ভিডিও: যৌন কর্মীদের উপর নির্যাতন নির্মূল করার জন্য এক আন্তর্জাতিক দিবস

লাল ছাতা প্রতীক (লোগো)

লাল ছাতা প্রতীক (লোগো)

১৭ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক যৌন কর্মী নিপীড়ন নির্মূল দিবস। ২০০৩ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের সিয়াটেলে নিহত এক যৌন কর্মীর স্মরণে ও তার জন্য আয়োজন করা প্রার্থনা সভা থেকে এই দিবসটি পালনের শুরু এবং পরবর্তীতে সারা বিশ্বের যৌন কর্মীদের উপর সংঘটিত অপরাধের দিকে মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এই দিবসটি পালন করা শুরু হয়।

এই ধরনের কিছু অত্যাচার তাদের কলঙ্কিত করার সাথে সম্পৃক্ত এবং অনেকেই যৌন কর্মীদের সাথে এইডসের এক সংশ্লিষ্টতা তৈরি করে। উইমেন ইন সংগ্রাম (লড়াইরত মেয়েরা) ভারতের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। তারা সেখানে সেই সংঘের সাথে কাজ করছে যারা এ ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টি রাখে। এখানকার যৌন কর্মীরা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধ ও এই বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য পরিচিত।

আন্তর্জাতিক নারী স্বাস্থ্য জোট সম্প্রতি সংগ্রাম নামক প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে। তারা সেখানে প্রচার মাধ্যম ও তথ্য সংরক্ষণের উপর এক প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। এই সংক্ষিপ্ত তথ্যচিত্রটি তারা তৈরি করেছে। এই তথ্যসংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সময় তারা যে সমস্ত ছবি তুলেছে আপনি সেগুলো থেকে কিছু ছবি দেখতে পাবেন। যেমনটা প্রোডিউসার@অউডাসিয়ার টুইটারে উল্লেখ করেছেন:

যুক্তরাষ্ট্রের যৌন কর্মীরা ভারতীয় কর্মী বা অ্যাক্টিভিস্টদের কাছ থেকে প্রচুর শিখতে পারে। আমার ভিডিওতে লক্ষ্য করুন কি ভাবে তারা একত্রে সংগঠিত হচ্ছে…

এই ভিডিওতে সংগ্রামের নারীরা ব্যাখ্যা করছে কি ভাবে মানবাধিকার বিষয়ক শিক্ষা থেকে তারা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে যে, তারা যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সমান ব্যবহার পাবে। এর মাধ্যমে তারা যৌন পরিবাহী রোগ ও অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক বিষয়ে অন্যদের শিক্ষা প্রদান করতে পারে।

ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের এক গ্রামীণ সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে সংগ্রাম কাজ করে, তাদের কাজ এইচআইভি/এইডস রোগের ক্ষেত্রে সমান প্রতিরোধ, চিকিৎসা, সুযোগ এবং সমর্থন নিশ্চিত করা: এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ভারতের গ্রামীণ এলাকার প্রায় ৬,০০০-এর মত মহিলা এইচআইভি পরীক্ষা করিয়েছে। গত ১৫ বছরের কাজের চিত্র অঙ্কন করার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রান্তিক অবস্থানে থাকা সম্প্রদায়ের এক ক্ষমতায়নের সৃষ্টি হয়েছে, যার মাধ্যমে তারা তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে, সংগ্রাম এই ক্ষেত্রে ক্রমাগতভাবে জাতীয় পর্যায়ের এক কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়েছে এবং তারা বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য নীতি ও কর্ম সূচি প্রণয়নে সচেষ্ট, যা বাস্তব জীবনে স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তার শক্তিশালী এক স্বরে পরিণত হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার জুইসি জেসি আব্রাহাম দেশটির নর্দান টেরিটরিজ নামক এলাকার “নৈতিক অবস্থান” তৈরির ক্ষেত্রে কাজ করেন। তিনি এক ভ্লগ (ভিডিও ব্লগিং) তৈরি করেছেন, সেখানে তিনি যৌন কর্মীদের নিবন্ধন বিলুপ্তিকরণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এই আশা পোষণ করেন যৌন কর্মীদের বিরুদ্ধে নিন্দা করা বন্ধ হবে এবং বিশ্বাস করেন যে,এই নিবন্ধন আসলে যৌন কর্মীদের চিহ্নিত করণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এর সম্ভাব্য উদ্দেশ্য অন্য যে কোন বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য তৈরি করা।

গ্রিট টিভির একটি ছো্ট্ট ভিডিও যৌন কর্মীদের উপর নিপীড়ন বন্ধ দিবস কি এবং তার ইতিহাস জানাচ্ছে, একই সাথে তা ব্যাখ্যা করছে এর বিশেষ চিহ্ন লাল ছাতা সম্বন্ধে। যৌন কর্মীদের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়, এটি তার প্রতিরোধের প্রতীক:

তবে এমন অনেক অন্য সংগঠন রয়েছে যেখানে যৌন কর্মীদের উৎপাত বলে বিবেচনা করা হয়। তারা চায় আইনগতভাবে যৌন কর্মকে অবৈধ ও অপরাধী ঘোষণা করতে, যাতে যৌন সেবা গ্রহণ করা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন কানাডার অনার কন্সালটিং নামক প্রতিষ্ঠান এই অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রাক্তন যৌন কর্মী ত্রিশা বাপটি একই সাথে ইভ নামক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই প্রতিষ্ঠান এক সময় এক্সপ্লয়েটস ভয়েস হিসেবে পরিচিত ছিল এখন তা এক্সপ্লয়েট এডুকেটিং নামে পরিচিত। তারা একটি গান প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম ‘তুমি কি অপেক্ষা করবে, যেখানে তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছে'। জনাবা বাপটির ভাষায়:

আমরা পতিতাদের সে ভাবে ডাকব, যে ভাবে তাদের ডাকা উচিত, যা নারীত্বের বিরুদ্ধে এক নিপীড়ন।

নারীর বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও আক্রমণ একই বিষয়, যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি আমাদের তার একটা নাম দিতে দেওয়া হোক।

পতিতাবৃত্তির দাবি আসলে অপরাধকে সমর্থন করা, যা সুইডেনের আইনের আদর্শে তৈরি করা এক বিষয় অথবা পরবর্তীতে নরডিক (নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, আইসল্যান্ড মিলে ইউরোপের যে অংশ) আইনের মত সূত্রকে উল্লেখ করে, যা নারীর দেহকে পণ্য হিসেবে বিবেচিত না করার আহ্বান জানায়, যা প্রাক নারীবাদী ভাবনা ও প্রাক সাম্যতার ভাবনাকে ধারণ করে।

ম্যাসিডোনিয়ায় ঠিক এর এক বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এদের নাম উইটনেস.অর্গ এবং স্কোপজার হোপ অর্গানাইজেশন। তারা যৌন কর্মীদের নিয়ে নিচের ১৮ মিনিটের এক তথ্যচিত্র বানিয়েছে। এই ভিডিওর শিরোনাম, তুমি অবশ্যই আমার সম্বন্ধে জানবে: ম্যাসেডোনিয়ায় যৌন কর্মীদের উপর ঘটা নিপীড়ন প্রতিহত করার অধিকার নেই। এই ভিডিওতে যৌন কর্মীরা নিজের মুখে বলছে, এমন এক পরিবেশে তারা বাস করে যেখানে তারা সব সময় অত্যাচারের শিকার, তাদের মানবাধিকার উপেক্ষা করা হয় এবং যে কর্তৃপক্ষের তাদের নিরাপত্তা প্রদান করার কথা তারাই যৌন কর্মীদের নির্যাতন করে। তারা চায় তাদেরও কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করা হোক। অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক কর্মচারীরা যে সমস্ত অধিকার পায় তারা সেই সব অধিকার চায়। যৌন কর্মীদের সমস্যা তাদের কাজ নিয়ে নয়, তাদের বিরুদ্ধে যে নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়, তাদের নিরাপত্তার অভাব এবং তারা যে নিপীড়নের মুখোমুখি হয় তার কারণে তারা এই অধিকার চায়। এক ধরনের সামাজিক যন্ত্রণা ও বৈষম্যে থেকে তারা এই সকল বিষয়ের মুখোমুখি হয়।

ভিডিও থেকে বর্ণনা:

একজন যৌন কর্মী এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পতিতা হিসেবে আমার যে অভিজ্ঞতা তার মাধ্যমে তোমার আমার সম্বন্ধে জানা উচিত। খদ্দের, উঁকি-ঝঁকি মারা ব্যক্তি এবং পুলিশের হাতে নির্যাতিত এবং নিপীড়িত হওয়া যৌন কর্মী জনতার আক্রমণাত্মক মনোভাবের জবাব দিতে চায়, নিজেদের বক্তব্য প্রকাশ করে এবং তাদের অধিকার আদায় করে। এই ভিডিওতে আহ্বান জানানো হয়েছে যৌন কর্মীদের উপর নিপীড়ন একেবারে সহ্য না করতে এবং এর তত্বাবধায়ক এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যে যৌন কর্মীদের প্রকৃতপক্ষে যা প্রয়োজন তা প্রতিষ্ঠানিকভাবে স্থাপন করা দরকার।

নারীর প্রতি নিপীড়ন বন্ধে সচেষ্ট এমন কারো কর্মকাণ্ড বা উদ্যোগের কথা কি আপনি জানেন? তা হলে আমাদের জানান!

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .