিতাকারীরা একসাথে জোটবদ্ধ হয় এবং গণ মানুষের মাঝে জায়গা দাবী করে, তখন তারা জানে তাদের অবস্থান আসলে কতটা নাজুক। বেদনাদায়কভাবে এবং শোকার্তদের মত, তারা তাদের অবস্থান সম্পর্কে সচেতন- যারা ক্রমশ কমতে থাকা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত হচ্ছে। এটি শত শত ব্যক্তিকে থামাতে পারে না- সংখ্যায় কম, কিন্তু শক্তিতে প্রচণ্ড- যারা প্রতিদিন বের হয়ে আসছে।

এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে কি ভাবে কি ভাবে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো পুরো ব্লাসফেমি আইনকে নির্মাণ করেছে। আমরা নিজস্ব ব্লগে, তাসিরের হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারণ কি, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই ব্যাপারে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো যে জনপ্রিয় ধারণা সবখানে ছড়িয়ে দিচ্ছে, এই কারণ তার বিপরীত।

তাসির স্রষ্টা সম্বন্ধে নিন্দা সূচক কোন মন্তব্য করেননি। তিনি কখনোই কোরান, নবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) বা ইসলামকে অপমান করেননি, কিন্তু তারপরেও তাকে ব্লাসফেমি আইনের কারণে মরতে হল, তার মতে যে আইন “মানুষের সৃষ্টি”। গর্ভনর তাসিরকে হত্যা করা হয়, কারণ তিন পাঁচ সন্তানের জননী এক মহিলার মৃত্যুদণ্ড রদ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। একটি বিশেষ অবস্থান গ্রহণ করার কারণে, তাকে শরীরে সাতাশটি বুলেট গ্রহণ করতে হয়। এই খুন, ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের লোভে ইসলাম এবং কোরানের অপব্যবহারকে তুলে ধরে। এই রকম আচরণকে উৎসাহ প্রদান করার মধ্যে দিয়ে আমরা আইনের শাসন কাজ করে না, এমন একটি রাষ্ট্রকে তৈরি করছি, যেখানে লোকজন সামান্য মতপার্থক্যের কারণে একে অপরের গলা কেটে নিতে পারে। এটাই কি কোরানের বাণী? ইসলাম কি আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়? কি ভাবে একজন মানুষ আরেকজনের মৃত্যুতে উল্লাস প্রকাশ করতে পারে?

পাক টি হাউজের তাহা কেহার, তাসির হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে “ ইসলামকে ভুল বোঝা শুরু হতে পারে” বলে অভিহিত করেছেন:

সালমান তাসিরের হত্যাকাণ্ড ইসলামিক বিশ্বের এক অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ ঘটনা এবং বাস্তবতা হচ্ছে যে এর মধ্যে অনেকে আনন্দের উপাদান খুঁজে পেয়েছে, যা লজ্জাজনক বিষয়। সবশেষে বলতে হয়, যে ভাবে তিনি নিহত হয়েছেন, তা আমাদের ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে উভয় হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, ইন্দিরা গান্ধী শিখ জাতীর বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী আক্রমণ পরিচালনা করেছিলেন, কিন্তু জনাব তাসির কেবল সেই সমস্ত ব্যক্তির নাগরিক অধিকার রক্ষা করার চেষ্টা করছিলেন, যারা তারা নিজের নয়, অন্য ধর্মের অনুসারী। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, তার প্রচেষ্টার সর্বশেষ যে ফল বয়ে আনত, তাতে সকলেই সুবিধা পেত। এটা কি সহনশীল ইসলামের পতন, নাকি ধারাবাহিকভাবে নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের শুরু?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .