যুক্তরাজ্য: ইরাকী সমকামী সম্প্রদায়ের নেতার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদন প্রত্যাখান করা হয়েছে

আলি হিলি ইরাকের মহিলা ও পুরুষ সমকামী, উভয়লিঙ্গ ও লিঙ্গ পরিবর্তনকারী সম্প্রদায় (এলজিবিটি)-এর নেতা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সরকার তাকে বলেছে যে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা তার রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের আবেদনকে প্রাধান্য দেওয়া হবে না, যদিও জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক দূতাবাসের (ইউএন হাই কমিশন ফর রিফিউজি) প্রধান হিলির আবেদনকে “বিশেষ বিবেচনায়” দেখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন, বিশেষ করে “ঝুঁকির মধ্যে” বাস করে জনগোষ্ঠীর একজন হিসেবে

হিলির আবেদন, যা তিন বছর ধরে পড়ে আছে, এর কারণে তিনি বাইরে কোথাও যেতে পারেন না এবং এর ফলে তার সমর্থকরা বলছেন. তার এই আবাসনের চেষ্টা ইরাকের সমকামী (এলজিবিটি) সম্প্রদায়ের অবস্থানকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। ২০০৩ সালে লন্ডন ভিত্তিক একটি দল এই নিয়ে প্রচারণা শুরু করে।

“ইরাকের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলার জন্য হিলি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক অনুরোধ লাভ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দল গে লিবারেশন নেটওয়ার্ক ও ইন্টারন্যাশনাল গে এন্ড লেসবিয়ান হিউম্যান রাইটস ক্যাম্পেইন (পুরুষ ও মহিলা স্বাধীনতাকামী সমকামী যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক পুরুষ ও মহিলা সমকামী মানবাধিকার প্রচারণা সংস্থা), তিনি এসব অনুষ্ঠানে যেতে পারছেন না”। প্প্রচারণার সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা এই তথ্য জানাচ্ছেন।

হিলির আইনজীবী যুক্তরাজ্যের বোর্ডার এজেন্সিতে ২০০৯ সালে লিখেছে, “তিনি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রচণ্ডভাবে এই সমস্ত কাজে অংশ নিতে (ভ্রমণ করতে) চান, যাতে ইরাকের সমকামী নারী ও পুরুষদের সমর্থন করা এবং তাদের দুর্দশার প্রতি সারা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়”।

গত ছয় বছরে ইরাকে প্রায় ৭০০ জনের মত সমকামী ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে, এই তথ্য জানাচ্ছে ইরাকের সমকামী সম্প্রদায়। ইরাকের ভেতরে হিলির বিরুদ্ধে একটি ফতোয়া জারী করা হয়েছে।

পিঙ্ক নিউজ -এর পেছনের আরো বিস্তারিত সংবাদ এই লিঙ্কের মাধ্যমে পল কানিং-এর একটি মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তুলে ধরছে , যিনি একজন পুরুষ সমকামী অধিকার কর্মী (গে রাইটস এক্টিভিস্ট) ও এলজিবিটি এসাইলাম নিউজ ওয়েবমাস্টার (সমকামী রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক সংবাদের ওয়েবমাস্টার), কানিং বলেন:

এটা শোনার পর অনেক ব্যক্তি ধাক্কা খেতে পারেন, কিন্তু ইরাক থেকে যে সমস্ত সমকামী ব্যক্তি বের হয়ে এসেছে তাদের কথা যদি শুনেন- তা হলে জানবেন, সাদ্দামের সময় তারা সেখানে ভালো ছিল।

নভেম্বর ২০০৯ -এ গে উইদাউসট বর্ডার্স (সীমান্ত বিহীন পুরুষ সমকামীর দল) ব্লগ ইরাকের পুরুষ ও নারী সমকামীদের অবস্থা জানানোর জন্য ইরাকের সমকামীদের পরিস্থিতি প্রকাশ করে

ইরাকে ইন্টারনেট ব্যবহার নতুন শিকারকে চিহ্নিত করার এক মাধ্যম, আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এখন কম্পিউটার বিশ্লেষকদের নিয়োগ দিচ্ছে, যাতে তারা এই অঞ্চলে পুরুষ সমকামীদের সাক্ষাৎ (ডেটিং) পায় ও ওয়েবসাইটে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে চিহ্নিত করা যায়। তারা ইন্টারনেট ক্যাফের মালিকদের সাথে কাজ করে, যাতে যে সমস্ত ব্যক্তি সব সময় এই সব সাইটে প্রবেশ করে তাদের চিহ্নিত করা যায় এবং তাদের প্রলুব্ধ করার জন্য ভূয়া পরিচয় তৈরি করে।

এই সমস্ত ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও, যুক্তরাজ্যের বর্ডার এজেন্সি বা ইউকেবিএ (ইউকেবিএ-যুক্তরাজ্যের সীমান্ত, অভিবাসন ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অংশ ), হিলির আবেদনের গুরুত্বকে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে বলছে:

• হিলি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে সমস্ত প্রমাণপত্র দাখিল করেছেন তা “গ্রহণযোগ্য নয়”

• ফতোয়া জারি করার [হিলির বিরুদ্ধে] মানে এই নয় যে হিলি, “পরিষ্কারভাবে ও তৎক্ষণাৎ নাজুক শ্রেণীতে অবস্থান করছে”

• হিলির রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের সিদ্ধান্ত প্রদানে দেরি হবার কারণ (জুলাই, ২০০৭ থেকে এটি আটকে রয়েছে) তা “নিজস্ব ক্ষেত্রে কোন বিশেষ ব্যতিক্রম ঘটনা নয়”

• তার ঘটনা “জোরালো নয়”

ফটো এজেন্সি ডেমোটিক্স-এর, একটি ছবি এখানে রয়েছে, যেখানে হিলি তার ঘটনা নিয়ে লন্ডনে প্রতিবাদ করছে, তার প্রচারণার জন্য তৈরি করা সাধারণ এক লিঙ্কে তা প্রদর্শন করা হচ্ছে:এচটিটিপি://বিট.এলওয়াই/আলিহিলি

ইরাকের সমকামী সম্প্রদায়ের বৃটেনের নাগরিকদের জন্য কিছু পরামর্শ রয়েছে, যারা দরখাস্ত নাকচ হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে হিলির আবেদনের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে ইচ্ছুক: যেমন, উদাহরণ হিসেবে বলা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং নাগরিকদের নিজস্ব এলাকার সংসদ সদস্যদের কাছে এই বিষয়ে লেখা।

যারা যুক্তরাজ্যের বাইরে বাস করে তাদের ক্ষেত্রে এই প্রচারণার পরামর্শ হল রাজনীতিবীদ ও সংগঠকরা যেন হিলিকে তাদের দেশে আসার জন্য আহ্বান জানায় (বর্তমান পরিস্থিতিতে যে আহ্বানে সে সাড়া দিতে পারবে না) এবং এই সব অনুরোধ জনতার গোচরে আনা।

ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রদান করা দরখাস্তের উপর সমর্থনসূচক মন্তব্য সংগ্রহ করা হচ্ছে, যেখানে যুক্তরাজ্যের সরকারকে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা এই আশ্রয় প্রদান প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে (লেখার সময় এর নিচে কেবল ৬০০ টি নাম ছিল)।

দরখাস্তে স্বাক্ষর করা একজন পল এলেন, তিনি বলেছেন:

যে সমাজ আপনাকে হুমকি প্রদান করে, সেখানে কি আপনি লম্বা সময় বাস করতে চান, যে সমস্ত ব্যক্তি আপনাকে ভয় দেখায়, ঘৃণা করে এবং আঘাত করে, ধর্মের মাধ্যমে, তাদের মাঝে?

রন এডিসন এর সাথে সাধারণভাবে কেবল যোগ করেছেন:

আপনাদের লজ্জিত হওয়া উচিত, আবেদনটিকে এখনই আলাদা করে ফেলুন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .