পোল্যান্ড: আত্মা শান্তিতে ঘুমাক, কৃষ্ণ শনিবার, ১০.০৪.২০১০

ওয়ারশতে প্রজ্বলিত মোমবাতি, ছবি মারিয়া সেইডেল-এর

ওয়ারশতে প্রজ্বলিত মোমবাতি, ছবি মারিয়া সেইডেল-এর

যেমনটা আমরা পোলিশ জাতির জীবনে ঘটা বেদনাদায়ক ঘটনার প্রথম ২৪ ঘন্টার মাঝে বাস করছি, এই সময় পোল্যান্ড যখন তার রাষ্ট্রপতি ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ ৯৫ জন ব্যক্তিকে হারিয়েছে, তখন সামাজিক প্রচার মাধ্যম সকালের এই শোকাবহ ঘটনার বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছে।

ফেসবুকে, লোকজন নতুন তৈরি করা একটি দলে জড় হয়েছে:

fbgroups

[*] স্মোলেনেস্কের কাছে যে সমস্ত পোলিশ নাগরিক নিহত হয়েছেন তাদের জন্য।

এই শোকের সময় আমরা একতাবদ্ধ

আত্মা শান্তিতে ঘুমাক (রেস্ট ইন পিস বা আর.আই.পি) কৃষ্ণ শনিবার ১০.০৪.২০১০

এখনো অনেকের এই সত্যটি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে :

LukaszSosinski

লুকাসজ সোসিনিস্কি: উন্মাদ! অসম্ভব… আমি এটা বিশ্বাস করি না।

অন্যরা আজকের দিনের এই বিপর্যয়ের কথা স্মরণ করার উপর জোর দিয়েছেন ও কোন এলাকায় এটি ঘটেছে তার উপর:

GosiaMutka

গোসিয়া মুটকা : এই ঘটনার সাথে কাতিনে ঘটা হত্যাকাণ্ড এমন এক বিষয় যার কথা পোলিশ জনতা কখনোই ভুলবে না।

অনেকেই পুরো ঘটনার দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টির তুলে ধরেছেন:

MariaPotrykus

কাতিনের ঘটনায় যারা নিহত হয়েছিল তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তারা সেখানে গিয়েছিল এবং নিজেরাই দুর্ঘটনার শিকার হল….

In front of the Presidential Palace, Warsaw, photo by Maria Seidel

রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনের অংশ, ওয়ারশ, ছবি মারিয়া সেইডেল-এর।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইট ‘নাসকা-ক্লাসা’ বেশ কিছু পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ছাপে, যা নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা, জাতির প্রতি বেদনা এবং পুরো দেশের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির পাশে থাকা ব্যক্তিদের প্রতি নতুন এক ঐক্যবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছে:

Alicja

যখন তিনি জীবিত ছিলেন কেউ তাকে সমর্থন করেছে, অন্যেরা তার বিরোধিতা করেছে। এই দুর্ঘটনার পর সকলেই তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে! বিষয়টি বেদনাদায়ক এই কারণে যে, কেবল এই সময়ে তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। যখন তার জীবদ্দশায় তাকে নিয়ে আমরা রসিকতা করতাম….এখন কেবল বিষাদ এবং শোক, কারণ আমাদের রাষ্ট্রপতি ইহজগৎ থেকে বিদায় নিয়েছেন এবং তার সাথে আরো অনেকেও এ জগৎ ছেড়ে চলে গেছে। এটা বেদনাদায়ক এবং হতাশার বিষয় যে, কেবল এখন তার প্রশংসা (*) করা হচ্ছে. তার পরিবারের প্রতি তীব্র সহানুভূতি প্রকাশ করা হচ্ছে এবং তারাই এসব করছে, যারা সত্যিকারের অনুতাপ করে!!!

photo3

ওয়ারশ-এ এক কিশোরী স্কাউট, ছবি মারিয়া সেইডেল-এর

যখন সবাই সরকারি বিবৃতির অপেক্ষায়, তখন ফোরাম ও সংবাদের মন্তব্যে, লোকজন এই দুর্ঘটনার পেছনের প্রকৃত কারণ নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেছে। রোলেড সবচেয়ে বাস্তব কারণগুলোর তালিকা তৈরি করেছে:

১ আপনারা পুরনো বাজে একটা যান নিয়ে উড়াল দিলেন, এমন এক যান, যাকে এমনকি পাইলটও ওড়াতে ভয় পাচ্ছিল।
২. আপনারা পুরনো বাজে একটা যান নিয়ে ঝড়ো এক আবহাওয়ায় উড়াল দিলেন, সামনের কোন জিনিস দেখা যাচ্ছিল না এমন আবহাওয়ায়।
৩. আপনারা এই বাজে জিনিসটিকে এমন এক বিমান বন্দরে নামানোর সিদ্ধান্ত নিলেন যা বাজে আবহাওয়া নামার অনুপযুক্ত।
৪. বিমানে ৮০ জন এর বেশি যাত্রী ছিল, প্রধানত তারা ছিল দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তি।
৫ এটা একটা সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার যে, এমন এক ব্যক্তি যার অতীত ইতিহাস রয়েছে পাইলটদের জোর করা, যাতে তারা “কম ভয় পায়” [অতীতে খারাপ আবহাওয়া রাষ্ট্রপতির জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানানোর কথা উল্লেখ করে], এর ফলাফল, যদি আপনি পরিষ্কার ভাবে দেখতে পারেন, তা হলে তাদের পরিস্থিতি দেখতেই পাচ্ছেন।

উইজেক_এক্সট্রিমা ধারণা করছেন [পোলিশ ভাষায়]:

বেদনাদায়কভাবে, আমি বিশ্বাস করি পাইলটের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। আমি শুনতে পেয়েছি তাদের একজন বলছে: “আমরা রাশিয়াকে এর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দেব না, আমরা কি করবো”- বিশেষ করে কাতিন যাবার পথে। আন্তর্জাতিকভাবে এটা আমাদের জন্য একটা লজ্জা, যখন তা সরকারি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

এনওয়াইসিএইচ রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপের সম্ভাব্যতার কথা উল্লেখ করছে [পোলিশ ভাষায়]:

যদি রাশিয়া তাদের অবতরণ না করার পরমার্শ দিয়ে থাকে, তা হলে আমি নিশ্চিত যে কাসজর [রাষ্ট্রপতি] নিজে ব্যক্তিগতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, অন্যথায় দেরি করে সিদ্ধান্ত দিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটার অপেক্ষায় থাকতেন না।

এক্সওয়াইজেড এই রকম সিদ্ধান্ত নেবার পেছনের সম্ভাব্য কারণ কি হতে পারে তা উল্লেখ করছেন [পোলিশ ভাষায়]:

অভিজ্ঞ পাইলট এবং জেনারেলরা এই বিমানে ছিলেন। তারা এই রকম আবহাওয়ায় অবতরণ করার ঝুঁকি সম্বন্ধে অবশ্যই অবহিত ছিলেন। কোন কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে, যারা পরিকল্পিত দেরির কারণে বিমানবন্দর পাল্টানোর উপদেশ গ্রহণ করে/ কোন উৎসব উদযাপনে তাদের অংশ নেওয়াকে অসম্ভব করে তোলে এবং হয়ত তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল-সত্য কি ছিল তা আমরা কখনোই জানতে পারবো না।

পিএফজি একই সাথে এতগুলো কর্মকর্তার একই বিমানে ভ্রমণের মত দায়িত্বহীন কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন [পোলিশ ভাষায়]:

আমি বুঝতে পারি না কেন রাষ্ট্রপতি তার এতগুলো সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, জেনারেল গাগর ও অন্য সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমান যাত্রা করেছিলেন। সামরিক বাহিনীর সকল প্রধানই একই বিমানে যাচ্ছিল-এটা এক অবিশ্বাস্য ব্যাপার।

যখন আমরা সকলেই এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছি, ওয়াইকপ ব্যবহারকারী এই তথ্যের উপর মনোযোগ দিয়েছে [পোলিশ ভাষায়] বিশ্ব কাতিন হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সত্যি ঘটনা জানতে পেরেছে। হিমাস লিখেছে [পোলিশ ভাষায়]:

@জেমেসিকআর, পুরো ঘটনার বিষাদময় বাস্তবতা সত্ত্বেও, আপনি ঠিকই বলছেন। যদিও এই বিষয়ে আমার অনুভূতি মিশ্র। আমি মনে করি আজকের বেদনাদায়ক ঘটনা হয়ত পশ্চিমের চোখ খুলে দেবে এবং ভবিষ্যৎ-এ আমরা “পোলিশ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পোল্যান্ডের বন্দি শিবির)” -এর কথা শুনবো না। আশা করি ডজন খানেক লোকের মৃত্যু হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনাকে ঢেকে দেবে না।

ম্যাকজারনি এক ব্যবহারকারী মন্তব্যের পরবর্তী ঘটনাকে অনুসরণ করেছেন, যে দাবি করেছে যে এই দুর্ঘটনা সম্বন্ধে জানার জন্যই কেবল অনেক বেশি লোক প্রধান সার্চ ইঞ্জিনে প্রবেশ করে:

মানবের এই কৌতূহলের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমি আর একধাপ এগিয়ে গিয়ে বলতে চাই যে, আজকের এই বেদনাদায়ক ঘটনা উপেক্ষিত হবে না এবং দেখাবে যে, অন্যরা কিসের জন্য লড়াই করছিল- স্মৃতির জন্য। বেদনাদায়ক বিষয়টি হচ্ছে, এর জন্য তাদের চড়া মূল্য দিতে হল।

জ্যাক্সন একটি ইতিবাচক মন্তব্য করেছে [পোলিশ ভাষায়], সেখানে সে উল্লেখ করেছে এটা পোল্যান্ড ও রাশিয়ার সম্পর্ক আরো উন্নত করতে সাহায্য করবে।

এবং হয়ত এতে পোল্যান্ড-রাশিয়ার সম্পর্ক খানিকটা ভালো হবে।

All flags at half mast, photo by Maria Seidel

সকল পতাকা অর্ধনমিত, ছবি মারিয়া সেইডেল-এর।l

ব্লগ ইঞ্জিন ব্লক্স.পিএল, ব্লগে প্রতিক্রিয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকার উত্তরে, পাঠকদের আহ্বান জানিয়েছে [পোলিশ ভাষায়] তাদের পোস্টের মন্তব্য বিভাগে, যে সমস্ত মন্তব্য এসেছে সেগুলো সংগ্রহ করার জন্য। কিছু ব্লগার যেমন, গ্রেরজেগরজ আজদুকিওয়াজিক সেদিনের ঘটনাবলি সবাইকে জানিয়েছে [পোলিশ ভাষায়], যার মধ্যে ছবিও অর্ন্তভুক্ত ছিল:

এই বেদনাদায়ক ঘটনটি আমার সারাটি দিন মাটি করে দিয়েছে। আমি ধারাবাহিক ভাবে চলতে থাকবে এক অনুষ্ঠান শুরু করতে যাচ্ছিলাম, যার নাম ফোটো ডে (ইতোমধ্যে #৮.০ সংস্করণ পর্যন্ত তৈরি হয়েছে)। সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে যে এলাকাটি পরিষ্কার করা জন্য বন্ধ করে রাখা হয়েছে, সেখানে ডজন খানেক সাংবাদিক জড় হয়েছিল। এদের একজন কথা বলতে বলতে আমাকে অতিক্রম করে গেল। আমি শুনতে পেলাম, “রাষ্ট্রপতি”, “সকলেই নিহত?” ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করছে। আমি মনে করেছিলাম এটা বুঝি কোন রসিকতা (গুজব তৈরির জন্য ভিড়ের মঝে কোন কিছু বলা)। ভূগর্ভস্থ সুরু এলাকা দিয়ে হেঁটে বের হয়ে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া শুঁড়িখানায় প্রবেশ করলাম। বিস্মিত হয়ে আবিষ্কার করলাম সেখানে একটা এলসিডি টিভি, সেটা চালু ছিল। কিছু লোক সেখানে হা করে টিভির পর্দা দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল। তখন সময় ছিল সকাল ৯.৫৬ মিনিট। এবার সকল কিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। এটা কোন রসিকতা নয়! বেদনাদায়ক ঘটনা!

অন্য ব্যক্তিরা যেমন ইয়েসসস-এর মত লোকেরা, তাদের পোস্টের আকার খুবই ছোট রেখেছে [পোলিশ ভাষায়]:

লোকজনদের জন্য বেদনাহত। জনতার জন্য আমি দুঃখিত। রঙ বা মন্তব্যের দিকে আমি তাকাচ্ছি না। গভীরভাবে শোকার্ত।

ব্রানিস্ল কমোরস্কি যিনি পরবর্তী নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত দেশটিকে পরিচালনা করবেন, তিনি তার রাষ্ট্রীয় ভাষণে[পোলিশ ভাষায়] পোলিশ জনতাকে এই দিনে তাদের অনুভূতির বিষয়টিকে নিশ্চিত করেছেন :

আজ আমরা জাতীয় এক নাটকীয় ঘটনার আলোকে এক হয়েছি। আজ আমাদের মধ্যে এখানে আলাদা ভাবে কোন বামপন্থী বা ডানপন্থী নেই। চিন্তা এবং বিশ্বাসের ভিন্নতার আজ তেমন গুরুত্ব নেই। আজ আমরা এক হয়েছি, এক ভিষণ নাটকীয়তার কারণে এক হয়ে দাঁড়িয়েছে, অনেক লোকের মৃত্যুতে, এই দুর্ঘটনার যারা শিকার সেই সমস্ত পরিবারের বেদনায় আমরাও অংশীদার এবং মাতৃভূমির প্রিয় মানুষদের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন।

ওয়ারশ থেকে ছবিগুলো সরবরাহ করার জন্য মারিয়া সেইডেলকে বিশেষ ধন্যবাদ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .