পূর্ব তিমুর: রাইসগেট কেলেংকারি

গত বছর খাবার এবং চালের ঘাটতি দেশটিতে যে সংকটে ফেলেছিল তার প্রতিকারের জন্যে পূর্ব তিমুরের প্রধানমন্ত্রী শানানা গুজমাও ১৭ টি কোম্পানিকে চাল আমদানির অধিকার প্রদান করেন। এই আমদানি চুক্তি এখন বিরোধী দলের প্রশ্নের সম্মুখীন, যখন রেডিও অস্ট্রেলিয়া নিউজ প্রকাশ করে দেয় যে এই সমস্ত কোম্পানীর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানের আংশিক মালিক প্রধানমন্ত্রীর কন্যা।

টেম্পো সেমানাল চাল আমদানি বিষয়ক চুক্তি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি দলিল ব্লগে তুলে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলছেন তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের মুখোমুখি হবার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তিনি একই সাথে বলেছেন, যখন উক্ত কোম্পানীকে সরকার চাল আমদানি করার অনুমতি দেয়, তখন তার কন্যা আর সেই কোম্পানীর মূল শেয়ার হোল্ডার বা মালিক ছিলেন না। বিরোধী ফ্রেটেলিন পার্টি বিশ্বাস করে এটি দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির মামলা

সরকারের অন্যান্য কিছু চুক্তিও রয়েছে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অস্ত্র চুক্তি, এ সব চুক্তি নিয়ে বিরোধী দল এখন প্রচার মাধ্যমে প্রশ্ন তুলেছে। তথ্যে জানা যাচ্ছে যে সরকারের এই চুক্তির সুবিধাভোগীদের অনেকে উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মচারীদের আত্মীয়:

কেবল জেলিনডা গুজমাও (প্রধানমন্ত্রীর কন্যা) পূর্ব তিমুরের একমাত্র ব্যবসায়ী নয়, যে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। পূর্ব তিমুরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রী জোয়াও গনজালভেসের স্ত্রী ক্যাথলিন গনজালভেস তিনটি কোম্পানীর সাথে যুক্ত যারা কোটি কোটি ডলারের সরকারী কাজের চুক্তি লাভ করেছে। এই সমস্ত কাজে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন রয়েছে।

দি ডিলি ইনসাইডার স্মরণ করিয়ে দেন সরকারের সৌভাগ্যবান আত্মীয় ও বন্ধুদের কথা, যাদের ঠিকভাবে ট্যাক্স দেওয়া উচিত:

পূর্ব তিমুরের ব্লগারদের ভাবনা খানিকটা এলোমেলো হয়ে গেছে এই বিষয়ে যে, কে চাল আমদানির অনুমতি লাভ করেছে। এটাকে রাইসগেট উপাধি দেওয়া হয়েছে-। তিমুর সরকার নিজেই এই নামটি দিয়েছে।

এটি অনেক টাকার ব্যাপার। প্রায় ৫৭ মিলিয়ন আমেরিকার ডলার। এতে মনে হচ্ছে কিছু লোক অনেক টাকা কামাবে। প্রায়শ:ই কিছু পরিচিত লোক এবং কোন সত্যিকারের চাল বিক্রেতা নয়।

ঠিক আছে আমদানি করার ক্ষমতা আত্মীয় ও বন্ধুদের মাধ্যমে নাও। কিন্তু দয়া করে আয়কর দিতে ভুলো না।

এটা এক অদ্ভুত বিষয় যে সরকারের মুখপাত্ররা এই বর্তমান ঘটনাটিকে ‘রাইসগেট’ বলে অভিহিত করছে। দি লস্ট বয় জনসম্মুখে সরকার ও বিরোধী দলের বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন:

এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় এই প্রথম বিশ্বে কোথায় সরকারী বিবৃতিতে “পোর্কিজ” বা “শুকর জাতীয়” কথাটি ব্যবহার করা হল।

এই সমস্যার খুঁটি নাটি দিক এমনই যে, এই সমস্যাকে দ্রুত অনুধাবন করা যায় না। ফ্রেটিলিন (বিরোধী দল) যতটুকু পারে এ সম্বন্ধে অনুসন্ধান চালিয়েছে এবং সরকার রক্ষণাত্বক মনোভাব গ্রহণ করেছে এবং জোরে আওয়াজ তুলেছে যে এর আগে ফ্রেটিলিন কতটা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। এগুলো বর্তমান ঘটনার অনেক বাইরের বিষয় নিয়ে আলোচনা। যে কোন সঠিক যুক্তি প্রথম কয়েক ছত্রের অবমূল্যায়ন ঘটাচ্ছে। আমি বিস্মিত কে বিবৃতি সমূহ লিখেছে।

তিমুরের জনগণ কি এই সরকারের দুর্নীতি মেনে নেবে? কারণ এর আগেরটাও একই রকম ছিল? রাস্তার মানুষদের জন্য কে পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করেছে? প্রচার মাধ্যমে এই যুদ্ধ দেখতে বিস্ময়কর লাগে, কিন্তু তা কোন কিছুর সমাধান করে না।

পূর্ব তিমুরের রাষ্ট্রপতি হোসে রামো হোর্তা তার এই যুদ্ধরত প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করেছেন:

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী হবার মানে এই নয় যে তাদের পরিবারের সকলেই বেকার থাকবে। তারা তাদের সকল ব্যবসা বিক্রি করে দেবে এবং কাজ বন্ধ করে বসে থাকবে।

নোরাহ মালানে ব্যাখা করছেন দুর্নীতি দমন কমিশন যে অনুসন্ধান চালাচ্ছে তার গুরুত্ব:

পূর্ব তিমুরের দুর্নীতি বিরোধী রাজনীতিতে এই তদন্ত এক বিশেষ দিকে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্ত কার্য, সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি এবং সম্ভাব্য যে কোন শাস্তির ফলাফল, সকল কিছুই দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রম বৈধ আইন অনুসারে হতে হবে, এটি যে পূর্ব তিমুরের দুর্নীত বিরোধী কমিশনের আইনগত অবস্থান ও দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমের আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তা প্রমাণিত হতে হবে, (ক্ষণস্থায়ী ভাবে) স্বদেশের নাগরিক ও বিশ্বের কাছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .