সুদানী এক ‘পাপে’ মিশরীয়দের প্রতিক্রিয়া

সুদানে জাতিসংঘের মহিলা কর্মচারী লুবনা হুসেন জেল ও বেত্রাঘাতের মতো শাস্তির হুমকির মোকাবেলা করছেন। তিনি সুদানের রাজধানী খার্তুমে ছেলেদের মতো প্যান্ট পড়ে বের হয়েছিলেন এই তার অপরাধ। তার দু:খজনক কাহিনীর এখনো পরিসমাপ্তি ঘটে নি।

সুদানের ব্লগার ড্রিমা এই ঘটনার উপর মন্তব্য করেছে যে লুবনাকে এখন বেত্রাঘাত করা হবে না, কিন্তু লেখক তার পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেন যে (টেডি বিয়ার সার্কাস বা ভাল্লুক নাচের) কথা। সুদানের এক আদালত লুবনাকে ২০৯ ডলার জরিমানা করেছিল। লুবনা এই জরিমানার টাকা প্রদান করতে অস্বীকার করে। এর ফলে তার এক মাসের কারাদণ্ড হয়। পরে যখন সুদানের সাংবাদিক ইউনিয়ন তার পক্ষ হয়ে এই জরিমানার টাকা প্রদান করে, তখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এখন লুবনার প্রশ্ন: সেই ৭০০ জনের বেশি মহিলার কি হবে, যারা প্যান্ট পড়ার জন্য জরিমানা প্রদান করতে অক্ষম?

মিশরীয় ব্লগার এবং সাংবাদিক মোনা এল তাহাউই বিশ্বাস করেন, ধর্মের নামে কাউকে লাঠি দিয়ে পেটানো মহিলা ও ইসলামের এক পরিষ্কার অপব্যবহার

ওই সমস্ত মহিলাদের মধ্যে দশ জন [যারা প্যান্ট পড়েছিল] শাস্তি হিসেবে জরিমানা এবং বেত্রাঘাত মেনে নিয়েছে, কিন্তু মিজ হুসেন এবং অন্য দুইজন এই অভিযোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে, এখন এই বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতে লড়ছে। সুদান সরকার লুবনার লেবানন ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। লেবাননে এই অভিযোগের উপর লুবনার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকার প্রদান করার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে।

সৌভাগ্যবান শব্দটি ব্যবহার করা অদ্ভুত শোনাবে এ কারণে যে একটি মেয়ে ৪০টি বেত্রাঘাতের সাজা পেয়েছে, কেবল প্যান্ট পরার জন্য, কিন্তু তার অবস্থান ও কাজের ক্ষমতায় এটাই সত্যি, কারণ ঠিক সেখানেই মিজ হুসেন রয়েছেন। এ ছাড়াও তিনি সাহসী এবং নির্ভীক। তিনি জাতিসংঘের প্রেস অফিসার পদ থেকে পদত্যাগ করেন, যে পদ তাকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিতে পারত, এই বিচারে দাঁড়ানো থেকে।

এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি এক মুসলিম মহিলা যিনি জানেন প্যান্ট পরার কারণে বেত্রাঘাত নিছক অন্যায় এবং যা এক অর্থহীন বিষয়; তিনি জানান, তিনি এমনকি ৪০,০০০ বেতের বাড়ি গ্রহণ করতে রাজি, এই আইনটিকে দুর করতে।

অন্য যে সমস্ত হাজার হাজার সুদানী মহিলা- মুসলিম বা অমুসলিম হোক না কেন, তারা এতটা সৌভাগ্যবান নয়, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণ সুদানের সুদানী মহিলারা লাঠি খাওয়ার জন্য সদাই প্রস্তুত থাকে, কারণ সেখানে ইসলামী আইন প্রচলিত রয়েছে এই বিষয়টি প্রমাণের জন্য ক্ষমতা বান শাসকেরা মেয়েদের লাঠি মারার মতো সস্তা কাজটি করে থাকে।

মোনা এইসব তথ্যের উপর মনোযোগ দেন:

বেত্রাঘাত এক নিষ্ঠুর এবং অমানবিক শাস্তি, আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি অনুসারে এই কাজটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যে কোন অত্যাচারের বিরুদ্ধে। বিশ্বের বেশীরভাগ রাষ্ট্র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে আহ্বান জানান:

এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক সংঘে ছড়িয়ে দেওয়া, বিভিন্ন দেশে সেই সমস্ত আন্তর্জাতিক বাধা ঝেড়ে ফেলা, যে বাধা তারা অনুভব করে সংস্কৃতি অথবা ধর্মের নামে।

লুবনার কারণকে সমর্থন করে মিশরীয় সেইয়াসেই মাসরি লিখেছেন:

نعم اسمي لبنى مثلهم مثلكم اختلف عنهم اختلف عنكم في النهاية انا لبنى استقلت وظيفيا لأقاتل و تحديتهم لأناضل حاولوا ترهيبى ازعجتهم ارادوا اخافتى ارهبتهم صمدت صبرت و النهاية التى يعلمونها قد حدثت قلتها لهم مرارا و لم يستغربوا لم يندهشوا حينما همست قائلة انتم جبناء و انا لبنى حسين

হ্যাঁ… আমার নাম লুবনা… তাদের মতো, তোমাদের মতো.. কিন্তু আমি তাদের সাথে নিজেকে আলাদা ভাবি এবং তোমাদের থেকেও…তারপরেও দিনের শেষে আমি লুবনা, যে আমি আমার চাকুরি ছেড়ে দিই তাদের সাথে লড়াই করার জন্য… তাদেরকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য…আমার কারণকে সমর্থন করার জন্য …তারা আমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে… আমি আমার অধিকারের জন্য উঠে দাঁড়াই… তারা আমাকে চুপ করিয়ে দেবার ভয় দেখায়… আমি কথা বলে উঠি… … আমি আমার কাজ করে যাই.. এবং আমি তাদের বলি তোমরা কাপুরুষ কিন্তু আমি লুবনা হুসেন।

লুবনা পরিষ্কার ভাবে বলেছে:

لبنى حسين : الحكومات عليها إدخال الأطفال المدارس والمرضى المستشفيات..و لا علاقة لها بإدخال النساء الجنة.
সরকারকে অবশ্যই মেয়েদের স্কুলে ও রোগীদের হাসপাতালে পাঠানোর সময় আরো সচেতন হতে হবে… তাদের কিছু করার নেই, কাজেই মেয়েদের কোথাও পাঠানোর সময় বেহেশ্তে একটা জায়গা তৈরি করে রাখতে হবে!

মিশরের সেন্টার ফর ওমেন রাইট নিচের বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে:

في تصعيد موجهة ضد حقوق الانسان في السودان ، اعتقلت الشرطة السودانية اليوم 48 ناشط وناشطة حقوقية بينهم 3 ناشطات في حالة حرجة بمستشفي ” حوادث الخرطوم ،اثناء تضامنهم مع الصحفية ومطالبتهم بالغاء المادة رقم 152 من قانون العقوبات السوداني وذلك قبيل بدء المحكمة حيث قامت قوات الشرطة بضرب النشطاء المتضامنين امام المحكمة خلال وقفتهم ضد المادة 152 من قانون العقوبات السوداني ،وقد صدر الحكم ضد الصحفية السودانية لبني أحمد الحسيني بغرامة 500جنية سوادني وفي حالة عدم سدادها تحبس لمده شهروقد شهدت محكمة الخرطوم عقب النطق بالحكم تواجد مكثف من قوات الشرطة السودانية التي قامت بطرد هيئة دفاع الصحفية المكونة من المحامين السودانين والمصريين المتضامنين مع الصحفية
সুদানের পুলিশ বাহিনী মানবাধিকার নীতি লঙ্ঘন করে, যখন তারা ৪৮ জন অ্যাক্টিভিস্টকে গ্রেফতার করে- যাদের মধ্যে হাসপাতালে যাওয়া ৩ জনের অবস্থা খুব জটিল আকার ধারণ করে- সে সময় অ্যাক্টিভিস্টরা লুবনা হুসেনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এবং তারা সুদানী আইনের ১৫২ ধারা বাতিল করার দাবি জানাচ্ছিল। রায় ঘোষণার আগে এই সমস্ত এক্টিভিস্টের উপর পুলিশ চড়াও হয় এবং মিশরীয় ও সুদানী আইনজীবী যারা লুবনার হয়ে আইনি লড়াই করছিল, তাদের আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। আদালতের রায়ে আরো একবার লুবনাকে ৫০০ সুদানী পাউন্ড জরিমানা করা হয় এবং যদি এই জরিমানা সে প্রদান করতে অস্বীকার করে তা হলে একমাসের জেল প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

খাওয়াতের [আরবী ভাষায়] জানাচ্ছেন লুবনা, এই জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকার করে এবং তার এই টাকা প্রদানে নিজের বেকসুর ভাবনা ও তার সমর্থক এবং ইসলামপন্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি জানাচ্ছে এবং মোনা এল তাহাউই লিখেছেন কি ভাবে সুদানীরা তাদের প্যান্টের কারণে ধরা খেয়ে গেছে:

সারা বিশ্ব তাদের দেখছিল, যখন সোমবারে বিচারক এই বেত্রাঘাত শাস্তি বাতিল করে দেয় এবং তাকে ২০০ ডলার জরিমানা প্রদান করতে বলে। কিন্তু হুসেনের এই আঘাত সুদান সরকারকে ফিরিয়ে দেয়, জরিমানার টাকা প্রদান না করে সে তার বদলে শাস্তি হিসেবে এক মাস জেলে কাটাতে রাজি হয়, এর মধ্যে দিয়ে সে হাজার হাজার অন্যসব মহিলার সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে, মুসলিম বা অমুসলিম সব ধরনের মহিলার সাথে, যারা তথাকথিত ইসলামিক সুদানের শাসনকর্তাতাদের শূন্যগর্ভ এক ধার্মিক ভাবনা প্রকাশের শিকার।

ধাক্কা খাবার মতো বিষয় হল, সুদানে এই ধরনের ঘটনা গুলো অস্বাভাবিক নয়। সেখানকার এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গত বছর প্রায় ৪৩,০০০ জন মহিলা অশালীন পোশাক পরার দায়ে জেলে গিয়েছিল। সুদানের শাসনকর্তারা হুসেনকে গ্রেফতার করার মাধ্যমে এক ভুল মানুষকে বেছে নিয়েছে, সে তার বন্ধু ও আত্মীয়দের অনুরোধ করেছিল, যেন তারা জরিমানার টাকা প্রদান না করে। তা সত্বেও সংবাদিক ইউনিয়নের প্রধান- যিনি শাসকদলের এক সদস্য- এই জরিমানার টাকা দিয়ে দেয় এবং হুসেনকে জেল থেকে প্রায় বের করে দেওয়া হয়। টেলিভিশনের সংবাদে দেখা যায়, যখন তাকে চলে যেতে বলা হয়, সে সময় তাকে অসুখী দেখাচ্ছিল।

মোনা তার পোস্ট শেষ করেছেন এই বলে:

এখন জাতিসংঘের সময় এসেছে তার সদস্য তালিকা থেকে সুদানকে বহিষ্কার করার এবং সেই সব দেশকেও, যারা নির্লজ্জভাবে মেয়েদের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে “শালীনতার” নামে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .