হাইতিতে গ্লোবাল ভয়েসেস: পুনর্নির্মাণ বিষয়ে

হাইতির ভূমিকম্পের ঘটনা পরবর্তী সময়ে নাগরিক প্রচার মাধ্যমকে [সিটিজেন মিডিয়া] সক্রিয়ভাবে সাহায্য করার জন্য গ্লোবাল ভয়েসেস দুজন ব্যক্তিকে হাইতিতে পাঠিয়েছে। এই দুজন হলেন জর্জিয়া পপ্লেওয়েলএলিস বাকের। তারা ধ্বংসস্তুপের থেকে পুনরায় সবকিছু গড়ার যে উদ্যোগ সে ব্যাপারগুলো সরাসরি বর্ণনা প্রদানে অবদান রাখছেন। তাদের কাজ সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানুন

পোর্ট অ প্রিন্স, হাইতি, ৩০ জানুয়ারি, ২০১০

গতবছর একটা বাড়ি আবার নতুন করে সাজানো হয়েছিল এবং সেটির বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হাইতির পুনঃগঠন নিয়ে যে সমস্ত আলোচনা হচ্ছে তার প্রতি আমার স্বাভাবিক এক কৌতূহল রয়েছে। গতকাল আমরা শুনেছি যে কর্তৃপক্ষ পোর্ট-অ-প্রিন্সের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ধ্বংস করে দেওয়া শুরু করছে, যদিও সরকারি ভাবে ভবন ধ্বংস করার কোন পরিকল্পনা এখনো ঘোষণা করা হয়নি। আমরা দেখেছি এখানে খুব সামান্য পরিমাণ ভবন রক্ষা পেয়েছে, কিছু বিধ্বস্ত বাড়ির টুকরা, যা নিজে নিজে অপসারণ করতে হবে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে আছে, ট্রাকটরের মত এক যন্ত্র যার নাম ব্যাকহো তার একটি অথবা দু’টি এদিক ওদিক কাজ করছে, শহরের পথে এগুলো আমাদের চোখে পড়েছে, যারা এসব ব্যবহার করতে পারে এবং যারা এর ব্যবহারে ক্ষমতা রাখে, যেমন সোজেব্যাঙ্ক নামক বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তারা এই যন্ত্র দিয়ে ধ্বংস স্তুপ পরিষ্কার করার কাজ করে যাচ্ছে।

পোর্ট-অ- প্রিন্সে ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি থেকে লোকজন নষ্ট না হওয়া আসবাবপত্র উদ্ধার করছে। ছবি জর্জিয়া পপ্লেওয়েলের তোলা। এই ছবি ফ্লিকারে পোস্ট হয়েছে এবং তা ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছে।

পোর্ট-অ- প্রিন্সে ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ি থেকে লোকজন নষ্ট না হওয়া আসবাবপত্র উদ্ধার করছে। ছবি জর্জিয়া পপ্লেওয়েলের তোলা। এই ছবি ফ্লিকারে পোস্ট হয়েছে এবং তা ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়েছে।

মিয়ামি হেরাল্ড পত্রিকায় জ্যাকুলিন চার্লস লিখেছে, সরকার হিসেব করে দেখেছে যে প্রায় ২৫,০০০ মত সরকারি ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেরামত করতে হবে অথবা কিছু প্রতিষ্ঠান এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। এর বাইরে হাইতির প্রায় ২২৫,০০০ টির মত বাসা আর বাসযোগ্য অবস্থায় নেই। সর্বোপরি প্রায় ২.১ বিলিয়ান কিউবিক ফুটের মত কনক্রিট ও বাড়ির ধ্বংসস্তুপ শহর থেকে সরিয়ে বাইরে নিয়ে ফেলতে হবে। এই প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে জাতি সংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১২,০০০ লোককে ভাড়া করা হয়েছে, যারা এই ধ্বংসস্তুপের ময়লা পরিষ্কার করবে এবং এর ফলে সামনের সপ্তাহে ৫০,০০০ এর মত দীর্ঘ পরিষ্কার রাস্তা পাওয়া যাবে। আমি ধারণা করি, এই তথ্য পাওয়া গেছে জাতি সংঘের সদর দপ্তরে প্রতিদিনকার পরিস্থিতি সম্বন্ধে সাংবাদিকদের যে তথ্য প্রদান করা করা হয় তার মাধ্যমে। কোন এক উন্নয়ন সংস্থার এক ব্যক্তি যিনি এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকেন, তিনি জানিয়েছেন সেই সংবাদ সম্মেলনে তিনি হাইতির কোন সাংবাদিককে উপস্থিত থাকতে দেখেননি।

ভবন নির্মাণের আদর্শ এই ক্ষেত্রে কি ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। মনে করা হচ্ছে নির্মাণের আদর্শ না মানা এই বিপর্যয়কে আরো ধ্বংসাত্মক করেছে। মার্ক হারম্যান কয়েকদিন আগে এক লেখার মাধ্যমে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন ‘সংস্কৃতির আচরণ অনুশীলন’ এই মিশ্র কাজের এক অংশ। “তবে এ্যাডলফ সেন্ট-লূইস ভিন্ন এক কথা বলেছেন”। ভদ্রমহিলার বয়স ৪৯ বছর। তিনি পোর্ট অ প্রিন্সের একজন বাসিন্দা। তিনি এই ভূমিকম্পের হাত থেকে বেঁচে যান। পোর্ট অ প্রিন্সে নিউ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ভিন্ন কিছু বিষয় উপস্থাপন করেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে যে প্রশ্নবোধক কনক্রিটের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ বিষয়টিকে আরো জটিল করে তোলে। মার্ক লিখেছে:

তার বাড়ি বেশ কিছু বিভিন্ন বাড়তি জিনিস দিয়ে ধারাবাহিক ভাবে তৈরি করা হয়েছে- এর মধ্যে স্টিলের পাত বা রিবার যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন সদস্যসহ পুরো পরিবারকে এক ছাদের নিচে আনার জন্য এবং ঘর তৈরির খরচ পরিবারের সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নেবার জন্য এই কাজটি করা হয়। বাড়ি তৈরির সময় বাড়তি সংযোজন কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এই বিষয়টি বিপজ্জনক বলে প্রমাণিত হয়েছে, বিশেষ করে যখন এর কাঠামো ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ে।

কিন্তু এমনকি যে সমস্ত বাড়ি দেখে মনে হয়নি যে তাতে বাড়িত কোন অংশ সংযোজিত করা হয়েছে, যা দেখে মনে হয়েছে সে সমস্ত বাড়ির ছাদ শক্ত কংক্রিট বা জমাট সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পোর্ট-অ-প্রিন্সের চারপাশে ভ্রমণ করার সময় দেখেছি চাঁদওয়ারি বা বাড়ির সামনের ঢালু অংশ এবং ছাদের বিভিন্ন সংযোগ অংশ কংক্রিট দিয়ে বানানো হয়েছে।

এই ভূমিকম্পে যারা তাদের বাড়ি হারিয়েছে, তাদের আশ্রয়ের পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তারা ইতোমধ্যে বাড়ি মেরামত করা শুরু করেছে বা নতুন করে বাড়ি তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে। যাদের বাড়ি ঠিক করার সামর্থ্য নেই, তারা গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অথবা বিশেষ তাবু দ্বারা তৈরি বিশেষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এগুলোর নাম টেন্ট সিটিজ যাকে ব্যঙ্গ করে আবর্জনা কেন্দ্র বলে অভিহিত করা হয়। আমি একজনকে বলতে শুনেছি আসল তাবুর পরিমাণ খুবই অল্প এবং তা পাওয়া নাগালের বাইরে।

উপযুক্ত সুবিধাসহ আনুষ্ঠানিক ভাবে বসতি স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে পুরোনো ভুলগুলো আর হবে না। ইতোমধ্যে পেঁতিওভিয়ের সেন্ট পিয়ের এলাকায় লোকজন এক শিবির তৈরি করেছে-যা অনেক ভালো সুবিধা সহ এক আশ্রয়কেন্দ্র- এখানে বহনযোগ্য কিছু পায়খানা রয়েছে এবং প্রতিদিন সেখানে যে তথ্যমূলক সংবাদ প্রকাশ করা হয় তাতে লোকজনকে নষ্ট হয়ে যাওয়া রাস্তায় চলাচল করতে বিরত থাকতে বলা হয়। আপনি আপনার আঙুল নাড়াচাড়া করতে পারেন কারণ বর্ষার সময় এগুলো নির্ধারণ করে ফেলা হবে। এখন থেকে তিন মাস পরে বর্ষা শুরু হবে।

পোর্ট-অ-প্রিন্সের ১৯ শতকের নান্দনিক কিছু পুরোনো বাসা। এইসব বাসার কয়েকটি ১২ জানুয়ারির ভূমিকম্পের হাত থেকে নিজেদের খানিকটা রক্ষা করতে সক্ষম হয়। ছবি জর্জিয়া পপলওয়েলের তোলা। এটি ফ্লিকারে পোস্ট করা হয়েছে এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের মাধ্যমে তা ব্যবহার করা হয়েছে।

পোর্ট-অ-প্রিন্সের ১৯ শতকের নান্দনিক কিছু পুরোনো বাসা। এইসব বাসার কয়েকটি ১২ জানুয়ারির ভূমিকম্পের হাত থেকে নিজেদের খানিকটা রক্ষা করতে সক্ষম হয়। ছবি জর্জিয়া পপলওয়েলের তোলা। এটি ফ্লিকারে পোস্ট করা হয়েছে এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের মাধ্যমে তা ব্যবহার করা হয়েছে।

করবেট হাইতি মেইলিং লিস্ট-এ আনে-ক্রিশ্চিয়ান ডি’এডেস্কি অন্য এক বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি জানান, যা পুনর্নির্মাণের বিষয়টিকে জটিল করেছে তা হল এখানকার পুরোনো ঐতিহ্যগত সব স্থাপত্যগুলোকে নতুন করে নির্মাণ করা।

ইঁট, আর ধ্বসে পড়া বিভিন্ন স্তূপ সরানোর জন্য বুলডোজার ব্যবহার করা হচ্ছে। যে সমস্ত হাইতিবাসী হাইতির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি সংরক্ষণের কাজে নিবেদিত, তারা শঙ্কিত এবং তারা জ্যাকমেল-এর ভিন্ন স্থাপত্য সংরক্ষণ এবং তা পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কথা বলছেন-এর মধ্য রয়েছে ১০০ বছর পুরোনো এক ভবন। ভাগ্যের পরিহাসক্রমে পোর্ট অ প্রিন্সে এই সমস্ত পুরোনো বিখ্যাত নান্দনিক বা সুন্দর করে বানানো ভবনের মধ্যে একটি টিকে আছে (যেমন আমার মৃত দাদির বায়োস ভেরনার বাসাটি টিকে আছে, এবং অন্যথায় তা কঠিন এক কর্ম হবে, সাকরে কোয়ের চার্চের ধ্বংস হবার মত ঘটনার মত এক ঘটনা হবে। উত্তম ভাবে নির্মিত এই সমস্ত কাঠের ভবনের টিকে যাবার মত ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নেবার প্রয়োজন রয়েছে…..

মূল লেখাটি পোস্ট করা হয়েছিল ক্যারিবিয়ান ফ্রি রেডিওতে

গ্লোবাল ভয়েসেস হাইতিতে যে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে তা আমাদের সাধারণ সমর্থকদের দান ও ইন্টারনিউজের মানবিক তথ্য মঞ্জুরী হিসেব প্রাপ্ত অর্থের মাধ্যমে করা হচ্ছে। দয়া করে হাইতির ভূমিকম্পের ব্যাপারে আরো সংবাদ জানার জন্য গ্লোবাল ভয়েসেসের হাইতির ভূমিকম্প কাভারেজ পাতায় প্রবেশ করুন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .