লেবানন: ব্লগার ফারফাহিন্নের প্রথমবার গ্রেফতার হওয়া

লেবানন-এর মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিক ফারফাহিন্নে অক্টোবর-২০১০-এ, লেবাননের নিরাপত্তা রক্ষীদের দ্বারা তার গ্রেফতার হওয়ার ঘটনা আমাদের জানাচ্ছে [আরবী ভাষায়] । যখন ভদ্রমহিলা লেবাননের একজন নাগরিক হিসেবে তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করার জন্য উত্তর লেবাননের ফিলিস্তিনী শরণার্থী শিবির “নাহার আল-বারেদ” প্রবেশের দাবি জানান, তথন তাকে আটক করা হয়।
তরুণী এই ব্লগার তার এক বান্ধবীর সাথ দেখা করার জন্য বৈরুতের এই শরণার্থী শিবিরে ঢু মারতে চেয়েছিলেন, তখন সেখানকার কর্মকর্তা তাকে তার নাগরিক নিবন্ধন পত্রের কারণ (এটা লেবাননের জাতীয় পরিচয়পত্রের বাইরে এক সরকারি পরিচয়পত্র) তাকে এর ভেতরে প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকার করে। তিনি বলেন :

وأعطيته إخراج قيدي. فأخذه ليرده لي مسرعا “ما فيكي تفوتي على إخراج قيد”. قلت أنني لطالما دخلت من دون أية مشكلة بناء على إخراج القيد! فقال “معك هوية؟” قلت “لا” فقال “باسبور؟” فتساءلت لماذا سأحمل باسبورا على الأراضي اللبنانية؟ لماذا يمكن أن أدخل بموجب باسبور لا بموجب إخراج قيد؟ فهل الدخول الى المخيم هو كما تجاوز حدود بلد غير لبنان؟ على الرغم من أن اللبنانية مثلا ليست بحاجة لأكثر من إخراج قيد للدخول الى سوريا! فكيف إذا يتعذر عليّ التنقل على “أرض لبنانية” بموجبه؟! قال “هيدا قرار جديد” قلت “هل بإمكاني الإطلاع على القرار؟” ، فرد بعصبية “ومينك إنت تطلعي على قرار؟” فرددت “أنا مواطنة أسأل عن قرار يطالني ولي الحق على ما أعتقد الإطلاع عليه” فرد “هذا قرار من القيادة العليا” فقلت “هل لي الإتصال بهذه القيادة؟”، فقام بإتصال “بالقيادة” فجاء الجواب الرفض القاطع للدخول. عندها توجهت إليه قائلة أنني سأعتصم هنا الى أن تسمحوا لي بالدخول.

সে আমার নিবন্ধন পত্র বা কার্ডটি নিল এবং তাত্ক্ষণিক ভাবে ফেরত দিয়ে বলল, এই কার্ড দিয়ে তুমি ভেতরে যেত পার না। আমি তাকে বললাম, যে আমি সবসময় এই কার্ড দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে থাকি । সে আমাকে জিজ্ঞাসা করলো তোমার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র আছে ? আমি বললাম “না” । সে আমাকে এবার পাসপোর্ট এর কথা জিজ্ঞাসা করলো । আমি বলেছিলাম, কি কারণে আমাকে আমার মাতৃভূমি লেবানন-এর মাটিতে লেবাননী পাসপোর্ট বহন করতে হবে ? আর এই শিবিরটি কি লেবাননের রাষ্ট্রীয় সীমানার বাইরে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, লেবানন এর নাগরিকদের সিরিয়া প্রবেশ করার জন্য অতিরিক্ত কোনো নিবন্ধন পত্র দেখাতে হয়না । সে বলল, “এটা একটা নতুন আইন” । আমি এই সংশোধনী আইনটি দেখতে চাইলে সে শঙ্কিত হয়ে বলল: এই বিষয়টি যাচাই করার তুমি কে ? আমি উত্তর করলাম, আমি একজন নাগরিক, আমি এক সংশোধিত আইনের কথা বলছি, এই আইনের দ্বারা আমি আক্রান্ত হয়েছি এবং আমি মনে করি, এটা দেখার অধিকার আমার আছে । সে বলল এটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ । আমি বললাম আমি সেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে চাই, সে তার ব্যবস্থা করে দিল, কিন্তু সেখান থেকে উত্তর এলো যে শিবিরে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তখন আমি তাকে বললাম :যতক্ষণ না আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে, ততক্ষণ আমি বিরু্দ্ধে প্রতিবাদ করে যাব। ।

সে তখন অন্য একটি চেক পয়েন্ট দিয়ে আরো একবার ঢুকার চেষ্টা করল, কিন্তু ঘটনা সেই আগের মত ঘটল, তাকে বলা হল : তুমি এই শিবিরে প্রবেশ করতে পারবে না । সে ক্ষিপ্ত এবং রাগান্বিত হয়ে উঠল, কারণ লেবাননের সরকারী কর্মকর্তারা এভাবে তাকে ‘নির্দোষ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত দোষী সাব্যস্ত করে যাচ্ছিল'। সে কাছের একটি গ্রন্থাগারে গেল এবং সেখানে একটি কার্ডবোর্ড পেল, যার উপর সে লিখল:

“لا للتصاريح المذلة عند مدخل مخيم نهر البارد”

“নাহার-এল বারেদ শিবিরে অপমানজনকভাবে প্রবেশের অধিকারকে ‘না’ বলুন”

তাকে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি-পাঁচ মিনিট পর, সেখানে একজন ব্যক্তির আর্বিভাব ঘটল যে নিজেকে সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মী হিসেবে পরিচয় প্রদান করল। উক্ত ব্যক্তি ফারফাহিন্নেকে হুমকি প্রদান করল এবং তার হাত থেকে এই লেখার টুকরোটি নিয়ে নেবার চেষ্টা করল এবং যখন সে ব্যর্থ হল, সে ফারফাহিন্নেকে কৌশলে তার বসের কাছে নিয়ে গেল এই বলে যে, তার বস ফারফাহিন্নেকে শিবিরে প্রবেশ করতে দেবে।

সামরিক গোয়েন্দা বিভাগে তাকে প্রশ্ন করা হল, সে কি করে। সে একজন আইনজীবীকে চাইল এবং বাইরে একটি ফোন করতে চাইল, কিন্তু তাকে কোনটাই দেওয়া হল না। যখন তারা ফারফাহিন্নের কাছে মোবাইল ফোন আবিষ্কার করল এবং সেটি নিয়ে নেবার আগে , সে কেবল তার এক বন্ধুকে একটি টেক্সট মেসেজ পাঠাতে সমর্থ হল যার মধ্যে সে কেবল ‘গ্রেফতার’ কথাটি লিখতে পরেছিল।

জিজ্ঞাসাবাদের সময়:

من كانوا معك؟

-كانوا معي؟!!!!

-إيه… لكانوا معك وصوروكي؟

-لكني قلت لك أني إعتصمت لوحدي؟

-هلأ منشوف

-بس عم قلك إنوا لجايبينن مين ما كانوا، ما إلهم علاقة بالموضوع!!!

-هلأ منشوف

-طب…ممكن تعطيني أسماء تقلك إذا بعرفهم على الأقل؟

-ما بعرف أسماء

-তোমার সাথে যে সমস্ত লোকেরা ছিল, তারা কোথায়?
-আমার সাথে?
-হ্যাঁ, তোমারা সাথে, তারা তোমার ছবিও তুলেছে
-কিন্তু আমি আপনাকে বলেছি, যে আমি কেবল এক প্রতিবাদ করছিলাম
-আমরা বিষয়টি দেখব
– আমি আপনাদের বলছি যে, তারা যেই হোক না কেন, এই ঘটনার সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই।
-আমরা তা দেখব
-অন্তত আপনি কি আমাকে তাদের নাম বলবেন যাতে আমি আপনাকে বলতে পারি আমি তাদের জানি কিনা?
-আমার এ রকম কোন নাম জানা নেই।

ফারফাহিন্নে দুইজন অল্পবয়স্ক অপরিচিত ছেলেকে হাতকড়া পড়া অবস্থায় দেখে খুবই অবাক হয়েছিল-তাদেরকে সে চিনত না। তাদের বিরূদ্ধে অভিযোগ”প্রতিবাদ করার সময় নাকি তারা ফারফাহিন্নের ছবি তোলে । বিকেল বেলা তাকে (সেই দুই অল্পবয়স্ক ছেলে নাদির এবং খালিদ এর সঙ্গে) একটি সামরিক পুলিশ ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে গোয়েন্দারা তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে।

ব্লগার বলেই চলেছে

بعدها تم الإتصال بالنائب العام الذي أصدر قرارا بإخلاء سبيل تام لنادر وخالد. أما أنا، فصدر القرار بحجزي حتى منتصف الليل ليخلا سبيلي بعدها بموجب سند إقامة. مما يعني أنه ممكن إستدعائي الى المحكمة العسكرية لاحقا. أما التهم التي تم على أساسها إحتجازي، فهي إلى الآن غير معروفة بالنسبة لي. لم يسمح لي بمكالمة إلا بعد صدور قرار النائب العام أي حوالي الساعة الثامنة…فإتصلت لإطمئنان أمي القلقة بعد ساعات من إختفائي ولولا إني ما إستطعت إرسال الرسالة النصية لصديقي لما علم أحد بمكان تواجدي لساعات.

তারা তারপর জেলার এটর্নিকে ডেকে পাঠায়, যিনি নাদির এবং খালিদ এর মুক্তির আদেশ দেন। রেসিডেন্ট ডকুমেন্টের ভিত্তিতে মাঝ রাত্তিরে আমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যার মানে আমার উপর পরবর্তীতে সামরিক আদালতে উপস্থিত হবার সমন জারি করা হতে পারে । যে সব অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে আটকে রাখা হয়েছিল, তা এখন পর্যন্ত আমার অজানা । জেলা এটর্নির আদেশ জারির আগ পর্যন্ত (রাত ৮টা নাগাদ) আমাকে ফোন করার অনুমতি প্রদান করা হয়নি …তাই ,হঠাৎ করে আমার অদৃশ্য হয়ে যাবার কারণে উদ্বিগ্ন আমার মাকে আমি কয়েক ঘন্টা পরে ফোন করতে সমর্থ হই এবং যদি আমি আমার বন্ধুকে টেক্সট মেসেজ না পাঠাতাম, তাহলে কেউ জানতে পারত না, আমি এতক্ষণ কোথায় ছিলাম।

এরপর কি?

তরুণ এই একটিভিস্ট বিস্মিত, কি অপরাধে তার সাথে অপরাধীর মত আচরণ করা হয়েছে । সে এই বলে উপসংহার টানে:

ما هو القانون الذي خرقته؟ أية مادة منه؟ ما هي تهمتي؟ تهديد الأمن القومي؟!! التعرض لهيبة المؤسسة العسكرية؟!! لم أتعرض لأحد بالسب أو الإهانة أو الشتم…كل ما فعلت هو الإعتراض السلمي على تدبير أمني منعني من دخول المخيم لملاقاة أصدقائي وأحبتي…وهذه ليست بتهمة أو بجريمة يا حضرة النائب العام. أما القانون فيكفل لي الحق بالإعتصام السلمي وبما أن عدد المعتصمين كان أنا- أي شخص واحد فقط، بالتالي لست بحاجة لعلم وخبر!

وبما أنه ليس هناك من مخالفة قانونية، فإني أعتبر أن إحتجازي كان تعسفيا وهو عقاب “أو ترباية” (مثلما قال لي أحد من الشرطة العسكرية) وهذا يعد إنتهاك صارخ لحريتي في إبداء الرأي وفي التعبير.

আমি কোন আইনটি ভঙ্গ করেছি? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি? জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া অথবা সামরিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছি? আমি তা করার কোন প্রতিজ্ঞা করিনি অথবা কাউকে অপমান করিনি। আমি যা করেছি তা হচ্ছে এক নিরাপত্তা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি যা আমাকে এক শরণাথী শিবিরে বাস করা বন্ধুর সাথে দেখা করতে বাধা প্রদান করে। এবং জনাব এটর্নী জেনারেল এটা কোন অপরাধ নয়। আইন আমাকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার অধিকার প্রদান করেছে এবং যেহেতু সেখানে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না, তাই আমাকে এই বিষয়ে কোন ঘোষণা প্রদান করার দরকার নেই।

এবং যেহেতু কোন আইন ভঙ্গ করা হয়নি, আমি আমার বন্দিদশাকে অন্যায্য এবং এক ধরনের শাস্তি বল মনে করি (যেমনটা একজন সামরিক পুলিশ আমাকে জানায়) এবং এটা এক ভাবে মত এবং ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .