নেপালের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দুর্নীতি

নেপালে দুর্নীতি যে বড় একটা সমস্যা সেটা গোপন কিছু না। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টি আই) অনুসারে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে দুর্নীতির মাপকাঠিতে এ বছর দেশটির অবস্থান ১৪৩ (১২১ থেকে নেমে)। নিউজিল্যান্ড বিশ্বের সব থেকে কম দুর্নীতিগ্রস্ত আর সোমালিয়া সব থেকে বেশী।

টি আই বলছে যে দেশটির নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতির দৃশ্যমান বিপদের মূল কারণ হচ্ছে:

“নেপালের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আর বাড়ন্ত দুর্নীতিকে মোকাবেলা করতে অক্ষম দুর্বল প্রশাসন। যদিও এই বছর নেপালে কম বেশী শান্তিপূর্ণ ছিল, দুর্নীতি বেড়ে গেছে যখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে ক্ষমতা হস্তান্তর সহ বিভিন্ন কারনে।”

গ্রাউন্ডরিপোর্টে মোহন নেপালি বলেছেন:

সব দিক থেকে ঘিরে থাকা দুর্নীতি, দুর্বল রাষ্ট্র শাসন আর রাষ্ট্র যন্ত্রের অক্ষমতার বিরুদ্ধে লড়াই এ নেপাল অনেক পিছনে।

বর্তমানে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধিকে মনে করা হয় কালো বাজারের প্রভাবের একটি ফলাফল হিসেবে। এই খেলা রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা খেলছে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চালকদের সাথে।

জনপ্রিয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার ড: হারি বানশা দুলাল মনে করিয়ে দিয়েছেন যে দুর্নীতির সংস্কৃতির বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের প্রবর্তক আছেন

দেশকে লুট করার প্রতিযোগীতায় কেবলমাত্র স্থানীয় রাজনীতিবিদরা নেই যারা রাজনীতিতে দাঁড়াবার জায়গা খুঁজছেন। অধিকার বলে রাষ্ট্রকে লুট করা কাজে নিয়োজিত আছেন বড় রাজনৈতিক দলের তথাকথিত উচ্চ পর্যায়ের নেতারা। মাধব কুমার নেপালের সরকার পরিকল্পনা করছেন গত দুই দশক ধরে ভূতপূর্ব প্রধান মন্ত্রী আর মন্ত্রীদের প্রদেয় ১ কোটি রুপিয়া বকেয়া মওকুফ করে দেয়ার। কৃষ্ণ প্রসাদ ভাট্টারায় ছাড়া, গত দুই দশকের সব প্রধান মন্ত্রী ওই তালিকায় আছেন। সময় এর থেকে ভালো হতে পারে না কারণ এখনকার প্রধান মন্ত্রীর নাম ওই তালিকায় আছে কয়েক বছর আগে দেশের ডেপুটি প্রধান মন্ত্রী থাকাকালীন তার দেখানো ঔদার্যের জন্য।

রাষ্ট্রকে লুটের ব্যাপারে, নেপালী রাজনীতিবিদদের একমত হওয়া থেকে বিরত রাখা যায় না। আর তারা আসলেই এই ব্যাপারে পরিশীলিত হচ্ছেন। রাষ্ট্রের ভান্ডারকে খালি করার ব্যাপারে সব দলের মতৈক্য থাকে এবং এটি আজকাল দেশের প্রত্যেক কোণে ঘটছে।

নেপালের দুর্নীতির সংস্কৃতি সরকার আর রাজনীতিবিদদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। দু:খজনকভাবে, সামাজিক জীবনও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষ্ণ ভুশাল তার ব্লগে লিখেছেন কিভাবে বিয়েতে বরের পরিবারের তরফ থেকে অনেক যৌতুক চাওয়া হয় আর কনের বাড়ী ছেলের চরিত্রের ত্রুটিকে দেখে না যদি ছেলে সরকারে ভালো পর্যায়ে থাকে (যেখান থেকে সে অযথা রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক সুবিধা পেতে পারবে)। এই প্রবণতা সামাজিক সম্পর্কের উপরে অবশ্যই প্রভাব রাখছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাজের খোঁজে অনেক নেপালী শ্রমিক বিদেশে যাওয়ার কারনে ইমিগ্রেশন আর সীমান্ত নিরাপত্তাও সোনার খনিতে পরিণত হয়েছে সেই সব অফিসারের জন্য যারা অযাচিত সুবিধা চান। নেপালী কর্মকর্তা বি. বাসনেতের ব্লগে (যাকে সম্প্রতি অন্য একটা ডিপার্টমেন্টে বদলি করা হয়েছে) আলোচনা করেছেন কেন ইমিগ্রেশনের কর্মীরা দুর্নীতিকে এত লোভনীয় মনে করেন।

ইমিগ্রেশনে, বেআইনী ভ্রমণকারীরা বেআইনী আয়ের সব থেকে বড় সূত্র। সাধারণত: আইনসঙ্গত কাগজ আছে এমন যাত্রীরা তাদের নির্দিষ্ট করা আয়ের তালিকায় থাকেন না। দেশটিতে কাগজ পত্র জাল করা আর অন্যান্য বেআইনি ভ্রমণকারীর ধরন আর সংখ্যা বিস্ময়কর। বেশীরভাগ বেআইনী কাজ করা হয় মন্ত্রণালয় আর ডিপার্টমেন্টের উচ্চ পদের কমর্কতাদের মত আর সমন্বয়ের মাধ্যমে। এই ধরনের আয়ের ভাগ সাথে সাথে এজেন্টের মাধ্যমে ভাগ হয়ে যায়। তাই দুর্নীতি নিয়ে নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কেবলমাত্র দোষ দেয়া বোকামি।

বাসনেত বলেন যে ইমিগ্রেশন বিভাগের সংশোধন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে শুরু হওয়া দরকার।

নেপালের দুর্নীতির মাত্রা বুঝতে গেলে, এই ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন যা কাঠমান্ডুর এভিনিউ টিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। আপনারা দেখতে পাবেন সালিয়ান জেলায় পাড়ার পানি বিতরণ প্রকল্পে সরঞ্জাম ক্রয়ের ব্যবস্থায় কিভাবে প্রতারণা করা হচ্ছে।

“দুর্নীতি আমাদের সবার উপরে প্রভাব রাখে,” বলেছেন জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল বান কি মুন আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে তার বাণীতে।

নেপালে দুর্নীতি ওতপ্রোতভাবে গ্রথিত। সংস্কৃতি, সামাজিক সম্পর্ক, বাণিজ্য আর সরকার সব এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত। যতক্ষণ না মানুষ আর সরকার একসাথে কাজ করে এই ব্যবস্থার সামাজিক স্বীকৃতি মুছে দেয়, নেপালে সততা ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .