- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ইরান: আমরা সবাই কম্পিউটার অপরাধী

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., ইরান, আইন, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নতুন চিন্তা, নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সরকার
Smashed computer screen [1]

আর আপনি ভেবেছিলেন আপনার কম্পিউটারেই সমস্যা আছে। ছবি তুলেছেন অ্যামান্ডা ট্রেট্রল্ট এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহৃত

ইরানের সরকারের কাছে একটা আইন আছে যার ফলে সম্ভব হয় যে কোন ধরনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে অপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করা।

‘কম্পিউটার অপরাধ আইন’ (৫৬টি ধারা সম্বলিত একটা আইন) ইরানের সংসদ দ্বারা ২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে পাশ হয়। এটা বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে বেশ কিছু সাইবার কর্মী আর ব্লগারদের আটক আর অত্যাচার করার ক্ষেত্রে, কিন্তু এর ধারাগুলো কখনোই খুব বেশী জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ বা তদন্তের সম্মুখীন হয়নি।

তাহলে আসুন আমরা কিছু বিভ্রান্তিকর, অবাস্তব আর সব কিছু ধরার চেষ্টা করা আইনের কিছু ধারা দেখি ইন্টারনেট ব্যবহার আর অনলাইনের বিষয়বস্তু নিয়ে।
কম্পিউটার অপরাধ আইন অনুসারে অপরাধী নির্ধারণ করার মূল নির্ণয়কগুলো হলো এইগুলো [2], যা একজন গণ বৈপ্লবিক আইনজীবির ব্লগে (দুইটা সূত্র থেকে সমর্থিত) তালিকা করা হয়েছে:

ক) অনৈতিক বিষয়বস্তু
খ) ইসলাম বিরোধী বিষয়বস্তু
গ) নিরাপত্তা বিরোধী আর জনগণের শান্তি নষ্টকারী
ঘ) মেধাভিত্তিক সম্পত্তি আর অডিও ও ভিজুয়াল বিষয় নিয়ে অপরাধী বিষয়বস্তু
ঙ) অন্যদেরকে অপরাধ করার জন্য উদ্ধুদ্ধ, আমন্ত্রণ বা উস্কানি দেয়া
চ) রাষ্ট্র আর সরকারী প্রতিষ্ঠান আর তাদের দায়িত্ব বিরোধী বিষয়বস্তু
ছ) অন্যান্য কম্পিউটার অপরাধকে সাহায্য করার মতো বিষয়বস্তু

কোন কৌতুক করার মানসিকতা নেই

ইসলামি প্রজাতন্ত্রের গঠনতন্ত্র বিবেচনা করলে ইসলাম বিরোধী বিষয় প্রকাশ আর বিতরণ নিষিদ্ধ করা ঠিক মনে হয়, কিন্তু অপরাধমূলক বিষয়ের ব্যাখ্যা অনেক বিস্তৃত হয়েছে। দেশ, সরকারী প্রতিষ্ঠান আর কর্তৃপক্ষকে অপমান আর ব্যঙ্গ করা অপরাধের মধ্যে পরিগণিত হচ্ছে। অন্য কথায় আপনাকে কম্পিউটার অপরাধে অপরাধী ধরা হবে যদি আপনি ইরানের নেতা, নবী আর ধর্মকে অপমান করেন বা রাষ্ট্র চালিত পরিবহন বা বিদ্যুত নিয়ে যদি মজা করেন। হ্যাঁ সত্যি। রাষ্ট্র পরিচালিত সংস্থা আর কর্তৃপক্ষের ব্যাপারেও জনগণের মতামত বেআইনি।

খরচ করবেন না, লিঙ্ক করবেন না

যে সকল বিষয়বস্তু অন্যদের উদ্বুদ্ধ, আমন্ত্রণ বা উস্কিয়ে দেয় অপরাধ করতে তা বেআইনি, কিন্তু একই পরিমানে আইনবিরোধী হচ্ছে সংবেদনশীল (সম্ভাব্য ফিল্টার করা) বিষয়ের প্রতি লিঙ্ক করা, যা নিজেই খারাপ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে সংঘাত তুলে ধরা, মাদক বা চোরাচালানি বা অন্য কিছুর মতো। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সাংসদরা এমন বিষয়বস্তু আইন বিরোধী বিবেচনা করেন যা ‘অপচয়’ (যেমন অবিবেচক অর্থ ব্যয়ের মতো) । অন্য কথায় কেউ যদি ইন্টারনেটকে বাণিজ্যিক বা বাজারজাতকরণের কাজে ব্যবহার করেন তাকে প্রশ্ন করা যাবে। ‘অপচয়’ কথাটা পরিষ্কার না আর তাই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে।

জীবনের থেকে বড় অপরাধ

বেআইনি হচ্ছে কোন প্রচারণা বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা যা এই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু লেখে, ইরানের সংবিধানের পরিপন্থী হয়, বা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের নীতিকে আঘাত করে। অনেক অবলোকনকারী অবাক হয়েছিলেন যখন ইরানী আইন কর্মকর্তারা ফেসবুকসহ বেশ কিছু ওয়েবসাইটকে দোষ দিয়েছিলেন [3] ২০০৯ সালের জুন এর মাসের নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভ পরিচালনাকারীদের বিচারের সময়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের। একবার এই ধরনের বিষয় ক্রিমিনাল আইনের আওতায় পড়লে, সাধারণ সামাজিক মিডিয়ার কাজ ইরানে অপরাধমূলক হিসাবে ধরা হবে ইরানে।

স্বচ্ছতার অভাব কেবলমাত্র বিষয়বস্তুতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আরো সাধারণভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা নিয়েও। আইনের একটা ধারা অনুসারে, কারো অধিকার নেই যোগাযোগের অনুমতি ছাড়া ‘ইন্টারনেট প্রোটোকলের উপরে নির্ভরশীল আন্তজার্তিক ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করার’। পার্সীতে [پهنای باند بین المللی] শব্দটিকে আমি ‘আর্ন্তজাতিক ব্রডব্যান্ড’ অনুবাদ করেছি কিন্তু আসলে তারা কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা পরিষ্কার না। দুইজন ইরানী সাইবার কর্মী, আমিন সাবেতি [4] আর আরাশ কামাঙ্গির [5], দুইজন এই নিষেধাজ্ঞাকে বিভ্রান্তিকর মনে করেন আর ইমেইলে আমার কাছে মন্তব্য করেছেন, “সম্ভবত এর মানে হলো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করা” যা ইরানে নিষিদ্ধ। কিন্তু এটা টেলিযোগাযোগ সফটওয়্যার স্কাইপের ব্যবহারকেও ইঙ্গিত করে থাকতে পারে।

কেবল কথার থেকে বেশী

এই আইন কেবল কাগজে লেখা না। সাম্প্রতিক বছরে বেশ কয়েকবার এটা ব্যবহার করা হয়েছে ব্লগার আর সাইবার কর্মীদের শৃঙ্খলিত করার জন্য। ইরানী ব্লগার ওমিদ রেজা মির সায়াফি [6] ধর্মীয় নেতাদের অপমান করার জন্য জেলে যান আর জেলেই ২০০৯ সালে মারা যান। মাত্র দুই মাস আগে, ব্লগার হুসেইন দেরাখশান [7] ১৯ বছরের জেলের সাজা পান শত্রু দেশের সাথে সহায়তা, প্রচারণা প্রচার আর ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের অপমান করার জন্য।

পরিশেষে, ইরানের আইন কর্মকর্তারা আমাদের জিজ্ঞাসা করতে বাধ্য করেছেন যে ইরানী নাগরিকদের জন্য বেশী বিপদজনক কি- আইনহীনতা নাকি আইন নিজেই?