মালাউই: ব্লগাররা ৩ সপ্তাহে ৩০ বার সংঘটিত হওয়া ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনা করছে

মালাউইর উত্তরের জেলা কারোঙ্গায় গত তিন সপ্তাহে মোট ৩০ বার ভূমিকম্প সংঘটিত হয় যাকে অনেক ভূতাত্ত্বিক বিরল বলে অভিহিত করেছেন। এর ফলে ৫ জনের মৃত্যু ঘটেছে, ২০০ জন আহত হয়েছে এবং ৩০০০ জন মানুষ গৃহহীন হয়েছে। সর্বশেষ সংবাদ জানা যায়, ২৭ ডিসেম্বর রোববারে, কারোঙ্গায় আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে এবং ধারণা করা হচ্ছে, এ ধরনের ভূমিকম্প আবার আঘাত হানতে পারে।

মালাউইর রাষ্ট্রপতি বিঙ্গু ওয়া মুথারিকা কারোঙ্গা জেলাকে জাতীয় বিপর্যয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি দুর্গত এলাকার লোকজনকে সাহায্য করার জন্য অনুরোধ জানান, কিন্তু ইউরেনিয়াম খনি সমৃদ্ধ এই জেলার লোকজনকে সাহায্য করতে সবার কেমন যেন নিরুৎসাহিত ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ব্লগাররা এই ঘটনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। অনেক মালউই নাগরিকের মনে লম্বা সময় ধরে এই প্রশ্ন রয়ে গেছে, কেন বার বার এ ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছে। ‘কারোঙ্গা এলাকায় সংঘটিত ভূমিকম্প বিষয়ক ধাঁধার হারানো রহস্য’ নামক শিরোনামে এক পোস্টে বিস্তারিত ভাবে মুজা গন্ডোওয়ে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন এবং তিনি এর উত্তর খুঁজেছেন:

৬ ডিসেম্বর রোববার সকালে, প্রথমবার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। সরকার এবং রেডক্রস ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মানুষগুলোকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। তবে তারপরেও সরকারকে এর জবাব দিতে হবে, সেখানে কি ঘটেছিল? লোকজন কি জানে, কি কারণে সেখানে ভূমিকম্প সংঘটিত হচ্ছে: তারা কি মনে করে যে, এটা ঈশ্বরের কাজ, তাদের রাগান্বিত পূর্বপুরুষদের প্রদান করা শাস্তি, অথবা পৃথিবীর ধ্বংস যে ঘনিয়ে আসছে এটি তার আলামত?

ডিসেম্বর মাসে, প্রথম ভূমিকম্পের পরের দিন সকালে ভূমিকম্পে সৃষ্টি এক বিশাল কম্পনের ঘটনা ঘটে। উত্তর মালাউইতে অবস্থিত কারাঙ্গা জেলার মাটি ঠিক এর পরই পরপর বেশ কয়েক বার কেঁপে ওঠে। সবচেয়ে বড় ভূকম্প যেখানে ঘটেছিল সেখান থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত মজুজু জেলায়ও এর কম্পন টের পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় ভূকম্পন ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৯ মাত্রার। আমার পিতামাতা মুজুজু ও কারোঙ্গা ঠিক মাঝখানের এক এলাকা রুমফিতে বাস করেন। তারা প্রতিবার ভূকম্পনের সময় দৌড়ে ঘরের বাইরে চলে আসেন এবং ভাবতে থাকেন যে পৃথিবীর ধ্বংস আসন্ন। এখানে তিনদিনে ১২টি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন বাড়ি ও ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একটি ঘটনায় দেওয়াল চাপা পড়ে এক শিশু মারা গেছে।

এখন মুজা এই সব কম্পনের ভূতাত্ত্বিক কারণগুলো সরবরাহ করার চেষ্টা করেছে। মালাউইর রাজনৈতিক দলগুলো এই ঘটনায় সাড়া প্রদান না করায় নাদাঘা তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি দাবি করেন, যদি এখন সেখানে নির্বাচনী প্রচারণার সময় হত, তা হলে রাজনৈতিক দলগুলো সেখানে ত্রাণের বন্যা বইয়ে দিত।

তারা কি সেই সব রাজনৈতিক দল নয়, যাদের কাছে ভূমিকম্পের শিকার মানুষদের দেবার মত যথেষ্ট টাকা নেই, অথবা এই এলাকা প্রচারণা চালানোর উপযোগী নয়? ২০০৯ সালের শুরুর নির্বাচনী প্রচারণার সময়ের কথা আমি স্মরণ করতে পারি। সে সময় এনডিরানডে বাজারে ঘটা অগ্নিকাণ্ডের “শিকার” ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেবার জন্য রাজনীতিবিদরা একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।

আপনাদের এটা জানা প্রয়োজন যে, সেই ঘটনায় কেউ মারা যায় নি বা আহত হয় নি। তারপরেও ক্ষতিগ্রস্তরা মোট ৫০ লক্ষ কাওয়াচে (মালাউই মুদ্রা) পেয়েছিল। সেই হিসেবে কারোঙ্গার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ড: বিঙ্গু ওয়া মুথারিকা মাত্র ২৫ লক্ষ কাওয়াচে প্রদান করেছেন!

হে রাজনৈতিক দল সমূহ, আপনারা দায়িত্বশীল হন এবং নিজেদের সম্বন্ধে যা দাবি করেন, তা প্রদর্শন করুন। যারা আপনাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে, তাদের এখন সত্যিকার অর্থে আপনাদের প্রয়োজন।

ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদ, জ্বালানী ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এই গুজব বাতিল করে যে কারোঙ্গার ভূমিকম্পের কারণ কেইরেকেরা এলাকায় খনি নির্মাণ। এটি জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। মন্ত্রণালয় বলছে, এখানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি থেকে ইউরেনিয়াম তোলা হয় এবং এই খনিতে মাটির নিচে কোন কাজ হয় না। এ কারণে এসব ভূমিকম্পের সাথে এই খনির কোন সম্পর্ক নেই।

এসব ভূমিকম্পের ঠিক আগে মালাউই চারটি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়। এগুলো হল, জ্বালানী তেল, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়, শক্তি বা বিদ্যুৎ এবং পানি সংকট। এর ফলে, ব্লগার অস্টিন মাডিঙ্গা বিস্মিত যে মালাউইর নেতারা এসব ঘটনা থেকে কোন শিক্ষালাভ করছে কি না:

ব্লনটাইরে এলাকায় পানির সংকট রয়েছে, সারা দেশ জুড়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সংকট দেখা দিয়েছে, এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে এক সাধারণ সংকট রয়েছে। এগুলো সমাধান না করা মানেই দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেষ্টাকে দুর্বল করে দেওয়া। দেশটিকে বর্তমান চাপ থেকে মুক্ত করার জন্য বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন রকমের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে, কিন্তু কখন তারা এইসব প্রতিশ্রুতি পালন করবে? আমি নিজেকে এই প্রশ্ন করি, মালাউইর নাগরিকরা কি এই সকল সংকট থেকে বুদ্ধিমত্তার সাথে বের হয়ে আসতে পারবে?

জ্বালানী সংকটের ক্ষেত্রে সাংবাদিক রিচার্ড চিরোম্বো এক ঐতিহাসিক দিক থেকে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করার চেষ্টা করছে। তিনি দেখাচ্ছেন যে, মালাউইর পণ্য মোজাম্বিকে দিয়ে আসার পরিমাণ কমে আসছে।

মালাউই বিগত দশ বছরে ধাপে ধাপে মোজাম্বিকের বেইরা বন্দরের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের পণ্য পরিবহন তথ্য মোতাবেক এই ঘটনা ঘটেছে।

কোরনেলডার ডে মোজাম্বিক নামক প্রতিষ্ঠানটি মোজাম্বিক সরকারের কাছ থেকে ২৫ বছরের চুক্তিতে বন্দরের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব লাভ করে। ১৯৯৮ সালে তারা তাদের কাজ শুরু করে। তাদের সূত্রমতে মালাউইর রপ্তানী ও আমদানিকারকরা এই বন্দর ব্যবহার করা একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে।

তারা বলছে ১৯৯৮ সালে এই বন্দর দিয়ে মালাউইর আমদানি ও রপ্তানীর পরিমাণ ছিল ৫৭০ মিলিয়ান মেট্রিক টন- এবং ২০০২ সালের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে তার পরিমাণ ছিল ১.৩ মিলিয়ান মেট্রিক টন। ২০০৬ সালের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়ে মালউয়ি তার পূর্বের নিজস্ব রেকর্ড ভাঙ্গতে ব্যর্থ হয়।

জ্বালানী তেল আমদানিকারক এবং মালাউই ও মোজাম্বিকের সরকার জ্বালানী সংকটের জন্য পরস্পরকে অভিযুক্ত করছে। এটি পরপর চার সপ্তাহ এবং নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে মালাউইকে সংকটে ফেলে দেয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .