মিশর: এক পুরুষ ব্লগার নকল সতীচ্ছদ কিনেছেন

রেডিও নেদারল্যান্ডস যখন নকল সতীচ্ছদ কীটের উপর একটি রিপোর্টের আরবী ভাষান্তর প্রচার করেছিল, যখন ইউম৭ সংবাদপত্র ঘোষণা করেছিল যে এই পণ্য মিশরের বাজারে এলে ৮৩ মিশরীয় পাউন্ড মূল্যে পাওয়া যাবে, যখন মিশরের রক্ষণশীল সাংসদরা এই পণ্য নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন আর যে কোন রপ্তানীকারককে বের করে দেয়া বা মাথা কেটে ফেলার আদেশ দিতে চেয়েছিলেন, এবং যখন এটি মিশরের ব্লগ জগৎে বিশাল বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল, তখন মোহাম্মাদ আল রাহহালকে এই জিনিষ একটা কিনতেই হল।

তিনি যখন পোস্ট অফিস থেকে তার প্যাকেট তুলতে গেলেন:

বেশ কয়েকজন বিভ্রান্ত কাস্টমস আর ডাক কর্মী এটি খুলেছিলেন, যারা কিছু না বুঝতে পেরে পণ্যটির বিবরণ লিখেছিলেন “অজানা লাল তরল আছে’ – আর আমার বর্ণনার অপেক্ষায় ছিলেন।

তিনি তাদেরকে বলেছিলেন ‘এটা চলচ্চিত্রের অঙ্গ সজ্জা’ আর তারপর এটাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন:

‘সতীচ্ছদ’ টা এমন: একটা ৫ X ৭ সেমি ভাঁজ করা প্লাস্টিক- আসলে এল্বুমিনের, এর সাথে থাকা বর্ণনা আমাকে সাথে সাথে ঠিক করিয়ে দিল- এক দিকে গাঢ় লাল কালি দিয়ে ভর্তি। যৌন সংসর্গের আগে যোনি পথে স্থাপন করলে, প্লাস্টিকটি অল্প শক্ত হয়ে যায়, আর যৌন মিলনের সময় ছিঁড়ে যায়। কয়েক ‘ফোঁটা’ রক্ত চাদরে পড়বে, যার ফলে ওই নারী, তার পরিবার বা সমাজের ‘সম্মান’ রক্ষিত হবে।

এটাতে আসলে কাজ হয় কিনা আমি জানি না। এই পণ্য সম্পর্কে ডাক্তারি মতের অনুপস্থিতি, আর অনলাইনে এমন দোষারোপ যে এর ফলে সংক্রমণ হতে পারে, এমন পরিস্থিতিতে আমি কোন স্বেচ্ছাসেবককে এটা পরীক্ষার জন্য দিতে পারি নি।

মিশরীয়রা এভাবে নকল সতীচ্ছদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেছে এটা মোনা এল তাহাউই পছন্দ করেননি। দেশটি আজকাল যে সব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে- জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া, একজন প্রেসিডেন্ট ২৮ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন যার ছেলে মনে হচ্ছে তার পরে ক্ষমতায় আসবেন, ইত্যাদি- সেসব বাদ দিয়ে কেন সতীচ্ছদ নিয়ে এত কথা, আসল বা নকল?

আপনাদের স্বাগতম ছলনা আর অস্বীকারের সাথে যা এক সাথে ধাক্কা দেয় নারী আর তাদের পবিত্রতা নিয়ে রক্ষণশীল ধর্মীয় চিন্তার কেন্দ্রে। আর মিশরের ক্ষেত্রে, এই রক্ষণশীলতা মুসলিম আর খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রে একই ভাবে প্রযোজ্য।

একজন মুসলমান হিসেবে, আমি জানি কোরান শিক্ষা দেয় পুরুষ আর নারীর পবিত্রতার ব্যাপারে, কিন্তু রক্ষণশীলদের কেবল নারীদের নিয়ে মত্ত থাকার মানে হল কেবলমাত্র বিয়ের আগে যৌন সংসর্গের নিষেধাজ্ঞা মানতে হবে। কুমারীত্ব নিয়ে এই ধরনের অতিরঞ্জন খেলো একটা বিষয় যা মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

মোহাম্মেদ এল রাহহাল ঘোরতর ভাবে এটার নিন্দা জানিয়েছেন:

যে ছলনা আমাদের সমাজের ৫০% মানুষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে বাকি অর্ধেককে মুক্ত ছেড়ে দিয়ে। নারীদের এত দূর পর্যন্ত চাপ প্রয়োগের বিরুদ্ধে আমি, এতে তাদের স্বাস্থ্য বিপদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে নারী পুরুষ সম্পর্ক নিয়ে আমাদের আইনসঙ্গত জাতীয় অধিকার অর্জন বিলম্বিত হবে।

শরীর দ্বারা নৈতিকতাকে ব্যাখ্যা করা সব চেয়ে খারাপ। আর যদি ছোট এক টুকরো প্লাস্টিক দ্বারা নৈতিকতা প্রমাণের অপেক্ষায় আমরা থাকি, তাহলে এরই মধ্যে আমরা হেরে গেছি- আরো ভালো কোন ব্যাখ্যা পাওয়া দরকার আমাদের।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .