পাকিস্তান: প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বিচার-রাজনৈতিক প্রতারণা নাকি প্রতিশোধ

পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি পারভেজ মুশাররাফ ২০০৮ সালের ১৮ই আগস্ট তার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। তার এই পদত্যাগ তখন অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল কারণ তা এমন এক সময় ঘটে যখন সংসদ থেকে তাকে অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

তার পদত্যাগের এক বছর পর, এখন পাকিস্তানের অন্যতম নেতৃস্থানীয় রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (নাওয়াজ শরীফ)(পিএমএল-এন) চাইছে মুশাররাফকে রাজনৈতিক প্রতারণার দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। ক্রমাগত ভাবে পিএমএল-এন এই দাবি করে আসছে, আর সরকার এই দাবি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে, রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হবার ভয়ে।

সরকারের এই বিচার এড়ানোর ক্ষেত্রে এ ধরনের কৌশলী ভূমিকা, মনে হচ্ছে আরো রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির আহ্বান করছে। তার চেয়ে বড় কথা সম্প্রতি বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তে প্রতিফলিত হচ্ছে তারা এই বিচারকে এগিয়ে নিতে অনিচ্ছুক।

ফাইভ রুপীজ ব্লগের আহসান বিভিন্ন কারণ নিয়ে আলোচনা করছেন, কেন বিচার বিভাগ প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা থেকে পিছিয়ে আসছে।

ডেডপ্যান থটস-এর ফয়সাল কাপাডিয়া কিছু প্রশ্ন করেছেন, তার মতে এই বিচারের কি আদৌ প্রয়োজন রয়েছে।

তবে রাজনৈতিক দল এবং বিচার বিভাগ এই বিষয়টিকে প্রতিশোধের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে অভিহিত করেছে। এই বিষয়টি সারা পাকিস্তানের মানুষের কাছে অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত হচ্ছে। পিকেপলেটিক্সব্লগ গ্যালপ পরিচালিত এক সম্প্রতি জরিপের কথা লিখেছে, যেখানে পাকিস্তানের ৭১ শতাংশ লোক এই বিচারের পক্ষে। ২৯২৬ জন নারী ও পুরুষের উপর এই জরিপ পরিচালনা করা হয়।

দি ফ্রন্টিয়ার পোষ্ট রিপোর্ট করেছে, এই জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে যে নারী, পুরুষ ও বয়স নির্বিশেষে সবাই জেনারেল পারভেজ মুশাররাফের শাস্তি চায়। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ব্যাপারে উল্লেখ যোগ্য মত পার্থক্য রয়েছে।

এক কৌতূহলজনক তুলনার মধ্যে ওয়াইজ এহসান নামক ব্লগার প্রো-পাকিস্তানে ফেসবুকে পরিচালিত এক জনপ্রিয় জরিপের কথা বলেছেন:

এটা বেশ কৌতূহলজনক এক তথ্য যে মাত্র তিন দিনে ১১.০০০ জন লোক ভোট দিয়েছে (যদি জরিপের জন্য সরবরাহ কৃত সংখ্যা সঠিক হয়ে থাকে)। যত দুর দেখা যাচ্ছে জরিপের ফলাফল বিচারের পক্ষে। বিচারের পক্ষে ভোট পড়েছে ৫৩ শতাংশ এবং এই বিচার সমর্থন করে না এমন ভোটারের সংখ্যা ৪৫ শতাংশ। এটা এক বড় ধরনের বিস্ময় বয়ে এনেছে, এতে আমার অনুভূতি, পুরো পাকিস্তান তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দেখতে চায়।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রের চাওয়া মাথায় রাখলে পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক এই বিচারের প্রতি আগ্রহী হলেও, মুশাররাফকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো বেশ কঠিন মনে হচ্ছে। আমার নিজের ব্লগে, এই ব্যাপারে যে কৌশলী রাজনীতি যুক্ত, তা নিয়ে আলাপ করেছি এবং কি ভাবে এই মামলা ন্যায়বিচারের পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় পরিণত হবে তা নিয়ে কথা বলেছি।

সন্ত্রাসবাদ, অর্থনৈতিক মন্দা, দারিদ্র এবং বাড়তে থাকা বিদ্রোহীদের হুমকির সাথে পাকিস্তান লড়ছে। দেশবিভাগের পর সবচেয়ে বড় আকারের মানুষের আগমনের ঘটনায় সে নিজেকে পুনরুদ্ধার করেছে এবং তালিবানদের বিরুদ্ধে পূর্ণ মাত্রায় বিভিন্ন ধরনের অভিযান পরিচালনা করেছে। এই রকম অবস্থায় একজন দেশটির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বিচার চাওয়ার কাজে শক্তি ব্যয় করছে। বিষয়টি দেশটির গুরুত্বের তালিকায় এক বিশেষত্ব বহন করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .