যুক্তরাষ্ট্র: ফোর্ট হুডে গণহত্যা সেদেশের সামরিক বাহিনীতে মুসলমানদের উপস্থিতির উপর মনোযোগ প্রদান করেছে

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ফোর্ট হুডে দেশটির সামরিক বাহিনীর মেজর নিদাল মালিক হাসানের উন্মত্তের মত গুলিবর্ষণের ঘটনায় ১৩ জন মারা যায় এবং ৩১ জন আহত হয়। এই ঘটনাটি আমেরিকার মুসলমানদের আরো একবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে- বিশেষ করে যে সমস্ত মুসলমান সামরিক বাহিনীতে কাজ করে।

সন্দেহজনক ঘাতক হিসেবে মেজর হাসানকে চিহ্নিত করার মুহূর্ত থেকেই সংবাদকর্মী ও মন্তব্যকারীদের হাসানের ধর্ম ও জাতিগত পরিচয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে পরিষ্কার এক অস্বস্তি দেখা যায়। এই ঘটনার পর সারা দেশ থেকে খবর আসছে যে সামরিক বাহিনীর মুসলমান কর্মীরা অনেক সময় তাদের সহকর্মীদের আক্রমণের শিকার হয়েছে।

টলেডো বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত আইনের অধ্যাপক হাওয়ার্ড এম. ফ্রিডম্যান তার ব্লগ রিলিজিয়াসক্লজে বলেন:

সরকার এখন সক্রিয় ভাবে সামরিক বাহিনীতে কিছু মুসলমানদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে। কারণ এই সমস্ত মুসলমানরা ভাষাগত ভাবে দক্ষ ও তারা নিজ সংস্কৃতিকে উপলব্ধি করে। বিষয়টি ইরাক ও আফঘানিস্তানের যুদ্ধের জন্য খুবই প্রয়োজন। তবে মুসলমানরা কর্মস্থলে অনেক সহকর্মীদের সন্দেহের শিকার হয়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে সন্দেহজনক এই মুসলমান কর্মী কি গুলি করার আগে উত্তেজিত ছিল, কেউ হয়ত শঙ্কিত বোধ করতে পারে যে ফোর্ট হুড এর গণহত্যায় তারাও মারা যেতে পারত। প্রশ্ন তোলা যেতে পারে মেজর হাসান কি একজন সন্ত্রাসী, যে তার ধর্মীয় আদর্শের কারণে এই কাণ্ডটি করেছে নাকি সে কেবল মানসিকভাবে এক অসুস্থ ব্যক্তি।

ভ্যাঙ্কুভারের বিনামূল্যে বিতরণকৃত সাপ্তাহিক পত্রিকা স্ট্রেইট.কমে কানাডার এক লেখক গুয়ান্নে ডায়ার যুক্তি প্রদান করেছেন যে, খুনী ব্যক্তিটির ধর্ম পরিচয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে:

“ঘটনার কয়েকদিন পর পর্যন্ত এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে প্রচার মাধ্যম দ্বিধান্বিত ছিল যে জাতিগত/বর্ণগত/ ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে সে নানা ধরনের গালাগালির শিকার হয়েছে। এই সব বিষয় নিদালকে উন্মাদ করে তোলে। এগুলো কিছু খারাপ লোকের এমন কিছু কাজ, যা সাধারণ আমেরিকানদের চরিত্রের সাথে খাপ খায় না-সেসব কাজ এই বেদনাদায়ক ঘটনার জন্য দায়ী, এবং এভাবে এর শেষ হল।

এর একটি ব্যাখ্যা হল যে মুসলমান দেশগুলোর বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ ঘোষণা স্বদেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) মুসলমানদের আরো বেশি ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন করে তোলে। কিছু মনে করার নেই, যখন স্বদেশী (ইংল্যান্ডে বেড়ে ওঠা) মুসলিম সন্ত্রাসীরা ২০০৫ সালে লন্ডনের পরিবহন ব্যবস্থার উপর হামলা চালায়, এবং অন্য সব পশ্চিমা দেশের হামলার পরিকল্পনাকারী মুসলমানরা পরিকল্পনা সফল হবার আগে যখন ধরা পড়ে তাদের প্রায় সকলেই অভিযোগ করে, পশ্চিমা দেশগুলোর মুসলিম দেশে অভিযান চালানোর কারণেই তারা এ রকম গোঁড়া মুসলমানে পরিণত হয়েছে।

অভিবাসন বিষয়ে এবং রাজনীতিতে রক্ষণশীল অবস্থান গ্রহণের জন্য ফক্স নিউজ নামক সংস্থাটির প্রায়শ: সমালোচনা করা হয়। তারা মাঝে মাঝে সামরিক বাহিনী থেকে মুসলমানদের ছেঁকে ফেলার জন্য আহ্বান জানায়। ভেটেরানস টুডে ওয়েবসাইটে যুক্তরাষ্ট্রের একজন অবসরপ্রাপ্ত উপকূল রক্ষা কর্মকর্তা টম বার্নেস বলেন, সংবাদ সংস্থাগুলো একই ধাঁচের সংবাদ সৃষ্টি করে যাচ্ছে, আর সেটা হল “আমরা বনাম তারা” বিষয়ক এক উত্তেজনার সৃষ্টি করা:

“… সংবাদ সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে মোটেও সহযোগীতামূলক আচরণ করছে না, বলা যায় শীঘ্রই ফক্স চ্যানেলের শুরুর এক প্রশ্ন, “তাদের” বিরুদ্ধে আরেকটি ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের রূপ নেবে। বিষয়টি কেবল পরিণত হচ্ছে না, এটা বিপজ্জনক এক বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। এর কাহিনীটি এখানে দেওয়া হল।

যেমনটা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি, এই ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে ঘটছে। ফক্স নিউজের এই কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি যে, আমাদের শত্রু কারা। সকল সময় সেই একই কথা শুনছি। একটানা এইসব কথা শুনে যাচ্ছি। আমার ধারণা ছিল না, দেশের বাইরে অজস্র “তারা” মানে আমাদের শত্রু রয়েছে!

বেশ কিছু সংবাদপত্র এখন দেখছে যে মেজর হাসানের কাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত মুসলমানদের উপর কি ধরনের প্রভাব তৈরি করে এবং একই বিষয়টি ফোর্ট হুডের আশেপাশের বাসিন্দাদের উপর কি রকম প্রভাব ফেলে।

ফোর্ট হুডের মুসলিমরা এই ঘটনাটিকে কি ভাবে দেখে তার উপর ইউরোআমেরিকাননিউজের করা এক ভিডিও সংবাদ ইউটিউবে রাখা হয়েছে।

এই গণহত্যার তদন্ত যতদিন চালু থাকবে, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত মুসলমানদের উপর মনোযোগ বজায় রাখাও ততদিন চলতে থাকবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .