ভারত: জামাইদের জন্য বিশেষ এক দিন

ঐতিহ্যবাহী জামাই ষষ্ঠীর খাওয়ার আয়োজন-ছবি তাপস সেন গুপ্তার (ডাব্লিউডাব্লিউডাব্লিউ.ক্রিয়েটিভআইরিস.নেট), অনুমতি নিয়ে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

বর্তমানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের জীবনে যে সমস্ত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ তাদের জন্য বিশেষ দিবস উদযাপন করা হয়। যার ফলে আমরা পেয়েছি মা দিবস, বাবা দিবস এবং এ রকম আরো আনেক দিবস। তবে ভারতে বাঙ্গালী শাশুড়িরা ঐতিহ্যবাহী একটি বিশেষ দিন উদযাপন করে, এই দিনে তারা করে নানা মজা করে, এটি একটি সামাজিক প্রথা যাকে জামাই ষষ্ঠী বলে ডাকা হয়। এই দিনটি তাদের জামাইদের জন্য এক বিশেষ দিন।

এই বিশেষ উৎসবের দিনে মেয়ের বাবামা তাদের বিবাহিত কন্যা এবং জামাইদের, জামাইয়ের সম্মানে দাওয়াত দেয়, এই দিনে শাশুড়ি জামাইদের জন্য সুস্বাদু খাবার তৈরি করে এবং তাদের উপহার সামগ্রীতে ভরে দেয়। জামাইরা এই দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকে এবং যদি ১৭ জুন কোলকাতায় ভ্রমণ করেন (এ বছর কোলকাতায় জামাই ষষ্ঠী দিবসটি উদযাপন করা হয়েছে) তা হলে দেখবেন সেদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিবাহিত পুরুষ অফিস শেষ হবার আগেই অফিস থেকে বের হয় যাচ্ছে, যাতে তারা এমন এক বিশেষ অনুষ্ঠান অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ না হয়, যে অনুষ্ঠান শাশুড়িরা জামাইদের রাজকীয় সম্মান প্রদর্শন করে।

ব্লগার পো জামাই ষষ্ঠীর কথা স্মরণ করেছেন, যে দিনটি ‘আনন্দে পরিপূর্ণ থাকে’, ব্লগার ভদ্রমহিলা লিখেছেন:

এই দিনে প্রথমে শাশুড়িরা জামাইয়ের জন্য উপবাস থাকে এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করে। আগে এই দিনের মানে ছিল দিদা (নানীর বাসায়) এক রাজকীয় ভোজ,এর সাথে কেবল বাবা নয়, আমরা সকলেই ভর্তি উপহার সামগ্রী পেতাম… সেদিন আমরা নতুন পোশাক পরতাম এবং মজাদার সব খাবার খেতাম। এটা ছিল খুব আনন্দের এক দিন।

একটা হালকা পোস্টে কমলিকা জানাচ্ছে, কেন ঐতিহ্যগত ভাবে জামাই ষষ্ঠী দিবসটি পালন করা হয় তার “প্রকৃত কারণ”। সে বলছে:

এটা আসলে জামাইকে প্রদান করা এক ধরনের ঘুষ, যার মধ্যে দিয়ে শাশুড়ি তাদের মেয়েকে সুখী দেখতে চায়।

অরিত্রা কৌতুককর ভাবে এই দিনের কর্মপদ্ধতি সম্বন্ধে ধারণা নেবার সুযোগ প্রদান করছে এবং জানাচ্ছে কিভাবে এই ধারণা করা সহজ যে “জামাই একেবারে নতুন” নাকি অথবা ইতোমধ্যে “কয়েক বার শাশুড়ীর বাড়ি” এসেছে। তার মতে:

এটা এমন একটা অনুষ্ঠান যে দিনে বাঙ্গালী শাশুড়ীরা তাদের জামাইদের আদর করে, তাদের খাওয়ায়, জামাইদের উপহার প্রদান করে- সকল কিছুই করে একটি দিনে!…জামাইরা এই অনুষ্ঠানে বেশ ভালোই করে, কিন্তু সকল কিছু নির্ভর করে তারা আসলে কি ধরনের জামাই তার উপর- তারা কি একেবারে নতুন এক জামাই, যারা কম কথা বলবে এবং কাজকর্মে খানিকটা সীমাবদ্ধতা রাখবে, যার ব্যতিক্রম দিক হচ্ছে সে বড়দের পা ছোঁয়ার জন্য সে মাথা নত করবে এবং নতুন মুখের সকল আত্মীয়দের সাথে পরিচিত হবে। যে সমস্ত লোকের সাথে তার দেখা হবে তারাও একই ধরনের প্রতিক্রয়া প্রদর্শন করবে- বিয়েতে দেখছিলাম.. তারপর এই কথা হল। একটা মাপা হাসি দিয়ে জামাইবাবু এই সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করবে এবং যেদিকে খাবারের থালা ও রান্না রাখা, সেদিকে রওনা দেবে; নতুন জামাইদের জন্য উপদেশ; যারা সাহায্য করতে আসে তাদের উপেক্ষা করুন, কারণ তারা সংখ্যায় অনেক, পুরোনো জামাইদের জন্য উপদেশ, আপনারা ইতোমধ্যে জেনে গেছেন কি কি উপেক্ষা করতে হবে, কি নয়।

এরপর উপহার সামগ্রীর পালা। এইদিনে উভয় পক্ষ উপহার সামগ্রী আদান প্রদান করে। এক্ষেত্রে প্রায়শই জামা উপহার প্রদান করা হয়! তবে নতুন কোন উপহারের চিন্তাকে সব সময় স্বাগত জানানো হয়। এই দিনের জন্য, আপনার শাশুড়ি, যদি তিনি সে রকম হন, তার কন্যার নাক গলানোর সুযোগকে বন্ধ করে দেব এবং স্বামীটি (ওয়াও) সেদিন সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে! বছরের বাকি ৩৬৪ দিন, আর সব দিনের মত (হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা জানি)

এখন, জীবন অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং ছেলেমেয়েরা প্রায়শই তাদের পিতামাতার কাছ থেকে দুরে বাস করে থাকে। যার কারণে জামাই ষষ্ঠী নামক অনুষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই মুশকিল. এই সব বিষয় কিছুটা রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে [বাঙ্গলা ভাষায়]. অনেক দুরে বাস করা শাশুড়িরা জামাইকে দুর থেকে শুভ কামনা জানিয়ে ফোন করে, এই দিনে শহরের রেস্তোরাঁগুলো ব্যস্ত বাঙ্গালীদের জন্য সুস্বাদু খাবারের আয়োজন করে থাকে, সেই সমস্ত বাঙ্গালীর জন্য যাদের আর সময় বা ধৈর্য কোনটাই নেই, এবং বাবা মা এই দিনে জামাইদের কি উপহার দেওয়া যায় তাই নিয়ে তাদের সন্তানদের সাথে ওয়েব ক্যামেরায় আলোচনা করে।

বর্তমানে, বিবাহিত পুরুষেরা যারা কাজের মধ্যে ডুবে থাকে, তারাও জামাই ষষ্ঠীর আদর পাওয়ার যোগ্য। বুদ্ধিমতী কমলিকা যে সমস্ত জামাই, শাশুড়ি ভাগ্য ভালো পেত চায়, তাদের কিছু উপদেশ দিচ্ছে:

আমার বিবাহিত বন্ধুরা…জামাই ষষ্ঠীতে আদর ও উপহার পেতে শিখুন.. অন্যথায় এই দিনের বিষয়ে আপনার মাথায় যে ধারণা থাকবে, তেমনটা নাও ঘটতে পারে। আপনি দ্বিতীয় কারো মাধ্যমে পাওয়া সাহায্যকে বিদায় জানাতে শিখুন, অন্যথায় উপাদেয় খাবার ও এ ব্যাপারে আপনাকে যে শ্রদ্ধা দেখানো হবে, সে সব হারাবেন। কারণ এই পৃথিবীতে কোন কিছুই বিনে পয়সায় পাওয়া যায় না। কাজেই সোনার থালায় খেতে চাইলে সারা বছর ধরে শাশুড়ি এবং বউয়ের মন জুগিয়ে চলুন।

এটা বেশ কৌতুহলজনক এক তথ্য রয়েছে। প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্রের নাম ছিল জামাই ষষ্ঠী, যা ১৯৩১ সালে মুক্তি পায়। অরিত্রা রসিকতা করে জানাচ্ছে:

কাজেই বলা যায়, জামাইয়ের নির্বাক যুগে প্রথম শব্দের মাত্রা যোগ করেছে!

ছবির কৃতিত্ব, তাপস সেন গুপ্তের- ক্রিয়েটিভ আইরিস, ফ্লিকারে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .