দাশাইন, নেপালের সর্বাধিক পালিত উৎসব, এই বছর ২২ অক্টোবর শুক্রবার শেষ হচ্ছে। পনের দিনব্যাপী এই উৎসব দূর্গা ঠাকুরের সম্মানে পালিত হয়; যিনি ক্ষমতার, সমৃদ্ধির, মাতৃস্নেহ আর দুষ্টগ্রহের নাশকতার প্রতিক।
বিশ্বব্যাপী নেপালীরা দাশাইনকে আড়ম্বর সহকারে পালন করেন যেহেতু এটা সমাজ আর পরিবারকে একত্র করে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এই প্রিয় অনুষ্ঠান বেশ কয়েকটা কারনে সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে, বিশেষ করে পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতার জন্য।
যেহেতু দুর্গাকে ক্ষুধার আর খারাপের নাশক হিসাবে পুজা করা হয়, নেপালের মন্দিরব্যাপী দাশাইনে পশু বলী দেয়া হয়। এই বলী দুষ্টগ্রহের নাশের প্রতীক হিসাবে দেখা হয় আর ভক্তরা মনে করেন যে এটা ঠাকুরকে প্রীত করবে।
গত বছর, বিভিন্ন দল র্যালী আর মিটিং এর আয়োজন করেন যেখানে মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয় ধর্মের নামে পশু বলি দেয়া বন্ধ করতে। গ্লোবাল ভয়েসেস ‘আরও বেশী মানবিক দাশাইন উৎসব‘ শিরোনামে একটি পোস্টে এই বিষয়ের উপর আলোকপাত করেছে।
দূর্ভাগ্যবশত এই ধারা এখনো চলছে আর এই বছরের দাশাইন উৎসব দেশব্যাপী অসংখ্য পশুর বলী দেখেছে।
চেঞ্জ.অর্গ এর লরা গোল্ডম্যান প্রস্তাব দিয়েছেন যে ভক্তদের উচিত ‘নেপালের দাশাইন উৎসবের সময়ে মোষের বদলে চালকুমড়া বলী দেয়া।”
“… নেপাল পশু কল্যান নেটওয়ার্ক (এডাব্লিউএনএন) আরো দয়ালু, মানবতা মূলক পুজার জন্য ভালো ধারণা দিয়েছে। মোষ বলী না দিয়ে তার স্থলে কেননা চালকুমড়া বলী দেই? ছাগলের বদলে একটা নারিকেল? এর ফলেও তো বক্তব্য পৌঁছাবে, কিন্তু অনেক বেশী মানবিক হবে (আর কম
ভয়াবহ)।নেটওয়ার্ক এই বছরের প্রথম দিকে পশু বলী বন্ধ করুন কর্মসূচি শুরু করেন বারার গাধিমাই উৎসবের সময়ে, যখন ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০০,০০০ পশু বলী দেয়া হয়।”
অনেকে ধর্মীয় বাণীর ব্যাপারেও বলেছেন আর ভক্তদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে পশু বলী হিন্দু নীতির সাথে সমন্বয়ক না। অ্যানিমাল রাইটস নেপাল বলেছে যে মাতৃপ্রেমের প্রতীক এই দেবী পশু বলী দ্বারা সন্তুষ্ট হতে পারেন না, যেহেতু তিনি তার নিজের সৃষ্টির মৃত্যু প্রত্যক্ষ করবেন।
“পশু অধিকার নিয়ে হিন্দু ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, দেব দেবীদের খুশি করার জন্য কোন ধরণের পশু বলীর কথা বলা হয়নি, যারা তাদের নামে কখনো তাদের নিজেদের কোন পশু বলীর কথা বলবেন না। মানুষ এইসব নিরাপরাধ পশুকে তাদের স্বার্থের কারনে বলি দিচ্ছে। বাস্তবে হিন্দু ধর্ম আর জীবন দর্শনের বিরুদ্ধ এটা। সহ জীবদের জন্য যে সম্মান থাকা দরকার তা মেনে চলা উচিত।”
মজার ব্যাপার, দাশাইনে পশু বলীর ঘটনা কেবলমাত্র নেপালের ভিতরে বড় একটা ব্যাপার। বিদেশে যেসব নেপালী দাশাইন উদযাপন করছেন তারা বেশীরভাগ এই ব্যাপারে চুপ, বেশীরভাগ এই কারনে যে ইউরোপ আর উত্তর আমেরিকাতে বসবাসরত ব্যক্তিরা দাশাইনের উদযাপনে পশু বলী দিতে পারেন না।
পশু বলী নিয়ে বিতর্ক সত্ত্বেও আর এই ব্যাপারে বাড়তে থাকা মিডিয়ার দৃষ্টি সত্ত্বেও, দাশাইন দেশে আর বিশ্বের অন্যান্য স্থানে নেপালীদের জন্য বিশেষ স্থান দখল করে রাখে।
আফগানিস্তানে, ব্রিটিশ গুর্খা বাহিনী দাশাইনকে ঐতিহ্যবাহী রূপে উদযাপন করেছে, সনাতনী টিকা (সিঁদুর, দই আর চাল দিয়ে তৈরি) আর গুরুজনের আর্শীবাদ নিয়ে।
“গূর্খারা তাদের প্রতিটি প্যাট্রোল বেইজে ছোট একটা মন্দির স্থাপন করেছে সাপ্তাহিক প্রার্থনার জন্য। আগস্টে ব্যাটেলিয়ন পন্ডিত গুর্খাদের সাথে নাহর-এ-সারাজে দেখা করেন ও পুজা করেন এবং প্রতিটি সেনাকে টিকা (কপালে লাল ফোঁটা দিয়ে) আশীর্বাদ করেন।
দাশাইন উৎসবের সময়ে মন্দিরে ফলের ভোগ দেয়া হয় আর সেনাদের জন্য প্রতিদিন সকালে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। দাশাইনের সময়ে অনেক গুর্খাকে লাল টিকা পরা অবস্থায় দেখা যায়- নিরাপত্তা আর উৎকর্ষতার জন্য প্রার্থনা যখন তারা তাদের অপারেশনের ভ্রমণের শেষ পর্যায়ে পৌঁছান আর তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছান।”
সাংস্কৃতিকভাবে মিশ্রিত পরিবারেও দাশাইন উৎসাহের সাথে পালিত হয়। একজন আমেরিকান যিনি নেপালির সাথে সম্পর্কিত, তার ব্লগ আমেরিকানেপালীতে লিখেছেন এই উৎসব পালনের অভিজ্ঞতার কথা।
যে কোন ধর্মীয় কাজের মতো, দাশাইন তার নিজস্ব নীতি আর চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, কিন্তু এইসব চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে এইসব পালনে যে বিশাল আনন্দ আসে তা অবজ্ঞা করা যায়না।